User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রিভিউদাতা : পারিজাত সমদ্দার " জগতে যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান। কোন রণে কত খু*ন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে। কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি কত বোন দিল সেবা, বীরের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা? " — কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ! বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। এক গৌরবের অধ্যায়। কিন্তু এই গৌরবের পিছনে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা যত বলা হয়, নারীর অবদান আদৌ কতটুকু সেটা কি ঠিক করে কখনো মূল্যায়ন করা হয়? "বীরাঙ্গনা" শব্দটির সাথে তরুণ প্রজন্মের কয়জনই বা পরিচিত? বর্তমান পাঠ্য ব্যবস্থায় কোথাও ঠিক করে বীরাঙ্গনাদের চেনার সুযোগ নেই। দেশে সম্ভবত কোনো রাস্তা, ভবন বা অন্য কিছুর নামকরণও হয়নি বীরাঙ্গনাদের নামে। ব*র্বর পাকিস্তানি হানাদারদের অকথ্য নির্যা*তন সহ্য করা নারীদের শুধু বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়েই আমরা দায়মুক্ত হয়ে গেছি? তাদের সমাজ কখনোই আপন করে নেয়নি। কি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তা জানার জন্য অসাধারণ এক গ্রন্থ শ্রদ্ধেয় নীলিমা ইব্রাহীমের 'আমি বীরাঙ্গনা' বইটি। শুরুর কথা : স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেই, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার পরম মহানুভবতায় যুদ্ধকালে নির্যাতিতা নারীদের 'বীরাঙ্গনা' বলে ঘোষণা করেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেন। নানাভাবে সরকার তাদেরকে আর সবার মতো মর্যাদাবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। আমাদের সমাজ কিন্তু যথেষ্ট উদার মানসিকতার অধিকারী নয়। নানা রকম সংস্কার ও কুসংস্কার এবং ঔচিত্য-অনৌচিত্যের প্রশ্নকে আড়াল করে সামাজিক নিষ্ঠুরতাকে কেবল প্রশয় নয়, প্রাধান্য দেয়। এই বৈরী বাস্তবতায় অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহীম সমাজকল্যাণের মনোভাব নিয়ে সাহসের সাথে রচনা করেছেন এই গ্রন্থ। তিনি সরেজমিন তদন্ত করে তথ্য নির্ণয় করেছেন এবং বীরাঙ্গনাদের অন্তরজ্বালা তাদেরই জবানিতে সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করেছেন। উনি আরও বীরাঙ্গনাদের কাহিনী বই আকারে বের করতে চাইলেও পরবর্তীতে সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব বেড়ে যাওয়ায় একাজ থেকে বিরত থেকেছেন। তবে ওনার ইচ্ছে ছিল তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করে ধর্মান্ধতার কালিমা দূর করার। তবে সেই ইচ্ছেটা অপূর্ণই থেকে গেল। উৎসর্গ : লেখকের উৎসর্গপত্রে সবচেয়ে প্রথমে নাম রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। দ্বিতীয়তে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের। এবং শেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী সকল নারীদের। বইয়ের বিন্যাস : বইয়টিতে মোট সাতজন বীরাঙ্গনার কাহিনী স্থান পেয়েছে। কাহিনী নয় তো৷ বাস্তব ঘটনা। যা লেখক নিজের লেখনশৈলীর মাধ্যমে বীরাঙ্গনাদের জবানে প্রকাশ করেছেন। প্রথম বীরাঙ্গনা, তারা ব্যানার্জী : মাতাপিতা প্রদত্ত নাম তারা ব্যানার্জী। কিন্তু এখন সে মিসেস টি. নিয়েলসেন। তারা ব্যানার্জীকে এক সাধারণ মেয়ে ছিলেন। কিন্তু ২৫ শে মার্চের পর সব বদলে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই গণধর্ষ*ণের স্বীকার হতে হলো। মানবিকতা শব্দটি চারপাশের কোথাও তিনি খুঁজে পেলেন না৷ প্রশ্ন করায় তার মুখে ছিটানো হলো থুথু। অমানবিক পরিবেশে অনুভূতিশূণ্য হয়ে গিয়েছিলেন। ১৬ই ডিসেম্বরের পর ছাড়া পেলেন পাকিস্তানি হানাদারদের নরক থেকে। তবে তথাকথিত সভ্য শিক্ষিত মানুষদের সংস্কারের নরক অপেক্ষা করে ছিল। পুনর্বাসন কেন্দ্রে তার পরিবারের কেউ আসলো না সংবাদ পাওয়া মাত্র। কারণ মেয়েকে আনতে যাওয়ার থেকে বাড়ি মেরামত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে ওনার গর্ভ*পাত করানো হলো। কিছুদিন পর ওনার বাবা এলেন, কিন্তু তাকে বাড়িতে নিলেন না। ওনার দাদা বলে গেলেন, হুট করে বাড়িতে উঠিস না৷ চিঠিপত্রও লেখার দরকার নেই। সাথে আরও জানতে পারলেন, ওনার সতীত্বের মূল্যস্বরূপ সরকারপ্রদত্ত অর্থেই ওনাদের বাড়ির কাজ চলছে, কিন্তু সেখানে প্রবেশাধিকার ওনার নেই। তাও হতাশা ওনাকে গ্রাস করেনি৷ কিছু করে দেখানোর তীব্র ইচ্ছে ছিল ওনার। বঙ্গবন্ধুর থেকে বীরাঙ্গনা মর্যাদা পেয়ে গর্বিত হন। আর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করার পর ওনার উদারতায় কারণে নিজের পিতার সাথে বঙ্গবন্ধুকে বসান তারা ব্যানার্জী। পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকাকালীন নার্সের কাজ শিখেন এবং ডেনমার্কে নার্সিং বিষয়ক পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পেতে সক্ষম হন এক ডাক্তারের সহায়তায়। সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করার সময় পেল এক বন্ধু, ডানা। যার পরিবার ওনাকে আপন করে নেয়। তারপর পরিচয় হয় সাংবাদিক নিয়েলসেনের সাথে। পরিচয় বিবাহে রূপ পায়। ১৯৭৫ সালের ১৬ই আগস্ট বিয়ে সম্পন্ন হলো। মধুচন্দ্রিমার রাতে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ। হাহাকার বেড়িয়ে আসে ভিতর থেকে। পিতৃবিয়োগের ব্যথা অনুভব করেন তিনি। নিজের 'বাঙালি' পরিচয় নিয়ে ধিক্কার জাগে ওনার মনে। এরপরের গল্প শুধু এগিয়ে যাওয়ার। পরবর্তীতে স্বামীপুত্রসহ নিজের পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। তখন ভালোবাসার কমতি ছিল না ওনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। কারণ এখন উনি আর তারা ব্যানার্জী নেই, হয়ে গেছেন মিসেস টি. নিয়েলসেন। দ্বিতীয় বীরাঙ্গনা, মেহেরজান : প্রথমেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এদেশের মৌলভি মওলানা এবং রাজনীতিবিদদের ওপর। যুদ্ধ শুরু হলে হঠাৎ একদিন ওনার মা এবং ছোট ভাইয়ের ওপর ব্রাশফায়ার করে শয়তানরা ওনাকে তুলে নিয়ে আসে৷ মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন তখন। তাও পশুদের হাত থেকে নিস্তার পাননি। শারীরিক নির্যাতনের সাথে সাথে মানসিক নির্যাতন। দেখতে পান, তারই মতো এক মেয়ে, যে ধ*র্ষণের কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তাকে হত্যা করে ফেলা হলো। ভাত দেওয়া হতো না। না মাংস। যদি গোমাংস খেয়ে কারো জাত যায়? এত মহানুভবতা আশ্চর্যের! যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে, যখন সবাই বুঝতে পারলো, পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য, তখন মেহেরজান কাম্পের একজন ষাটোর্ধ হাবিলদারকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বৃদ্ধ ওনাকে মেয়ের চোখে দেখলেও, বিয়ে করলে পরাজয়ের পর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ার উনিও বিয়েতে সম্মত হন। বেঁচেও যান। বিজয়ের পর মেহেরজানকে ওনার দর্জি পিতা ফিরিয়ে আনতে চাইলেও, মাতাপিতার প্রতি বোঝা হয়ে থাকতে চাননা বিধায় এবং ফিরে গেলেও সমাজ তাকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবে না এই আশঙ্কায় ফেরেননি। বৃদ্ধ স্বামীর সাথে পাকিস্তানে চলে যান। এক নতুন জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। জানতে পারেন, উনি সন্তানসম্ভবা। বৃদ্ধ জানেন উনি, ওই সন্তানের পিতা নন, তাও নিজের সন্তানসম আচরণ করেছেন সর্বদা। ধীরে ধীরে মেহেরজান হাতের কাজ শিখে অর্থ উপার্জন করে নিজে একটি বাড়ি কেনেন। আর সবই সম্ভব হয়, আরেক বাঙালি মহিলার চেষ্টায়। বীরাঙ্গনা হওয়ার গর্বে গর্বিত! তৃতীয় বীরাঙ্গনা, রিনা। রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি প্রথম থেকেই। রয়েছে যোগ্যতা এবং সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। কিন্তু একদিন সব এলোমেলো হয়ে গেল। সমাজে তার পরিবারের যথেষ্ট মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও একদিন হানাদাররা ওনার বাসায় এসে ওনার চোখের সামনে অপমান করে ওনার পিতামাতাকে হত্যা করে ওনাকে তুলে আনে। ইংরেজির শিক্ষা থাকায় প্রথমে এই উচ্চপদস্থ কর্নেলের নজরে পড়েন। কুৎসিত অভিজ্ঞতার স্বীকার হতে হয় সেদিন, যেদিন কর্নেল তাকে জিপে করে ঘুরতে গেলে একটা ছোট বাচ্চা ওনাকে "শালী, বে*রুশ্যে মাগী" বলে গালি দেয়৷ সেদিনের অপমান উনি কখনো ভুলতে পারেননি৷ কিছুদিন পর কর্নেল বদলি হয়ে গেলে, ওনার স্থান হয় অন্যান্য বন্দীদের সাথে। গণধ*র্ষণের স্বীকার হন। ওনার সমস্ত শরীরে দাঁতের কামড় ও নখের আঁচড়। অত্যাচারের সকল সীমা অতিক্রম করার পর, উনি অসুস্থ হলে ওনাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দেখেন, চার পাঁচজন উন্মত্ত পশু সকলের সামনে একটা মেয়েকে ধ*র্ষণ করলো! পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের পর কেউ নিতে না আসায় মন খারাপ তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। হঠাৎ ওনার বড় ভাইয়া ওনার খোঁজ পান৷ পরম মমতায় ফিরিয়ে নিয়ে যান। বোনের সকল মন খারাপ দূরীকরণে সচেষ্ট হন। পুরনো বাগদত্ত আতাউরের সাথে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আতাউর নিমরাজি হলেও, রিনার প্রতি তার সম্মানের অভাব বোঝা যায়। তাই আত্মসম্মানী ভাই এবং বোন উভয়েই আতাউরকে ফিরিয়ে দেন। সমাজের ভয়ে কাউকে নিজের বীরাঙ্গনা পরিচয় দিতেন না। তবে ওনার এক বান্ধবী নিজের ভাইয়ের সাথে ওনার বিয়ের প্রস্তাব দিলে সবটা বলতে হয়। সবটা শোনার পর নাসির যেই কথাগুলো বলেন, সেগুলো সকল বাঙালির বলা উচিত। দেশের মা বোনদের রক্ষা করতে না পারার জন্য নতজানু হয়ে ক্ষমা চান উনি৷ শুভ পরিণয় সম্পন্ন হয়। নতুন প্রজন্মের তরুণ তরুণীদের কাছ থেকে সমাজের বিবেকের জাগরণের অপেক্ষায় আছেন তিনি৷ চতুর্থ বীরাঙ্গনা, শেফালী৷ মনেপ্রাণে এক বাঙালি কন্যা। জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত। রাজনীতিতে সক্রিয়। অস্থিরতার সময়ে ওনাদের পরিবার গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় যাতায়াতের জন্য যার ওপর নির্ভর করলো, সে-ই শেফালীকে সেনানিবাসে দিয়ে নিজের প্রোমোশন নিয়ে আসলো। সেদিন রাতেই ধর্ষণের স্বীকার হলেন। বিশ্বাস ছিল ওনার নিজের ওপর, শরীর যেমনই থাকুক৷ অন্তর থাকবে শুভ্র পবিত্র অম্লান। মাঝেমধ্যে সম্পূর্ণ৷ ন*গ্ন অবস্থায় সকল মেয়েদের একসাথে রাখতো। উদ্ধারের দিন এক ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শিখ সৈন্য নিজের পাগড়ির কাপড় দিয়ে ওনাকে ঢেকে দেন। পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে নিজের গর্ভ*পাত করালেন। নিজের পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন। দুই ভাই, বাবা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু লজ্জিত তারা, নিজের পরিবারের মেয়েকে রক্ষা করতে না পারায়। পরবর্তীতে ঢাকায় একটি চাকরি নেন। একজনের সাথে প্রেম পরিণয়ে আবদ্ধ হন। নিজের বীরাঙ্গনা পরিচয়ের প্রতি স্বামীর সম্মান দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বামী একসময় বদলে গেল। একা পুরো পারিবারিক পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি তার সন্তানদের পরিণত বয়সে, নিজের পরিপূর্ণ পরিচয় তাদের কাছে তুলে ধরে তার সাধনা সার্থক করতে চান। পঞ্চম বীরাঙ্গনা, ময়না। পড়াশোনায় ভালো, রাজনীতিতে সক্রিয়, খেলাধুলায় আগ্রহী। যুদ্ধ শুরু হলে, ওনার পিতাকে আটক করে হানাদারে। আর পিতাকে ছাড়ার মুক্তিপণ হিসেবে জোর করে ওনাকে রেখে দেয়। অত্যাচার চলতে থাকে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সাথে অন্য একটা মেয়ে। যাকে ভালো চিকিৎসার জন্য প্রথমে বলা হয়, ঢাকা নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আসলে গুলি করে মেরে ফেলে জানোয়াররা৷ যুদ্ধ শেষে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে সক্ষম হন। পরিবারের ওপর অভিমান করে ঢাকায় এসে চাকরি নেন। সাবেক প্রেমিক হারুন বিয়ের প্রস্তাব দেন। দ্বিধা থাকলেও রাজি হন। সুখের নীড় রচনায় ব্যস্ত হন। কিন্তু কপালে যে সুখ সইল না। ক্ষমতার পালাবদলে হারুনকে নিহত হতে হলো। শুরু হলো বীরাঙ্গনা ময়নার একলা পথচলা। নিজের সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই আজ ওনার শপথ। ষষ্ঠ বীরাঙ্গনা, ফাতেমা। লেখকের ভাষ্যে, তার দেখা সবচেয়ে বেশি অত্যাচার সহ্য করা বীরাঙ্গনা ফাতেমা। ফলে মতিষ্ক বিকৃতিও ঘটে ওনার। ওনার প্রতি হওয়া অত্যাচারগুলো পড়ে চোখ ভিজে ওঠে। চোখের সামনে দেখেছেন, বাপ ছেলের এক নারীকে ধ*র্ষণ, মা মেয়েকে পরস্পরের সামনে ধর্ষণ। মুক্তি পাওয়ার পর, পড়াশোনা শেষ করেন৷ কিন্তু বীরাঙ্গনা হওয়ায় কোথাও চাকরি পাননা। বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় মাধ্যমিক পাশ এক ব্যক্তির সাথে। তাহের। কিন্তু একজন প্রকৃত মানুষ তিনি। নিজের স্ত্রীকে উপযুক্ত সম্মান দিয়েছেন তিনি। ঝড়ঝাপটা অনেক এসেছে পরবর্তীতে। কিন্তু পরিশেষে একজন সফল স্ত্রী, মা এবং মানুষ তিনি। অনেক সমাজকল্যাণমূলক কাজ করেন তিনি৷ সপ্তম বীরাঙ্গনা, মিনা। একজন সুখী গৃহিণী ছিলেন। এক কন্যা সন্তানের জননী। যুদ্ধাবস্থা শুরু হলে, স্বামীর অমতের কারণে ঢাকা শহর ত্যাগ করতে পারেননি। স্বামীর এর মাঝে বদলি হয়ে গেল। একদিন ছোট মেয়েটার তুমুল জ্বর হলে, বাধ্য হয়ে বাইরে বেড়োতে হয়৷ ডাক্তার ছোট মেয়েটাকে দেখার সময়ই, মিলিটারিরা আকস্মিকভাবে এসে মিনা তুলে নিয়ে গেল। জ্ঞান হতেই মনে পড়লো নিজের মেয়ের কথা, কেমন আছে তার মেয়ে। কিন্তু জানার কোনো উপায় ছিল না। নিজেকে মৃত পশু মনে হতো তার, শকুনগুলোর সামনে। শকুনগুলোর সারেন্ডার হওয়ার পর, পুনর্বাসন কেন্দ্রে থেকে নিজের গর্ভপা*ত করান। নিজের বাসায় ফিরে এলে, শাশুড়ি ওনাকে দেখে কেঁদে দেন। একে অপরের সংবাদ নেওয়ার মাঝেই মিনার স্বামী চলে আসে। গালিগালাজ করে গলাধাক্কা দিয়ে নিজের স্ত্রীকে বের করে দেন। শাশুড়ি এবং দেবর চাইলেও কিছু করতে পারেননি। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ফিরে এসে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি নেন ব্যাংকে। তার সহায়তার ছোট দেবরও একই ব্যাংকে চাকরি পান। ওনার মেয়ে, ওনার মা বাবার কাছে থাকে। ওনার দেবরের সাথে নিজের বোনের বিয়ে দেন। সবকিছু ঠিক হওয়ার পর, নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে শূণ্যতা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাননা৷ ওনার এক সহকর্মী ওনার প্রতি আগ্রহী হন। তবে সেটা জানতে পেরে প্রাক্তন স্বামী, সহকর্মী শফিকের ওপর হামলা চালান। যা ওনাকে এবং শফিকের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়। শফিক ওনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে উনি সব ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু ওনার প্রাক্তন স্বামী ওনার গায়ে কলঙ্ক লাগানোর জন্য আগেই সব কথা শফিক সাহেবকে বলে দিয়েছিল। অতঃপর শুভ বিবাহ। কিন্তু সমাজের অনাদের কারণে নিজের বীরাঙ্গনা পরিচয়কে আজ তিনি দুর্ভাগ্য মনে করেন। আজ তিনি মাতৃগর্বে গর্বিত এক মহীয়সী নারী। মতামত : বাংলার এক অভিমানী মেয়ে তারা ব্যানার্জী। ওনার চারিত্রিক দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারার বিষয়টি। অনেকে যেখানে আবেগে গর্ভ*পাত করাতে চাননি, কিন্তু ভবিষ্যতে বিভিন্ন পরিণামের কথা ভেবে গর্ভপা*তের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি৷ দেশের প্রতি অভিমান থাকলেও, দেশের মাটিতেই শেষশয্যা গ্রহণ করতে চান তিনি। মেহেরজান, দেশকে কি প্রচণ্ডভাবে স্মরণ করেন, তা বোঝা যায় ওনার জবানে। দেশের জন্য প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতরতায় ভোগেন। ওনার পিতা ওনাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও, পরিবারের কথা ভেবে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেখে আমি বিস্মিত। তারা ব্যানার্জী এই বিষয়ে আফসোস নিয়ে সারা জীবন কাটিয়েছেন, তাও মেহেরজান সেটা ফিরিয়ে দিয়েছেন! রিনা! আত্মসম্মানবোধের এক বলিষ্ঠ উদাহরণ। কেউ ওনাকে ছোট করতে চাইলেও, দৃপ্ত কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাসির অনবদ্য। তারা ব্যানার্জীর জবানে জানতে পারি, পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাদের স্ত্রীদের ফেরত নিয়ে যাননি৷ আর ওনাদের বাসরঘরে "তোমাকে অভিনন্দন বীরাঙ্গনা" কথাটি পড়ার পর ওনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কোনো সীমা ছিল না। বীরাঙ্গনা রিনাকে কখনো সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়তো হবে না৷ তাই এই প্রজন্মের একজন তরুণী হয়ে এখানে বলছি, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, এই মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। বীরাঙ্গনা শেফালী এক অনবদ্য চরিত্রের অধিকারী। স্বামী দ্বারা অপমানিত হয়ে আর ফিরে যাননি তার কাছে। নিজের চেষ্টায় সবকিছু করেছেন। শেষে স্বামী নিজের ভুল বুঝতে পারলে, শেফালীর অনুভূতি তার আত্মমর্যাদার পরিচয় বহন করছিল। বীরাঙ্গনা শেফালীর দশমাস নির্যা*তনের পর, ওনার মা যখন উত্তেজনার বশে ওনাকো কটুকথা শোনান, আমার নিজেরও অপমানিত বোধ হচ্ছিল। ওনার শপথ যেন সফল হয়, এই কামনা করি৷ বীরাঙ্গনা ফাতেমার ওপর অন্যান্য অনুভূতির থেকে সহানুভূতি বেশি কাজ করে। পশুদের নৃ*শংসতা ওনার জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর পথে পদে পদে বাধা দিয়েছে। ওনার স্বামীও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। অনেক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি বীরাঙ্গনাদের প্রতি যে মনোভাব পড়ার পর, স্বল্প শিক্ষিত হয়েও নিজের স্ত্রীর প্রতি সম্মান কখনো কমেনি ওনার৷ ভীষণ শ্রদ্ধা ওনাদের জন্য। বীরাঙ্গনা মিনার মেয়েকে ওনার বোন এবং তার স্বামী (ওনার প্রাক্তন দেবর) দত্তক নেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ওনার বাড়িতে গিয়ে নীচুকণ্ঠে জানিয়েছিলেন, তারা বীরাঙ্গনা। বঙ্গবন্ধুর ওনাদের "মা" সম্বোধন কমিয়ে দিয়েছিল ওনাদের লাঞ্ছনা পরিমাণ কমিয়ে। ভীষণ শ্রদ্ধা রইল। পাঠ প্রতিক্রিয়া : বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, " কেউ যদি বীরাঙ্গনাদের পিতার নাম জিজ্ঞেস করে তবে বলে দিও পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আর ঠিকানার পাশে লিখে দিও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। " জাতির জনকের মহানুভবতায় বীরাঙ্গনা মর্যাদা পেলেও, তা যে শুধু কাগজে কলমে থেকে গেল৷ আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্র সমাজ তাদের গ্রহণ করতে পারেনি৷ তাদের বারাঙ্গনা অপবাদ দিয়েছে। অস্পৃশ্য করেছে। তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা না দেওয়ার জন্য তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত ক্ষোভ ন্যায্য। কিন্তু এর প্রতিকার কি? পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান সম্পর্কে মাত্র একটা প্যারা থাকে। কেউ যদি প্রকৃত ভাবে এ সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে তার এই বইটি অবশ্যপাঠ্য। বইটি শুধু শুধু ছাপার কালিতে লেখা কিছু কথা নয়, পাকিস্তানি হানাদারদের বর্ব*রতার এক প্রামাণ্য দলিলও। বইটি শেষ করার পর এক দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। বাংলাদেশি হিসাবে এক ধরণের লজ্জা অনুভব করি ওনাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে না পারার জন্য। একইসাথে বীরাঙ্গনাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস, সৎসাহস আমাকে মুগ্ধ করে। আর যারা অনগ্রসর সমাজের অংশ হয়েও, অগ্রসর চিন্তাধারার অধিকারী হয়ে বীরাঙ্গনাদের সম্মান দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি, তাদের জন্য অশেষ শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধেয় নীলিমা ইব্রাহিম বইটি লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করার পর, বীরাঙ্গনাদের ইতিহাস শুনে, তাদের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ওনার মন এবং মস্তিষ্কের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তাও এই বইটি আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ওনাকে। আমাদের সমাজের বীরাঙ্গনাদের বিষয়ে শুভবুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করি একই সাথে। বইয়ের নাম : আমি বীরাঙ্গনা বলছি লেখক : নীলিমা ইব্রাহীম প্রকাশনী : জাগৃতি মূল্য : ৪০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৯০
Was this review helpful to you?
or
A must read book
Was this review helpful to you?
or
This book truly shows our despicable attitude towards the women who sacrificed the most for the birth of our motherland.
Was this review helpful to you?
or
history within
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম : আমি বীরঙগনা বলছি লেখক : নীলিমা ইব্রাহিম প্রকাশনী : জাগৃতি প্রকাশনী দাম : ৪০০ টাকা ব্যক্তিগত রেটিংঃ রেটিং দেয়ার সাধ্যে নাই। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মুক্তিযুদ্ধের উপরে লেখা একটি বই।৭ জন নারীর যুদ্ধকালীন সময়ের বিভীষিকাময় জীবনের গল্প আছে এখানে।পড়ার সময় রাগে গা জ্বলে উঠেছে।। মনে হয়েছে ওই পাকিস্তানী পশুগুলো থেকে আমাদের দেশের রাজাকারগুলা বেশী শয়তান।নিজের দেশের মেয়েগুলোকে কি নিঃদ্বিধায় হায়নাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। পড়ার সময় দুঃখে কেদেছি। কোলের ছোট ভাইকে আছাড় দিয়ে মাথা ফাটিয়ে মগজ বের করে ফেলা, ফ্যানের সাথে চুল বেধে সুইচ অন করে দেয়া আর বিভীষিকাময় রাত দিনের কথা,অপমানের কথা। এই ৭ জন নারীকে আমি ভাগ্যবতী বলবো।এরা প্রত্যেকে শিক্ষিত ছিল এবং যুদ্ধপরবর্তীকালে কাজ করেছে স্বাবলম্বী হয়েছে, স্বামী ও সংসার পেয়েছে।তারপর ও মানুষের যে ঘৃনা তারা সহ্য করেছে তা তাদের প্রাপ্য ছিল না। যারা এই সুযোগ পায় নি তাদের কি কাহিনী আল্লাহ জানেন।।
Was this review helpful to you?
or
দারুন
Was this review helpful to you?
or
স্লো সার্ভিস
Was this review helpful to you?
or
"আমি বীরাঙ্গনা বলছি" এমন এক গ্রন্থ যেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অবদানের কথা। স্বাধীনযুদ্ধে যে মানুষগুলো নিজেদের সবচেয়ে পবিত্র সম্পদটুকু হারিয়েছিল, তাঁরা যখন পরিবার ও সমাজ থেকে লাঞ্ছনা পায়, তখন তো পুরো বাংলাদেশ লাঞ্ছিত হয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরম মমতায় এই মানুষগুলোকে "বীরাঙ্গনা" উপাধিতে ভূষিত করেন ; স্বীকৃতি দেন মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বীরাঙ্গনা মায়েদের সম্বন্ধে জানতে এই গ্রন্থের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
Was this review helpful to you?
or
অনেকগুলো গল্পের সমন্বয়ে এই বইটি লেখা। গল্পগুলো কোন সাধারণ গল্প নয়। বীর নারীদের জলজ্যান্ত আত্নকাহিনী ফুটে উঠেছে বইটিতে। কতগুলো মানুষের করুন সব কাহিনী, ত্যাগ আর জীবনের উপর দিয়ে যে এই দেশটি স্বাধীন হয়েছে নীলিমা ইব্রাহীম মূলত তাই ফুটেয়ে উঠিয়েছেন বইটিতে।
Was this review helpful to you?
or
কিছু বলার মত মনের অবস্থা বা ভাষা কোনটাই আমার নেই। কিন্তু কিছু না বললে শান্তি পাচ্ছি না। বীরাঙ্গনা...। তাদের মর্যাদা কি দিতে পেরেছি আমরা? এই স্বাধীন বাংলার মানুষেরা? না পারি নি। আমার মনে হয় আজও পারবো না। সমাজের হাতে গোনা কিছু মানুষ এইসব বীর নারীদের আজ সম্মান দিতে প্রস্তুত। বেশিরভাগই পারবে না বীরাঙ্গনাদের মন থেকে যথার্থ সম্মান দিতে। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, আজ যদি একটি মেয়ে ধর্ষিত হয় তবে সমাজ মেয়েটির দোষ খুঁজতে উঠে পড়ে লেগে যায়। যেন কোন দোষ থাকলেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করাটা ন্যায্য। আরও একটি ঘটনা বলি যেটা আমাকে খুব বেশি আঘাত দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি নাটক মঞ্ছস্থ করা হয়। একটি মেয়েকে গ্রামের রাজাকারের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। তারপর যুদ্ধ শেষ হলেও মেয়েটির জীবনের যুদ্ধ শেষ হয় না। খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময় মেয়েটির দিকে যে ধরণের মন্তব্য ছুড়ে দেয়া হয়েছে এরপর নিজেকে এই জেনারেশনের একজন বলতে দ্বিধা হয়। "আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইটিতে কয়েকজন বীরাঙ্গনার উপর অত্যাচার আর স্বাধীনতা পরবর্তী অবিচারের কথা বলা আছে। যাদের কথা বলা হয়েছে, তারা সবাই সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন অসীম সাহসিকতায় আর পরম ধৈর্য দিয়ে। কিন্তু এমন অনেক বীরাঙ্গনা আছেন যারা স্বীকৃতি পাননি। সমাজের অবিচার তাদের তিল তিল করে মেরেছে। তাদের দুঃখ গাঁথা অজানাই থেকে গেল। থাক, যেটুকু জানলাম তাতেই মর্মে মর্মে আঘাত পেয়েছি। মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বের যে অবমাননা তাই আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দেয়।
Was this review helpful to you?
or
আমি বীরাঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহিম এর লেখা একটি বই। জাগৃতি প্রকাশনী প্রকাশনী হতে প্রকাশিত । দামঃ ৩৪০ টাকা । লেখিকা হিসেবে নীলিমা ইব্রাহিমকে সবাই চেনে না । আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি আমি হঠাত করে একদিন ইন্টারনেটে পাই । পিডিএফ পড়ার পর বলছি বইটি অনেক ভাল । একটা হার্ড কপি সংগ্রহে রাখার মত ।
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের নারীরা ত্যাগ করেছেন তাঁদের সর্বস্ব। এই ত্যাগের জন্য তার কোন কিছুই চায়নি। এ ত্যাগ কতটা মহৎ তা লিখে বুঝানো যাবেনা। শুধু মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে কখনই একটি দেশ স্বাধীন করা যায় না, বীরাঙ্গনাদেরও লাগে স্বাধীনতার জন্য। ড. নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি এই বইটি না পড়লে আমি কখনই স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারতাম না। বইটি পড়ে জানতে পারলাম রাষ্ট্র এসব বীর নারীদের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। কিন্তু বীরাঙ্গনারা কখনোই নিজেদের বীরাঙ্গনা বলে পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করেননি বরং দৃপ্তকন্ঠে বলেছেন হ্যা আমি বীরাঙ্গনা। তাদের প্রপ্প্য সম্মান দিতে না পারার জন্য একজন বাংলাদেশী হিসেবে এ লজ্জা রাখার জায়গা কোথায় আমার? বইটির সত্য ইতিহাস, বীরাঙ্গনাদের নিজের মুখে বলা কথাগুলো আমাকে কষ্ট দিয়েছে প্রতি পাতায় পাতায়। আমার কাছে আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটিকে শুধু একটি বই মনে হয়নি। মনে হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসর অংশ।এ খনো অনেক বীরাঙ্গনা এই দেশটার জন্য নীরবে চোখের পানি ফেলে। নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে সবারই বইটি পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
নূর মোহাম্মদ,মহিউদ্দিন,মতিউর,আব্দুর রউফ,মোস্তফা কামাল,হামিদুর রহমান ও রুহুল আমিন-এসব কোনো অজ্ঞাতনামা নয়,সাত বীরশ্রেষ্ঠেরই নাম।'৭১ এর কথা উঠলেই হয়তো অনেকের চোখে এই বীরের নামগলো সর্ব প্রথম ভেসে উঠে।কিন্তু '৭১ কি শুধু এদের নিয়েই? শুধু এদের বীরগাথার দ্বারাই কি বাংলাদেশ রচিত? স্বাধীনতার আঁচলে আমাদের মা-বোনদের কি কোনো স্পর্শই নাই? ২৫ শে মার্চের পর থেকে যখন পাকিস্তানি দুস্যরা গণহত্যা শুরু করে,শহর-গ্রামগঞ্জে লুটপাট শুরু করে তখন কি তারা আমাদের মা-বোনদের আপনা আপনিই ছেড়ে দেয়? না! কখনোই না! নজরুলের কন্ঠে বলতে চাই- "বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।" এক্ষেত্রেও তাই! পাকিস্তানিরা আমাদের ভাইদের গুলি করে মেরেছে কিন্তু মা বোনদের বাঁচিয়ে রেখেছে মুমূর্ষ অবস্থায়....না বাঁচা যায়,না মরা যায়! তৎকালীন সময়ে এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের মা-ভগ্নী-স্ত্রীদের, এককথায় সম্পূর্ণ নারী জাতির! ভিনদেশী গুন্ডারা তাদের সম্মুখেই পিতা-ভ্রাতার উপর অস্ত্র ধরে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এবং তাদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে বাঙ্কারে! বাঙ্কারে গিয়েই তাদের সামনে উন্মুক্ত হয় সেই বর্গিদের আসল রূপ! কোন নারীই ছাড় পেল না সেসব ক্ষুধার্ত জানোয়ার থেকে!সেই জানোয়ারগুলো ইচ্ছেমতো ক্ষুধা মিটিয়েছে অট্টহাসি ও ভয়ংকর লালাময় চেহারা নিয়ে! বিপরীতে সে নারীরা কিঞ্চিৎ শব্দও করতে পারিনি! সে দশ মাস কতই না আর্তনাদ চারদিকে কিন্তু কিছুই শোনা যায়নি কেননা দস্যুরা শুনে ফেললে সীমা পেরিয়ে অত্যাচার করে যে মেরে ফেলবে! যুদ্ধের আগে সবারই শান্তির জীবন বিরাজমান ছিল, যুদ্ধ আসতেই তা কোথায় উধাও হয়ে যায়! শুরু হয় দৈহিক নির্যাতন,নিপীড়ন ও অত্যাচার সহন করার অধ্যায়! হাজারো নারী সাক্ষী এসব দুর্দশার! দশ মাস শত্রুদের হাতে বন্দী থেকে, মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা একজন নারীর জন্য কোনো মামুলি ব্যাপার নয়! পরিবার,আত্মীয়-সজন ও সমাজ কি আদৌ তাকে গ্রহণ করবে,না ফেলে রাখবে নিকৃষ্ট সমালোচনার চার গন্ডিতে তাও কিন্তু ভাবার বিষয়!হুমম! বীরাঙ্গনারাও ভেবেছেন তাইতো তারা আত্মহত্যার পথ না বেছে,আরেক যুদ্ধে নেমে পড়লেন! যে যুদ্ধ ছিল পরিবার,আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে! যে যুদ্ধ ছিল নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং এক সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়! আহ!এমনই ছিল বীরাঙ্গণাদের বীরগাথা! পবিত্র মাটির জন্য নিজের পবিত্র দেহে মলিনতা লাগিয়েছিল তারা! বীরদের নিয়ে অনেক পড়লেন,আজ বীরাঙ্গনাদের নিয়ে একটু পড়ে দেখুন! সত্যিই! অসাধারণ, তারা! তাদের চিন্তাভাবনা! তাদের মনোবল! তারা ব্যানার্জি(মিসেস টি নিয়েলসন), মেহের,রিনা শেফালী,ময়না ফাতিমা ও মিনা... সত্যিই তারা অনন্য! এই সাত অনন্যাকে নিয়েই নীলিমা ইব্রাহিমের অখন্ডিত ও অসামান্য গ্রন্থ..."আমি বীরাঙ্গনা বলছি"!
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতা হয়েছেন প্রায় আড়াই লক্ষ নারী। তাদের অনেককে হয়ত যুদ্ধের পর শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, তাদের নেওয়া হয়েছিল আশ্রয় কেন্দ্র, পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সে সব জায়গাতে নানা সময়ে লেখিকার সঙ্গে দেখা হয়েছে বীরাঙ্গনাদের। নির্যাতিতা নারীদের উপর হয়ে যাওয়া অত্যাচার আর তার পরের কথা তারা বলেছেন লেখিকাকে। লেখিকা সে কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষদের। একাত্তরে নির্যাতিত বীরাঙ্গনাদের দুর্দশা আর অবদানের দলিল এ বইটি।
Was this review helpful to you?
or
পড়ার সময় আবেগ ধরে রাখতে পারি নাই । বীরাঙ্গনাদের কাছে আমরা চির ঋণী, তাদের প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে সরকারের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর নতুন করে তাদের জন্য কিছু করা হয়তো অসম্ভব হয়ে পড়েছে ।।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধে যারা সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছিলেন, তারা ফিরে এসে নিজের নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন। অনেকে পেলেন প্রশংশা, গৌরব। কিন্তু আরেকটা যুদ্ধ লড়েছিলেন নারীরা। দেশের জন্য সম্ভ্রম দেওয়া নারীদের কি দিলো সমাজ? তাদের যুদ্ধ শেষ হয় না। সে রকম কয়েকজন বীরাঙ্গনার কথা নিয়ে এই বই। নীলিমা ইব্রাহীম নিজে কাজ করেছেন বীরাঙ্গনাদের নিয়ে আর সেই অভিজ্ঞতার কথাই লিপিবদ্ধ করেছেন। এ বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঘটনার দলিল।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃআমি বীরাঙ্গনা বলছি লেখিকাঃনীলিমা ইব্রাহিম প্রকাশনীঃ জাগৃতি প্রকাশনী মূল্যঃ৩৪০টাকা আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইটিতে কয়েকজন বীরাঙ্গনার উপর অত্যাচার আর স্বাধীনতা পরবর্তী অবিচারের সেই নির্মম বর্ণনা চিত্রায়ন হয়েছে ।বইটিতে নীলিমা ইব্রাহিম যাদের কথা বলেছেন, তারা সবাই সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছিলেন অসীম সাহসিকতায় আর পরম ধৈর্য দিয়ে। কিন্তু এমন অনেক বীরাঙ্গনা আছেন যারা স্বীকৃতি পাননি। সমাজের অবিচার তাদের তিল তিল করে মেরেছে। তাদের দুঃখ গাঁথা অজানাই থেকে গেল। এ বইটির মাধ্যমে যেটুকু জানলাম তাতেই মর্মে মর্মে আঘাত পেয়েছি। মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বের যে অবমাননা তাই আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন নিজেও অপরাধী। বইটিতে লেখিকা বলার চেষ্টা করেছেন এই সমাজের হাতে গোনা কিছু মানুষ এইসব বীর নারীদের আজ সম্মান দিতে প্রস্তুত কিন্তু বেশিরভাগই পারবে না বীরাঙ্গনাদের মন থেকে যথার্থ সম্মান দিতে। লেখিকা প্রমাণস্বরূপ বলেছেন, "আজ যদি একটি মেয়ে ধর্ষিত হয় তবে সমাজ মেয়েটির দোষ খুঁজতে উঠে পড়ে লেগে যায়। যেন কোন দোষ থাকলেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করাটা ন্যায্য। "আরও একটি ঘটনা বলি যেটা আমাকে খুব বেশি আঘাত দিয়েছে। বইটিতে দেখা যায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি নাটক মঞ্ছস্থ করা হয়। একটি মেয়েকে গ্রামের রাজাকারের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। তারপর যুদ্ধ শেষ হলেও মেয়েটির জীবনের যুদ্ধ শেষ হয় না। খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময় মেয়েটির দিকে যে ধরণের মন্তব্য ছুড়ে দেয়া হয়েছে।এমনইভাবে সেই বীরাঙ্গনাদের বেদনা বিধুর জীবনের কিছু প্রতিচ্ছবি লেখিকা তুলে এনেছেন তার এ বইটিতে। বইটি পড়ে নিজের বিবেককে আরেকটু জাগ্রত করতে পারলাম। সকলেরই এ বীরাঙ্গনাদের কষ্টে ভরা জীবনের কাহিনীগুলো জানার্থে বইটি সংগ্রহ করে পড়া উচিত এবং তা একবার হলেও৷
Was this review helpful to you?
or
বীরাঙ্গনা শব্দটির সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু শব্দটি দিয়ে কি বুঝানো হয় তা অনেকেই জানিনা। বীরাঙ্গনা শব্দের আভিধানিক অর্থ বীর নারী। রাষ্ট্র শুধু বীরদের মনে রাখে বীরাঙ্গনাদের নয়। বীরাঙ্গনাদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরন দেখলে মনে হয় শ্রদ্ধা, শোক, সম্মান-ফুল এসব শুধু বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম আর বীরবিক্রমদের জন্য। বীরাঙ্গনাদের সবসময় এসব থেকে দূরে রাখা হয়েছে। নয় মাসে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২০% ছিল আমাদের মা, বোন অথবা বৌ মানে নারী। তাদের অনেকের বয়স ছিল ১২ বছরের নিচে। ২০% হিসাবে প্রায় ছয় লক্ষ নারী যুদ্ধে শহীদ হয়, আর চার লক্ষ হয় চরম নির্যাতিত। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই দশ লাখ নারী কেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবে না? মুক্তিযুদ্ধের সময় অবদানর জন্য দেশ ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নানা উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এর মধ্যে মাত্র দু’জন ছিলেন নারী। কুড়িগ্রামের তারামন বিবি তার বীরপ্রতীক উপাধি পাওয়ার খবর জানতে পারেন ঘটনার ২৪ বছর পর। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের নারীরা ত্যাগ করেছেন তাঁদের সর্বস্ব। এই ত্যাগের জন্য তার কোন কিছুই চায়নি। এ ত্যাগ কতটা মহৎ তা লিখে বুঝানো যাবেনা। শুধু মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে কখনই একটি দেশ স্বাধীন করা যায় না, বীরাঙ্গনাদেরও লাগে স্বাধীনতার জন্য। ড. নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি এই বইটি না পড়লে আমি কখনই স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারতাম না। বইটি পড়ে জানতে পারলাম রাষ্ট্র এসব বীর নারীদের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। কিন্তু বীরাঙ্গনারা কখনোই নিজেদের বীরাঙ্গনা বলে পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করেননি বরং দৃপ্তকন্ঠে বলেছেন হ্যা আমি বীরাঙ্গনা। তাদের প্রপ্প্য সম্মান দিতে না পারার জন্য একজন বাংলাদেশী হিসেবে এ লজ্জা রাখার জায়গা কোথায় আমার? বইটির সত্য ইতিহাস, বীরাঙ্গনাদের নিজের মুখে বলা কথাগুলো আমাকে কষ্ট দিয়েছে প্রতি পাতায় পাতায়। আমার কাছে আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটিকে শুধু একটি বই মনে হয়নি। মনে হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসর অংশ।এ খনো অনেক বীরাঙ্গনা এই দেশটার জন্য নীরবে চোখের পানি ফেলে। নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে সবারই বইটি পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
বিষয়বস্তু হিসেবে বিচার করলে এটি একটি অসাধারণ বই। বই-এ একাধিক বীরাঙ্গনার যুদ্ধ পূর্ববর্তী, যুদ্ধ সময়কালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী জীবন/অবস্থা নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বীরঙ্গনাদের আমরা কখনই যথোপযুক্ত সম্মান দিতে পারি নি। তাদের ত্যাগ-কষ্ট-লাঞ্চনা-বঞ্চনা-কে যৌক্তিক ভাবে স্বীকার করা এবং তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করা তো দূরের কথা, তাদের এ আমরা সামন্য গ্রহণ ও করতে পারি নি। সেটা সামাজিক, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত যে কোন ভাবে-ই বিচার করা হোক না কেন। সমাজ তাদের কে ধিক্কার দিয়েছে। পরিবার তাদের বর্জন করেছে। ব্যক্তি তাদেরকে আক্রমণ করেছে নষ্টা বলে। অথচ তাদের তো কিছুই করার ছিল না এ ব্যাপারে। বাবা, ভাই, স্বামী সবাই দেশ উদ্ধার করার কারণেই হোক, আর আত্মরক্ষার কারণেই হোক, সমস্ত নারীদের তারা ফেলে চলে গিয়েছিলেন সেদিন। কেউ একবারের জন্যও ভাবেন নি, পেছনে ফেলে যাও মা, বোন, স্ত্রী-দের কি হবে। যুদ্ধ যে তাদেরই সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে সব-সময়। বর্ণনা যতটা সাবলীল আশা করেছিলাম ততটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই বর্ণনা লেখিকা ও বীরাঙ্গনার মধ্যে দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে খুব সহজেই ক্ষেই হারিয়ে ফেলার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ লাইনেই লেখক বলছেন এক কথা আবার পরের লাইনেই বীরাঙ্গনা তা বর্ণনা করছেন। বীরাঙ্গনার সাথের আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপারে মাঝে মাঝে মনে সামঞ্জস্য হারিয়ে যায়। কার ব্যাপারে বলা হচ্ছে তা বুঝতে কষ্ট হয়।
Was this review helpful to you?
or
আমি বীরাঙ্গনা বলছি...এমন একটা বই নিয়ে যেটাকে অনেকেই হয়ত বিসিএসের বাংলার এমসিকিউ হিসেবে অন্য অনেক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইয়ের নামের মধ্যে শুধুমাত্র নাম কে ওয়াস্তে খেয়াল করে...পড়ার উপযোগী কোন বই হিসেবে নয়! বইটির নাম মেলা আগে দেখলেও সত্যি বলতে পড়ার সৌভাগ্য এতদিন পরে এসে হয়েছে। কিছুটা দুর্ভাগ্যই বলতে হয়; সময়ের হিসাব খুটিয়ে খুটিয়ে রাখলেও এই ক্ষেত্রে বেশ দেরি করে ফেলেছি। আমি বীরাঙ্গনা বলছি পড়তে শুরু করেছিলাম স্বাদ পরিবর্তনের অংশ হিসেবে কিন্তু পড়া শেষ করার পর এটা আমার পড়া বেস্ট বইগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অনেকে ইতিমধ্যে হয়ত পড়েও ফেলেছেন...কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই অসাধারণ বইটা পড়া হলো এতটা কাল গিয়ে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে...এই ভিত্তিক গল্প অনেকভাবে আমরা ফিকশনের মাধ্যমে জেনেছি, দেখেছি...... তাহলে অন্য কোন বই না, এটাই এত মনে ধরলো কেন? এই বই মনে ধরার অন্যতম কারণ, ড. নীলিমা ইব্রাহিমের বইয়ের চরিত্রগুলো বাস্তব, জলজ্যান্ত...সাতজন বীরাঙ্গনার হাহাকার, আক্ষেপ এবং অভিমান আছে এতে। এবার প্রশ্ন আসবে সব বাদ দিয়ে ড. নীলিমা ইব্রাহিম এই বীরাঙ্গনা নিয়েই লিখেছিলেন কেন ! বইয়ের ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন তিনি, ধানমন্ডির নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে বীরাঙ্গনাদের যুদ্ধ পরবর্তীকালীন অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে লেখিকা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা পরবর্তীকালে তাঁর মনে ভীষণ প্রভাব ফেলেছিলো। ব্যাক্তিগতভাবে তিনি যেসব বীরাঙ্গনাদের সাথে কথা বলেছিলেন তাদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার আলোকেই রচিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি। বইটা দুই খন্ডে লিখেছিলেন তিনি যার প্রথমটা ১৯৯৪ সালে এবং দ্বিতীয়টা ১৯৯৭ সালে বেরিয়েছিল। তৃতীয় খন্ড লেখার চিন্তা করলেও শারীরিক অসুস্থতা এবং অভিমানের কারণে পরে সেটা আর সম্পূর্ণ করেননি। আমি বীরাঙ্গনা বলছি একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ যেখানে জাতির সবথেকে উপেক্ষিত অংশ বীরাঙ্গনা এবং তাদের করুণ গল্পগুলোকে নিজস্ব আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন ড. নীলিমা ইব্রাহিম। বইয়ের শুরুর দিকের কিছু অংশ তুলে দিলাম.....শব্দগুলো খেয়াল করে দেখুন অনেক চাপা অভিমান যেন ব্যক্ত করা হয়েছে। “এ জীবনে সবকিছুর স্পর্শই আমি পেয়েছি; কখনও মৃদু কোমল স্পর্শ বা আঘাত আবার কখনো অশনি পতনের দাবদাহ। সেকথা, আমার সে অনুভূতির গভিরতাকে কখনও দ্বিতীয় ব্যাক্তির শ্রবণগোচর করবো এমন সাহস আমার ছিল না। কারণ এ সাহস প্রকাশের শিক্ষা শৈশব থেকে কখনও পেয়ে আসিনি। নামতা পড়ার মতো শুধু আউড়িয়েছি আমি মেয়ে, আমাকে সব সইতে হবে; আমি হবো ধরিত্রীর মতো সর্বংসহা। প্রতিবাদের একটিই পথ, সীতার মতো অগ্নিপরীক্ষা বা পাতাল প্রবেশ। সীতা ছিলেন দেবী। তাই ও’দুটোর কোনটারই সদ্ব্যব্যবহার আমি করতে পারি নি। যখন চারিদিকে শুধু ছিঃ ছিঃ ধ্বনি শুনেছি, সমাজপতি এবং অতি আপনজন বলেছেন, ‘মরতে পারলি না হতভাগী, আমাদের মারবার জন্য এই কালোমুখ নিয়ে ফিরে এসেছিস?’ তাদের মুখ ফুটে বলতে পারি নি, ‘না মরতে আর পারলাম কই? তার পথও তো তোমরা করে দিলে না। বাঁচাবার জন্য হাত বাড়াও নি, মরবার পথেও তো সহায়তা করো নি। না সে কথা মুখে বলতে পেরেছো, না কাজে পরিণত করবার মতো সৎসাহস সেদিন তোমাদের ছিল, আজও নেই, ভবিষ্যতের কথা ভবিতব্যই জানেন।” তারা, মেহেরুন্নেসা, রিনা, শেফা, ময়না, ফতী পাগলী এবং আমিনার মাধ্যমে লেখিকা বীরাঙ্গনাদের সামগ্রিক অবস্থার একটা ক্ষুদ্র চিত্র তুলে ধরেছেন। বীরাঙ্গনা শুধু যেন উপাধিই ছিল না, তাদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের একটা নিয়ামকও ছিল। ধানমন্ডির নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে যখন তারা ছিল, তাদের মধ্যে অনেকেরই পরিবার তাদের সাথে দেখা করতে আসত কিন্তু তাদেরকে কখনও নিজেদের সাথে নিয়ে যাবার কথা বলত না কিংবা নিয়ে যেত না। অনেকের তো পরিবার তাদের বলেই দিয়েছিল যেন তারা যোগাযোগ না করে। কারও কারও সংসার সারা জীবনের মতো ভেঙে গেছিলো। মনে মনে একটু প্রেক্ষাপটটা কল্পনা করুন তো....অনুভব করতে পারছেন? দুঃখের কথা তো এটাই...আমরা তাদেরকে অনুভব করতে পারি না। বুক ফুলিয়ে আমরা বলতে পছন্দ করি আমি রক্ষা করব, আমি পাশে থাকব...কিন্তু কাজের সময় আমরা নিরব দর্শক কিংবা কাপুরুষ হয়ে যায়। সম্ভ্রমও হারিয়েছে তারা, সমাজের কাছে লজ্জার বিষয়ও হয়েছে তারাই। জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী...এর অর্থ হলো জননী এবং জন্মভূমি স্বর্গ অপেক্ষা পবিত্র। আমরা জন্মভূমিকে রক্ষা করতে পারলেও জননীকে পারিনি এবং প্রাপ্য সম্মানের জায়গায় ‘কলঙ্কিনী’ অ্যাখ্যায়িত করেছি। বিশ্বকবি হয়ত আক্ষেপের সুরে ভবিতব্যের কথা আগেই বলে গেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি।’ বইটাতে এমন কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর কেউ দিতে পারবে না, উত্তর দেয়া হয়ত সম্ভবও না। সামাজিক প্রেক্ষাপটেই বলি বীরদেরকে মানুষ যেভাবে সদর্পে গ্রহণ করে, বীরাঙ্গনাদের কথা মানুষ উল্লেখ করতে যেন কুণ্ঠাবোধ করে। বীরাঙ্গনারা যেন সমাজের লজ্জা, কলঙ্ক কিংবা জাদুঘরে রাখার মতো বিষয়। ‘ও... বীরাঙ্গনা.....এখনও বেঁচে আছে’...ভ্রু কুঁচকে দেখে অনেকেই, শ্রদ্ধার চোখে নয়! যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই সম্মানের সাথে সামনে আসলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। আমরা হলাম বিবেকমান জাতি আর এটা আমাদের বিবেকের দৃষ্টান্ত...বীরাঙ্গনারা নষ্টা, পাপিষ্ঠা...তাদের কথা উল্লেখ করাও পাপ! তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শত্রু শিবিরে অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে সমাজ সংসারের হাতে তারা বারবার নিহত হয়েছেন। তাদের বেঁচে থাকাটাই যেন অখন্ডনীয় পাপ। গল্পটা সেসব মানুষেরই...যাদের সত্ত্বাকে উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বইয়ে উল্লেখকৃত আক্ষেপের কিছু দৃষ্টান্ত দেখুন- “আমি নিজে সচেতন ও দৃঢ় বিশ্বাসী যে আমি একজন বীরাঙ্গনা। আমার রাষ্ট্র আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার পিতামাতা হাত বাড়িয়ে আমাকে বুকে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের জুলুমবাজির ভয়ে আমি তাদের ঘরে যেতে পারি নি। তবে আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন আপনাদের দৃষ্টিতে আমি বীরাঙ্গনা না হলেও নিঃসন্দেহে বারাঙ্গনা নই।” বুদ্ধি হবার পর থেকে খুব সামান্যই বই পড়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে কিছু কিছু বই মুগ্ধ করেছে, কিছু কিছু বই স্বপ্ন দেখিয়েছে, আবার কিছু বই চরম বিরক্তও করেছে। কিন্তু...এই প্রথম কোন বই মনের গভিরে গিয়ে বিঁধেছে। কষ্ট লেগেছে...তারপরেও পড়ছি...আচ্ছন্নের মতো। বেশিক্ষণ পড়তে গেলে নিজের অজান্তেই ফুঁপিয়েছি। তারপরেও আমি বীরাঙ্গনা বলছি’র আবহ থেকে মুক্ত হতে পারিনি।