User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আজকের দিনে একজন মানুষ শুধু তার নিজের দেশের নাগরিক নয়। একই সঙ্গে সে বিশ্বেরও নাগরিক। বিশ্বের সঙ্গে জানা-শোনার মাধ্যমে গড়ে ওঠে তার আন্তর্জাতিকতা। সাহিত্যে এ ব্যাপারটি আরও বেশি প্রকট। একজন বড় মাপের পাঠক বা সাহিত্যিকের আগ্রহের জায়গাটি শুধু তার ভাষা ও ভূগোলের সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তিনি আস্বাদন করতে চান নানা ভাষা ও ভূগোলের নানা সাহিত্য এবং শিল্পের স্বাদ। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বিশ্বসাহিত্যের একজন অনুসন্ধানী পাঠক। আশির দশকের শুরুতে তিনি কানাডা থেকে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফেরেন। প্রবাসের পাঁচ বছরে তাঁর আগ্রহের মূল জায়গাটি ছিল বিশ্বসাহিত্য। দেশে ফেরার সময়ে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন নানা দেশের সাহিত্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। পরবর্তী সময় তাঁর পাঠকৃত এসব সাহিত্য নিয়ে দৈনিক সংবাদ-র সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত পাক্ষিক কলাম লেখেন প্রায় ২০ বছর। মধ্য আশির দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে শুরু হওয়া ‘অলস দিনের হাওয়া’ শিরোনামে তাঁর কলামটি শেষ হয় শূন্য দশকের মাঝামাঝি সময়ে। কলামটি অগ্রসর এবং বিদগ্ধ পাঠকের নজর কেড়েছিল প্রথম থেকেই। পাকা জহুরির মতো বিশ্বসাহিত্যের নানাবিধ খুঁটিনাটি তিনি তুলে এনেছেন এসব কলামে। সেখান থেকে ৫০টি লেখা নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রকাশ করেন তাঁর অলস দিনের হাওয়া বইটি। এডওয়ার্ড সাঈদ, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, ডব্লিউ বি ইয়েটস, ক্রিস্টোফার মার্লো, মারিয়ো বার্গাস য়োসা, গুন্টার গ্রাস, উমবার্তো একো, শেক্সপিয়ার, সালমান রুশদি, সিলভিয়া প্লাথ, ভি এস নাইপল, মিলান কুন্ডেরা, অক্তাবিও পাস, রবার্ট ব্লাই প্রমুখ বিশ্বসাহিত্যের নামীদামি লেখক এবং তাঁদের বিভিন্ন কাজ নিয়ে লিখেছেন তিনি। তাঁর বিশ্লেষণ ও ভাষাভঙ্গি চমৎকার। ফলে মূল টেক্সটগুলো পড়া না থাকলেও তাঁর প্রবন্ধ আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। স্বামী টেড হিউজের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি অথবা আজীবন আত্মধ্বংসের প্রতি একধরনের তীব্র আকাঙ্ক্ষার শেষ পরিণতি হিসেবে সিলভিয়া প্লাথ রান্নাঘরের গ্যাসের চুলো ছেড়ে আত্মহত্যা করেন। টেড হিউজের পরবর্তী স্ত্রীও এই একই পদ্ধতিতে মারা যান। প্লাথের মৃত্যু নিয়ে তেমন কিছুই লেখেননি টেড হিউজ। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে টেড হিউজের একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় বার্থডে লেটার্স নামে। কৌতূহলী পাঠকেরা ভেবেছিলেন এ গ্রন্থে তিনি হয়তো তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুরহস্য নিয়ে মুখ খুলবেন। কিন্তু সিলভিয়া প্লাথকে নিয়ে লেখা এ বইটিতে কেবল তাঁদের আবেগ-অনুভূতি আর প্রেমের কথাই স্থান পেয়েছে। টেড হিউজ সম্পর্কে সিলভিয়ার মনোভাব শেষের দিকে কেমন ছিল তার বর্ণনা রয়েছে সিলভিয়ার ‘ড্যাডি’ কবিতায়, যেখানে হিউজকে তিনি ‘ভ্যাম্পায়ার’ বলছেন। অলস দিনের হাওয়া বইটির প্রথম প্রবন্ধে লেখক টেড ইউজের কবিতার পাশাপাশি প্লাথের মনোজগৎ ও কবিতাকে বিশ্লেষণ করেছেন। গুন্টার গ্রাসের সাহিত্য, বিশেষ করে দি টিন ড্রাম, এ উপন্যাস নিয়ে নির্মিত সিনেমা ও গ্রাসের নোবেল পুরস্কারবিষয়ক জটিলতা সম্পর্কে লেখক আলোচনা করেছেন ‘গুন্টার গ্রাস: শিল্প ও জীবনের পূর্ণতা-অপূর্ণতা’ প্রবন্ধে। সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রাসের নোবেল না পাওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। অনুবাদে টিন ড্রাম পড়ার সময় যে বিষয়গুলো তাঁর কাছে ঠিক যৌক্তিক মনে হচ্ছিল না, তার সবটাই যেন সিনেমার কাঠামোতে এসে বাস্তব এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। গুন্টার গ্রাস সমস্ত ঘটনাকে দেখেন ক্লাউনের দৃষ্টি দিয়ে, যদিও গ্রাসের ক্লাউন লোক হাসানোর প্রচলিত কাজটি করে না, তার ভূমিকা অন্যত্র। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, স্পেনে ষাঁড়ের লড়াইয়ের ক্লাউনের কথা, যোদ্ধা আক্রান্ত হলে যে ষাঁড়ের দৃষ্টি তার ওপর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। উমবার্তো একোর উপন্যাস নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘উমবার্তো একোর দ্বিতীয় কিস্তি’ নামক প্রবন্ধটি স্থান পেয়েছে এ বইয়ে। ইতালির এ ঔপন্যাসিককে নিয়ে লেখক গুরুত্বপূর্ণ এবং মনোগ্রাহী একটি লেখা উপহার দিয়েছেন আমাদের; সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সাবলীল উপস্থাপনা, পরিমিতিবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাষার সহজবোধ্যতার কারণে বইটি অগ্রসর পাঠকের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহের তালিকাতেই থাকবে আশা করি।