Our User Product Reviews

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার তাঁর জীবনে বহু রকম কাজ করেছেন। কখনও কলেজের অধ্যাপনা, কখনও আবার টেলিভিশনে উপস্থাপনা। আবার কখনও তাঁর প্রাণের সংগঠন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে দাঁড় করানোর জন্যে অবিরত কাজ করে গেছেন। তাঁর জীবনের এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তিনি সফল। তিনি যেমন শিক্ষক হিসেবে সফল, তেমনি সফল উপস্থাপক বা সংগঠক হিসেবেও। আর আমরা যদি তাঁর এ সব ক্ষেত্রে সফলতার পিছনে শুধুমাত্র একটি গুণের কথা চিন্তা করি, তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে হয় তা হল স্যারের কথা বলার ক্ষমতা। জড়তাহীন ভাবে অবিরত কথা বলে যাওয়ার ক্ষমতা, অসাধারণ চিন্তাশীল সব কথা বলে যাওয়ার ক্ষমতা, কোন প্রস্তুতি ছাড়াই যে কোন জায়গায় মন্ত্রমুগ্ধ হবার মত কথা বলে যাওয়ার ক্ষমতা। আর স্যারের মুখের সেই জাদুকরী কথাগুলো নিয়েই ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ বইটি। ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ বইটিতে স্যারের চারটি সাক্ষাৎকার সংকলিত হয়েছে। প্রত্যেকটি সাক্ষাৎকারই নিয়েছেন সাংবাদিক অরুণ চৌধুরী। এই সাক্ষাৎকারগুলো পড়ার সময় পাঠকেরা কখনও স্যারের রসিকতায় মনের অজান্তেই হেসে উঠবেন, আবার কখনও স্যারের অতলস্পর্শী দর্শন তত্ত্ব শুনে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসবেন। আর স্যারের মুখের ভাষার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এ বড় জীবন্ত আর গতিময়, অসাধারণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এই সাক্ষাৎকারগুলোতে স্যার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এখানে স্যারের কলেজ জীবন, শিক্ষক জীবনের কথা যেমনি উঠে এসেছে তেমনি রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গও বাদ পড়ে নি। আবার কখনও হয়তো স্যার জীবন, দারিদ্র্য, ভাগ্য, প্রেম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত মতামতগুলো দিয়েছেন। এখানে আমরা স্যারের মুখ থেকে সফলতা আর সার্থকতার পার্থক্য সম্পর্কেও শুনি। স্যার বলেন, সফলতা হল একটা স্বার্থপর আবেগ যা শুধু নিজের ভালো নিয়েই ভাবে। এবং মৃত্যুর সাথে সাথে সফল মানুষও হারিয়ে যায়। কিন্তু সার্থক মানুষ মানুষের মাঝেই আজীবন বেঁচে থাকে। এমন অজস্র অসাধারণ জীবনদর্শন আমরা এই বই থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় সংগ্রহ করতে পারবো। স্যারের শক্তিশালী জীবনদর্শন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ বইয়ে সংকলিত সাক্ষাৎকারগুলো থেকে পাওয়া যাবে। এটা এমন এক বই যা আমাদের জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকখানি বদলে দিবে। আমাদের ইতিবাচক হতে শেখাবে। সবাইকে এই অসাধারণ বইটি পড়ার আমন্ত্রণ থাকলো।

বর্ণাঢ্য শিক্ষক, ষাটের দশকের সাহিত্য আন্দোলনের পুরোধা, জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক, "আলোকিত মানুষ চাই" শ্লোগানের ধারক বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্টাতা- এমনি বৈচিত্রময় আর বহুমুখী পরিচয়ে যিনি নন্দিত, তিনি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। যার কথা শুনলে রুপকথার মত মনে হয়, যিনি স্বপ্ন দেখাতে ভালবাসেন, স্বপ্ন দেখিয়ে যান অবিরত, যার বক্তৃতা গানের মত কানে বাঁজে, তাঁরই একান্ত কিছু সাক্ষাতকার নিয়ে লেখা হয়েছে এই বই "অন্তরঙ্গ আলাপ"। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সাংবাদিক অরুণ চৌধুরী। তার নানা বিষয়ের উপর করা প্রশ্নের স্বভাব-সুলভ কাব্যিক উত্তর দিয়ে গেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। চারবার নেয়া সাক্ষাতকার আলাদা আলাদা চারটি পর্বে ভাগ করে বইটি সাজানো হয়েছে। ১ম পর্বের প্রশ্নে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্মৃতিচারণ করেছেন তার কলেজ জীবন, শিক্ষক জীবন। আলাপে উঠে এসেছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা, ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সফলতা এবং স্বার্থকতা, রবীন্দ্রনাথ, ম্যাগসেসাই পুরস্কার প্রভৃতি। উঠে এসেছে মানুষের মনস্ত্বাত্তিক দ্বন্দ্ব, প্রকৃত লেখকের গুণ, ধর্মের বিশাল উদাহরণ কিংবা জীবনের গভীরতম বোধের মত আলোচনার রসদ। তিনি বলে চলেছেন, "মানুষের প্রয়োজন মেটানো যায়, অভাব মেটানো যায়্ না","টাকাতো একটা জ্বলন্ত মরীচিকা", "আমরা ঈশ্বর আর শয়তানের যোগফল" এর মত চিরধ্রুব কিছু কথা। ২য় পর্বে তিনি বলেছেন চলচ্চিত্রের ভাষা, একটি সফল সংগঠনের ইতিবৃত্ত, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদ সম্পর্কে নিজস্ব ব্যাখ্যা, বার্ধক্য, তাজমহল, নাটক প্রভৃতি নিয়ে। বলেছেন "কারণহীনতার মধ্যে থেকে যায় কারণ, to be এর মধ্যে not to be", "আমি মনে করি ক্রিয়েটিভ মানুষ সেই মানুষ-যিনি তার কথাটি পৃথিবীতে প্রথম বারের মত বলেন", এইসব অসংখ্য মধুর কথা। ৩য় পর্বে আলাপে আলাপে উঠে এসেছে উপস্থাপক জীবন, জনপ্রিয়তা, ভাগ্য, দারিদ্র, প্রেম কিংবা জীবনদর্শন। বলেছেন, "ক্রিয়েটিভিটি হচ্ছে জীবনব্যাপী বঞ্চনার প্রতিশোধ","আমার যেটুকু করা সেটুকু না করে বিদায় নেয়া তো মানবজন্মকে অপমান করা"। ৪র্থ পর্বে তিনি আলাপচারিতায় তুলে এনেছেন বিবাহপ্রথা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, পরিবার, সভ্যতা,প্রেম এবং নারীর মত আলোচিত এবং গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার। "সভ্যতা মানেই মিথ্যাবাদীদের বৃহদায়তন সংঘ","সমাজ শুরু হয় সবার সুখের স্বপ্ন নিয়ে, শেষ হয় কিছু মানুশের কর্তিত্বে" বলেন স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে। চারপাশের সমাজ, সংসার, সভ্যতা, প্রেম, আর জীবনদর্শন নিয়ে "অন্তরঙ্গ আলাপে" চমৎকার গল্পের মত বলে গেছেন কিছু কথা- যা আমাদের ভাবাতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, আর নিজেকে গড়তে শেখায়।