User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
হায়েনার খাঁচায় অদম্য জীবন বইটি আমি সবটুকু পড়েছি । বইটি পড়তে পড়তে চোখের জল এসেছিল। যুদ্ধের সময় মানুষ হয়ে মানুষ কে এত ধরনের কষ্ট দিতে পারে আমার জানা ছিল না। ভাই আপনারা বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন কত কষ্টকরে এ দেশ কে স্বাধীন করেছে।
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেকটাই হয়ে পড়েছিল ভূলুণ্ঠিত। রাষ্ট্রের প্ররোচনায়ই নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছিল, বাঙালির আত্মত্যাগের মর্যাদাকে করা হচ্ছিল অবমাননা; উন্নয়নের নামে ইতিহাসের অমোঘ সত্যকেও করা হচ্ছিল অস্বীকার। এ রকম একটা সময়েই প্রকাশিত হয়েছিল মন্টু খানের হায়েনার খাঁচায় অদম্য জীবন বইটি। একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বাঙালি মাত্রের ওপর কি রকম নির্বিচার গণহত্যা ও বর্বর অত্যাচার চালিয়েছিল, এ বই তার প্রত্যক্ষ ও প্রামাণ্য দলিল। এর পাঠকদের মনে পড়বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বন্দিশিবিরের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনি কিংবা আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির বিভীষিকাময় বর্ণনার কথা। একাত্তরে লেখক ছিলেন বাঙালি পরিচালিত একমাত্র ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনে কর্মরত। পাকিস্তানি হানাদারদের চোখে একসময়ের বাম রাজনীতির কর্মী মন্টু খানের এটাও ছিল এক অপরাধ। পাঁচ মাসের বন্দিজীবনের বর্ণনায় নিজের ওপর তাদের সেই অকথ্য নির্যাতনের কথা তো আছেই, আর আছে অন্যদের ওপর অত্যাচারের বিবরণও। ছোট্ট একটু উদ্ধৃতি: ‘শরীরের কোথায় কোথায় কেটে গেছে বুঝতে পারার মতো অনুভূতিও নেই তখন। তবে দেখলাম মেঝেতে বেশ রক্ত। কখন কোথা থেকে যে রক্ত পড়ছে কিছু বুঝতেই পারিনি। গায়ের নানা জায়গাতেও কিছু রক্ত লেগে আছে চোখে পড়লো। মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছিল। সেই রক্তের ওপর শুইয়ে মারপিট করেছে আর সেই রক্তই গায়ে-বুকে লেগেছে।’ [পৃ. ৪৪] বাঙালিদের সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সে সময়ের সামগ্রিক মনোভঙ্গিও উঠে এসেছে এতে। মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়েও এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা পাননি লেখক। তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল এই যে নির্যাতনের কোনো পরিস্থিতিতেই সহকর্মী বা পরিচিত কাউকে নিজের সঙ্গে জড়াবেন না। ভেবেছিলেন, পরিণতিতে মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহতর কিছু তো আর সামনে নেই! সুতরাং নির্যাতনের মুখে সংশ্লিষ্ট কারও নাম প্রকাশ না করাকে তিনি রাজনৈতিক আদর্শের সংগ্রামের একটি পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বইটি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা হলেও পাঠক এর মধ্যে উপন্যাসের স্বাদ পাবেন। বন্দি মানুষগুলোর ব্যক্তিক সংকটের কথা যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তাতে তাঁরা একেকজন হয়ে উঠেছেন উপন্যাসের চরিত্র। প্রসঙ্গত হাজী মোরশেদের কথা বলা যেতে পারে, যিনি মন্টু খানের মতোই অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। নিজে সিগারেট খেতেন না, কিন্তু অনেক ঝুঁকি নিয়ে সিগারেট জোগাড় করে দিতেন সহবন্দীদের। মন্টু খান নিজেকে সাহিত্যিক বলে দাবি করেননি; কিন্তু এই বইয়ের ভাষানির্মোহতা ও পরিহাস-রসিকতায় অসাধারণ সাহিত্য গুণসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। নিজের ওপর নির্যাতনকে এমন নৈর্ব্যক্তিক পরিহাসের সঙ্গে বর্ণনার ক্ষমতা শক্তিমান সাহিত্যিকেরই থাকে। এই বইয়ে তিনি যা লিখেছেন, তা আড়ম্বরহীন ও অভিজ্ঞতা-উজ্জ্বল ভাষার গুণে হয়ে উঠেছে অনবদ্য! বর্বর অত্যাচারের মধ্যেও লেখকীয় নির্মোহ দৃষ্টির পরিচয় মেলে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভেতরেও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষের দেখা পাওয়ার বর্ণনায়। সব মিলিয়ে বলা যায়, বইটিতে এক দিকে যেমন রয়েছে মানবতার চরম লাঞ্ছনার ছবি, তেমনই অন্য দিকে আছে মানবিকতার দৃষ্টান্ত। কাজেই বইটিকে বলা যায় দালিলিকতা ও সাহিত্যিকতার এক অসামান্য নিদর্শন।
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেকটাই হয়ে পড়েছিল ভূলুণ্ঠিত। রাষ্ট্রের প্ররোচনায়ই নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছিল, বাঙালির আত্মত্যাগের মর্যাদাকে করা হচ্ছিল অবমাননা; উন্নয়নের নামে ইতিহাসের অমোঘ সত্যকেও করা হচ্ছিল অস্বীকার। এ রকম একটা সময়েই প্রকাশিত হয়েছিল মন্টু খানের হায়েনার খাঁচায় অদম্য জীবন বইটি। একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বাঙালি মাত্রের ওপর কি রকম নির্বিচার গণহত্যা ও বর্বর অত্যাচার চালিয়েছিল, এ বই তার প্রত্যক্ষ ও প্রামাণ্য দলিল। এর পাঠকদের মনে পড়বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বন্দিশিবিরের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনি কিংবা আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির বিভীষিকাময় বর্ণনার কথা। একাত্তরে লেখক ছিলেন বাঙালি পরিচালিত একমাত্র ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনে কর্মরত। পাকিস্তানি হানাদারদের চোখে একসময়ের বাম রাজনীতির কর্মী মন্টু খানের এটাও ছিল এক অপরাধ। পাঁচ মাসের বন্দিজীবনের বর্ণনায় নিজের ওপর তাদের সেই অকথ্য নির্যাতনের কথা তো আছেই, আর আছে অন্যদের ওপর অত্যাচারের বিবরণও। ছোট্ট একটু উদ্ধৃতি: ‘শরীরের কোথায় কোথায় কেটে গেছে বুঝতে পারার মতো অনুভূতিও নেই তখন। তবে দেখলাম মেঝেতে বেশ রক্ত। কখন কোথা থেকে যে রক্ত পড়ছে কিছু বুঝতেই পারিনি। গায়ের নানা জায়গাতেও কিছু রক্ত লেগে আছে চোখে পড়লো। মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছিল। সেই রক্তের ওপর শুইয়ে মারপিট করেছে আর সেই রক্তই গায়ে-বুকে লেগেছে।’ [পৃ. ৪৪] বাঙালিদের সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সে সময়ের সামগ্রিক মনোভঙ্গিও উঠে এসেছে এতে। মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়েও এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা পাননি লেখক। তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল এই যে নির্যাতনের কোনো পরিস্থিতিতেই সহকর্মী বা পরিচিত কাউকে নিজের সঙ্গে জড়াবেন না। ভেবেছিলেন, পরিণতিতে মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহতর কিছু তো আর সামনে নেই! সুতরাং নির্যাতনের মুখে সংশ্লিষ্ট কারও নাম প্রকাশ না করাকে তিনি রাজনৈতিক আদর্শের সংগ্রামের একটি পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বইটি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা হলেও পাঠক এর মধ্যে উপন্যাসের স্বাদ পাবেন। বন্দি মানুষগুলোর ব্যক্তিক সংকটের কথা যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তাতে তাঁরা একেকজন হয়ে উঠেছেন উপন্যাসের চরিত্র। প্রসঙ্গত হাজী মোরশেদের কথা বলা যেতে পারে, যিনি মন্টু খানের মতোই অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। নিজে সিগারেট খেতেন না, কিন্তু অনেক ঝুঁকি নিয়ে সিগারেট জোগাড় করে দিতেন সহবন্দীদের। মন্টু খান নিজেকে সাহিত্যিক বলে দাবি করেননি; কিন্তু এই বইয়ের ভাষানির্মোহতা ও পরিহাস-রসিকতায় অসাধারণ সাহিত্য গুণসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। নিজের ওপর নির্যাতনকে এমন নৈর্ব্যক্তিক পরিহাসের সঙ্গে বর্ণনার ক্ষমতা শক্তিমান সাহিত্যিকেরই থাকে। এই বইয়ে তিনি যা লিখেছেন, তা আড়ম্বরহীন ও অভিজ্ঞতা-উজ্জ্বল ভাষার গুণে হয়ে উঠেছে অনবদ্য! বর্বর অত্যাচারের মধ্যেও লেখকীয় নির্মোহ দৃষ্টির পরিচয় মেলে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভেতরেও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষের দেখা পাওয়ার বর্ণনায়। সব মিলিয়ে বলা যায়, বইটিতে এক দিকে যেমন রয়েছে মানবতার চরম লাঞ্ছনার ছবি, তেমনই অন্য দিকে আছে মানবিকতার দৃষ্টান্ত। কাজেই বইটিকে বলা যায় দালিলিকতা ও সাহিত্যিকতার এক অসামান্য নিদর্শন।