User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি তদারক করতে এসে খোঁজ পেয়ে যান লালনের গানের। আর কথায় আছে, জহুরি জহর চেনে। শিলাইদহে এলেই রবিঠাকুর ডেকে পাঠাতেন লালন-শিষ্যদের। লালন ফকিরের গানের ভেতরের শক্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুভব করতে পেরেছিলেন। বোধকরি সে টানেই তিনি লালনের গান সংগ্রহ, সংরক্ষরণ ও প্রচারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি লালনের আখড়া থেকে সংগ্রহ করেন দু-দুটি গানের খাতা। লালন অক্ষরজ্ঞানশূন্য উদাস ফকির। ভাবের বশে তিনি গান গেয়ে যেতেন আর তা টুকে রাখতেন তাঁরই শিষ্য মনিরুদ্দীন শাহ ও মানিক শাহ। মূল খাতা থেকে নকল করে নতুন খাতাও তৈরি হতো সাধক-শিল্পীদের প্রয়োজনে। মনিরুদ্দীনের হাতের লেখা খাতাই এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। মানিক শাহ লিপিকার হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকলেও সেসব খাতার হদিস মেলেনি। কবিগুরু সংগৃহীত মনিরুদ্দীন শাহর লিপিকৃত খাতা দুটো কোনো কোনো সময় দুষ্পাঠ্য ঠেকবে পাঠকের কাছে। একে তো ভুল বানানে ভরপুর, তার ওপর কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক টানের প্রভাবে কিছু কিছু শব্দ মূল জায়গা থেকে সরে গিয়েছিল অনেক দূর। সংগৃহীত পাণ্ডুলিপির কিছু কিছু জায়গায় রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে কলম দিয়ে এ ভুলগুলো সংশোধন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর এস্টেটের কর্মচারী বামাচরণ বাবুকে দিয়ে একটি পরিশীলিত শুদ্ধ রূপ নকল প্রস্তুত করান। কবিগুরু সংগৃহীত মনিরুদ্দীন লিপিকৃত খাতা দুটো সংরক্ষণে থাকলেও বামাচরণ বাবুর মার্জিত রূপ নকলটির আর কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। রবিঠাকুরের এ খাতা সংগ্রহ করার ব্যাপার নিয়ে ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়ায় আছে নানা কৌতুককর কাহিনী। ১৯৩৫-৩৬ সালের কথা। অন্নদাশঙ্কর রায় তখন কুষ্টিয়ার মহকুমা হাকিম। সে সময় তাঁর দ্বিতীয় মুনসেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন মতিলাল দাশ। লালন সম্পর্কে মতিলালের আগ্রহ ও অনুরাগ ছিল অপার। আখড়ার তত্ত্বাবধায়ক তখন লালন-শিষ্য ভোলাই শাহ। মতিলাল দাশ লালনের গানের খাতা দেখতে চাইলে তাঁর যে অভিজ্ঞতা অর্জন হয়, সে সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “ভোলাই সার নিকট হইতে গানের পুঁথি আদায় করিতে যথেষ্ট বেগ পাইতে হইয়াছিল।’ ভোলাই সা বলিল, ‘দেখুন, রবিঠাকুর আমার গুরুর গান খুব ভালবাসিতেন। আমাদের খাতা তিনি লইয়া গিয়াছেন। সে খাতা আর পাই নাই। কলিকাতা ও বোলপুরে চিঠিরও কোনও উত্তর পাই নাই।’…ভোলাই কবিগুরুকে লালনের চ্যালা বলিয়া মনে করে এবং বলে যে, কবিগুরু লালনের গানকে রূপান্তরিত করিয়াই জগত্ জোড়া নাম কিনিয়েছেন।” এত আকুতি, এত ব্যাকুলতা যে গানের খাতাকে ঘিরে, সে গানের খাতাকে চাক্ষুষ করার মধ্যে এক ধরনের সুখানুভূতি মিশ্রিত চিত্তচাঞ্চল্য তো ঘটারই কথা। আর এ ধরনের একটি পাণ্ডুলিপি যদি হাতের নাগালে এসেই যায়, রসিকজনের আঙুল চলে যাবে প্রায় ১২৫ বছর আগে লিপিকৃত শব্দনিচয়ের ভিড়ে। আমি নিশ্চিত, যেকোনো সংবেদনশীল পাঠক সেই মুহূর্তে নিজেকে খুঁজতে থাকবে ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়ায়, যেখানে ভাবাবেগে আপ্লুত উদাস লালন চক্ষু মুদে গান গাইছেন আর খাতা খুলে কলম ধরে বসে আছেন মনিরুদ্দীন শাহ, মানিক শাহ প্রমুখ। হোক না ভুল বানানে ভরপুর, তবুও তো তা চনমনে স্মৃতি রাঙানো দুরন্ত উত্তরাধিকার। সে পাণ্ডুলিপি লালন স্পর্শ করে দেখেছেন কি না আমার জানা নেই, তবে কবিগুরু যে উল্টেপাল্টে পড়েছেন, সে তো ইতিহাস সাক্ষী। কবিগুরুর সংগৃহীত লালনের গানের পাণ্ডুলিপির দুটো খাতায় ২৯০টি গান উত্কলিত আছে। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত লালনের এই গানের খাতার চিত্র-প্রতিলিপি সংগ্রহ করে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী। লালন ফাউন্ডেশনের সমর্থনে পাঠক সমাবেশের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বাউল পদকর্তাদের গানের এ শ্রেণীর পাণ্ডুলিপি প্রকাশ এই প্রথম। ফলে এ প্রচেষ্টা লালন অনুরাগীদের মনে যথেষ্ট আনন্দ সঞ্চার করবে বলে আমার স্থির বিশ্বাস। এ বইটি একদিকে গবেষকদের জন্য যেমন জরুরি, আরেক দিকে সাহিত্যানুরাগীদের সংগ্রহে থাকাও অপরিহার্য।