User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ পদ্মানদীর মাঝি লেখকঃ মানিক বন্দোপাধ্যায় সম্পাদকঃ হুমায়ন আজাদ প্রকাশনীঃ আগামী প্রকাশনী বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা অন্যতম একটি। পদ্মা আমাদের দেশের জাতীয় মাছ ইলিশে ভরপুর। পদ্মার ইলিশ বাঙালি জাতির প্রিয় সুস্বাদু খাবার। বাংলা নববর্ষে পান্তা-ভাতের সাথে ইলিশ মাছের ভাঝি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার। মানিক বন্দোপাধ্যায় এ পদ্মানদীকে ঘিরেই “পদ্মানদীর মাঝি” উপন্যাস রচনা করেছেন। বাংলার অন্যতম কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায় পদ্মানদী মাঝি উপন্যাসে গ্রাম বাংলার মানুষদের সহজ সরল জীবন প্রকৃতি অত্যন্ত সুনিপুনভাবে তুলে ধরেছেন্। পদ্মাকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে জেলে গ্রাম। গ্রামের নাম কেতুপুর। আর প্রধান চরিত্র কুবের। সে এ উপন্যাসের নায়কও । কুবের দরিদ্র অসহায় ও প্রেমলোভী। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রকে ঔপন্যাসিক বাস্তবতা দান করেছেন। জেলে গ্রামের প্রধান পেশা মাছ ধরা। পদ্মার ইলিশ জেলে গ্রামের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। কুবের কেতুপুর গ্রামের অত্যন্ত সরল প্রকৃতির মাঝি। সারারাত জেগে কুবের, গনেশ ও ধঞ্জয় নদীতে মাছ ধরে। সকালে মহাজনের নিকট মাছ বিক্রি করে যে টাকা পায় তা তারা ভাগাভাগি করে নেয়। যেদিন মাছ পায় তাদের মুখে হাসি ফুটে। গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরে আসে। আর যেদিন মাছ পায় না সেদিন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে অনাহারে থাকতে হয়। অভাব তাদের নিত্যক্ষণ তাড়া করে , সুখ কেড়ে নিতে চায , কিন্তু পয়া না। উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য বিষয় প্রেম ও ভালবাসা। পদ্মানদী মাঝি উপন্যাসের নায়ক কুবের ও নায়িকা কপিলা। কুবের ও কপিলার প্রেমের জুটি উপন্যাসের সার্থকতা দান করেছে। কুবের গরীবের মধ্যে গরীব। পঙ্গু স্ত্রী মালা ও চার সন্তান-সন্ততি নিয়ে তার সংসার। মেয়ে গোপী বড় হয়ে উঠছে। কুবেরের জীবন কেটে যাচ্ছিল পদ্মায় রাত জেগে মাছ ধরে, ঝিমিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে। অপরদিকে কপিলা মালারই ছোট বোন। কপিলার অন্য পরিচয় সে অন্যজনের স্ত্রী। কপিলা অপূর্ব সুন্দরী। সন্তান জন্ম দিয়েছে কিন্তু বাঁচেনি। কপিলার আদিম সৌন্দর্য স্বামীকে মোহিত করেনি, করেছে কুবেরকে। সতীনরে সংসারে স্বামীর সাথে ঝগড়া -ফ্যাসাদ করে বাপের বাড়িতে চলে আসে। সেখানে অনেকদিন কাটায়। বন্যার সময় কপিলা কেতুপুর গ্রামে কুবেরের বাড়িতে আসে। নিম্নবিত্তের লোক হলেও কুবেরের একটি রোমান্টিক মন আছে। তার মধ্যেও স্বাভাবিক দোষ-গুণ ও কামনা-বাসনা আছে। তাই সে শালিকা কপিলার প্রতি আদিম নিষিদ্ধ আকর্ষণ অনুভব করে। কপিলার বিভিন্ন অঙ্গাভঙ্গি , কথাবার্তা কুবেরকে মনোমুগ্ধ করে। কুবের মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমীন বাড়ি যায়, সঙ্গে কপিলা। তারা একরাত কাটায় পদ্মা পারের শস্তা হোটেলে। দিনরাত কুবেরের প্রানটা ছটফট করে কপিলার জন্য। এরপর কপিলার সতীন চলে যাওয়ার পর তার স্বামী তাকে নিতে আসে। সংসারের টানে স্বামীর সাথে চলে যায়। অকৃত্রিম প্রেমের টানে কুবের একসময় কপিলার স্বামীর বাড়িতে বেড়াতেও যায়। প্রকৃতি খুবই নিষ্ঠুর। একদিন প্রবল পদ্মার ঝড়ে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। কুবেরের নৌকা তছনছ হয়ে যায়। কুবের অসহায় হয়ে পরে। কুবেরের মেয়ে গোপীর বিয়ে । এদিকে কপিলা স্বামীর সংসার ছেড়ে কুবেরের বাড়িতে আসে এবং পূর্ব প্রেমের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকে। গোপীর বিয়ে ভেঙ্গে যায়। রাসু গোপীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। রাসু কুবেরের খুবই ঘন্ষ্টি। রাসুর বয়স বেশি হওয়ায় মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে অস্বীকার করে। এই ক্ষোভে রাসু কুবেরের ক্ষতি করার জন উঠেপরে লাগে। রাসু কুবেরকে চুরির দায়ে ফেলে। পুলিশ কুবেরকে তাড়া করে। কুবের চুরির দায় এড়াতে হোসেন মিয়ার কাছে সাহায্য কামনা করে। সুচতুর হোসেন মিয়া ময়নাদ্বীপে যাওয়ার শর্তে কুবেরকে চুরির দায় হতে মুক্ত করে। ঘাটে ময়নাদ্বীপের নৌকা বাধাঁই ছিল । কুবের নীরবে গিয়ে ওঠে নৌকায়। কপিলা বলে, আমারে নিবা মাঝি লগে। অবশেষে, কুবের স্ত্রী পঙ্গু মালা ,সন্তান-সন্ততি ও সংসার ছেড়ে এক আদিম অকৃত্রিম নিষিদ্ধ প্রেমের টানে কপিলাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপে। নাম যেমন তার মানিক তেমনি তার লেখাকে ফুটে তুলেছেন মানিক তথা রত্নরুপে। মানিক বন্দোপাধ্যায় একজন বাস্তবধর্র্মী কথা সাহিত্যিক। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র, তাদের ভাষা, ভাবভঙ্গি, আচার-আচরন, গ্রামীন জীবনের প্রকৃতি, নদীর বর্ণনা, জেলের নৌকার বর্ণনা, মাছ ধরার দৃশ্যের বর্ণনা অত্যন্ত চমৎকার ভাবে দিয়েছেন। উপন্যাসটি পড়ে আমার মনে হয়েছে যে, আমি যেন এইমাত্র পদ্মাপাড়ের জেলে গ্রাম ঘুড়ে আসলাম। উপন্যাসটি একটি সার্থক ও বিশিষ্ট আঞ্চলিক উপন্যাস সার্থকতা লাভ করেছে। মানিক বন্দোপাধ্যায় একজন সার্থক ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাত। লেখককে ধন্যবাদ ছোট করতে চাই না।