শ্রাবণসন্ধ্যা

গোধূলি পেরোতে আর বেশি বাকি নেই। অন্তরীক্ষে বিচরণশীল মেঘেরা সারাদিন ব্যাপী কমবেশি বর্ষণ ঘটিয়ে এবার উড়ে চলে যাবে পাহাড় ডিঙিয়ে ওদিকে। সারাদিনের বৃষ্টিতে আকাশে ক্লান্তি এসেছে। প্রকৃতিতে বৃষ্টিহীন মেঘজমাট নিস্তব্ধতা, সন্ধ্যালোক ঘনায়মানতায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাড়ির উঠোনের নিমগাছটার তলায় পিঁড়ি পেতে জীবনানন্দ বাবু তাঁর অসমাপ্ত চাটাই বুননির কাজখানার সমাপ্তির অভিপ্রায়ে বসেছিলেন।
গত কয়েকদিনের কর্মব্যস্ততায় আর চাটাইটাতে হাত দেওয়া হয়ে ওঠেনি। আজ তো সকাল থেকেই মেঘবৃষ্টি তবু পুকুরের ধারের বনবাদাড় কেটে সাফ করেছেন তিনি। পুকুরের ঢালু পথ কেটে সিঁড়ি করে দিয়েছেন তারপর স্নান সেরে খেয়েদেয়ে একটুখানি ঘুমোতেই বেলা পড়ে এল। বিকেলবেলা বৃষ্টি থেমেছে, তাই জীবনানন্দ বাবু চাটাই হাতে বসেছেন কাজে। কাজের মানুষ কাজ করতে পারলেই যেন বাঁচে।
জীবনানন্দ বাবু বৃদ্ধ তবে শরীরে বাধর্য্যের ছাপে শ্বেতবর্ণ আভিজাত্য তাকে অধিকতর সুন্দর করেছে। সুস্থ, সুন্দর, সুঠাম দেহ। যৌবনের প্রারম্ভে যে সুপুরুষ ছিলেন তা তাঁর দেহের চাকচিক্য আজও জানান দেয়। হঠাৎই বাহির আঙিনা থেকে এক অচেনা কণ্ঠস্বর আসে 'একটি জল পাওয়া যাবে খার।'