User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
..ভয়ে নিঃশ্বাস নেয়া-ফেলা বন্ধ করে দিলাম। দোয়া-কলেমা ভুলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ “আম্মা” বলতে আম্মার শেখানো দোয়া মনে পড়ে গেল “সালামুন আলা ইল ইয়াছিন”। নীচের ডালটিতে কেমন একটা শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শব্দ হতেই তাকিয়ে থাকলাম। আকাশে থেমে থেমে বিজলির আলোতে হালকা হালকা দেখতে পাচ্ছি একটা বিশাল আকৃতির অজগর, এদেশে যার নাম মেঘ-ডুমুর। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত একই রকম মোটা... সত্তরের নভেম্বরে ভয়াল ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে সরকারী হিসেবেই প্রায় ৫ লক্ষ লোক প্রাণ হারায়। বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। প্রকৃতির এ ভয়ঙ্কর তান্ডবের ৪ মাস পর শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার সংগ্রাম। মূলতঃ এ চিন্তা থেকে সত্তরের সেই হারিকেনের উপর বই-পত্র খুঁজছিলাম অনেক দিন ধরে। অবশেষে হাতে পেলাম বইটি। মনোয়ার রহমান হারুন এর লিখা “হারিকেন ১২ নভেম্বর ১৯৭০ এবং আমি”- বই না বলে এটাকে ডকুমেন্টরি বলাই উচিত। কারণ বইটিতে কোনও কাল্পনিক চরিত্র বা ঘটনা নেই। লেখক প্রলয়ঙ্করী সেই হারিকেনের প্রত্যক্ষদর্শীই শুধু নন, তার চেয়ে বেশি কিছু। বলা যায়, হারিকেন সরাসরি আঘাত হানার পরও অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া হাতে গোণা কয়েকজনের মধ্যে একজন। বইটিতে অত্যন্ত দূর্লভ কিছু ছবিও রয়েছে। যে ছবিগুলো দেখে যে কোন সুস্থ মানুষই শিউরে উঠবে। বইটি শুরু হয়েছে ২৮ জানুয়ারী ১৯৬৯ থেকে- পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা যখন সোচ্চার, চারদিকে আন্দোলন, রাজবন্দীদের মুক্তি চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই- মিছিল মিটিং স্লোগানে যখন রাজপথ প্রকম্পিত তখনকার প্রেক্ষাপট নিয়ে বইটির শুরু দেখে বুঝার উপায় নেই কয়েক পৃষ্ঠা পর পাঠকের জন্য কী অপেক্ষা করছে। বইটি শেষ হয়েছে ১৬ নভেম্বর ১৯৭০। অর্থাৎ ১২ নভেম্বর আঘাত হানা হারিকেনের তান্ডব থেকে বেঁচে জীবনযুদ্ধ করতে করতে ৪ দিন পর লেখকের বরিশালে ফিরে যাওয়ার দিনে শেষ হয়েছে বইটি। পৃথিবীর অন্যতম কোন প্রাকৃতিক দুযোর্গ নিয়ে ডায়রীর আদলে লিখা এমন বই এর আগে পড়িনি। ঝড় আঘাত হানার সময় লেখক ছিলেন তৎকালীন ভোলা মহকুমা এবং বর্তমানের মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া দ্বীপে। যার পূব, পশ্চিম ও উত্তরে বিশালাকার নদী আর নদীর মোহনা। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ পূর্বে নিঝুম দ্বীপ... সাকুচিয়ার লোকেশন দেখে অনুমান করা যাচ্ছে কি প্রলয়ঙ্করী সেই ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছাস কতটা শক্তি নিয়ে আঘাত করেছিলো সেখানে? না, আমাদের পক্ষে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। আমাদের অনুমানেরও অসীম ছিল সেই আঘাত। কয়েকলাইনের উদ্ধৃতি দিচ্ছি- বাতাসের প্রচন্ডতায় গাছটির বড় বড় ডালপাল ভেঙে ভেঙে নীচে পড়ছে। ছ্টিকে নীচে পড়ার ভয়ে মোটা ডালটি আঁকড়ে ধরেছি। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। গাছটি বার বার দুলছে। একসময় গাছটি আস্তে আস্তে হেলে হেলে পড়ছে নীচের দিকে। ভয়ে জড়োসড় হয়ে দু’পা এক ডালের উপর রেখে হাতে উপরের ডালটি ধরে আল্লাহ আল্লাহ করছি। গাছটি আস্তে আস্তে হেলে পড়ছে। গাছটির গোড়াটি প্রকান্ড মাটির চাঁই নিয়ে উল্টিয়ে মাথাটি ঝুপ করে নীচে পড়ে যেতেই চারদিকে পানি ছিটিয়ে উঠলো.. মাথা দু’পায়ের মাঝে রেখে হাঁটু চেপে বসে আছি। বেশ কিছু সরীসৃপ চার পায়ে আমার শরীরের উপর পা ফেলে ধপধপিয়ে গাছের ডালে উঠে গেল। গাছটি পড়ে যাওয়ার ওগুলো হয়তো ছিটকে নীচে পড়ে গিয়েছিল। বেশ ক’টি মোটা সাপ আমার পা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কোমরের উপর থেকে বেয়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে।... মাত্র ১৫৫ পৃষ্ঠার বই। ছবির স্পেস বাদ দিলে পড়তে হবে গড়ে একশো পৃষ্ঠা। একটানের বেশি দু’টান লাগবে না পড়ে শেষ করতে।