User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
প্রখ্যাত সাংবাদিক নির্মল সেনের অনবদ্য ভ্রমণ কাহিনী 'বার্লিন থেকে মস্কো' ১৯৮২ সালে প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু লেখক এই ভ্রমণ সম্পন্ন করেছিলেন ১৯৭২-১৯৭৪ সালে এবং লিখেও ছিলেন ঐ সময়ে। ভ্রমণ কাহিনী হলেও এই বইতে লেখক তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতির একটি বিশেষ ধারা সমাজতন্ত্রের বয়ান দিয়েছেন। সাথে সাথে সমাজতন্ত্রী দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির বর্ণনা ও রূপ তুলে ধরেছেন। ফলে বইটি পড়ে শুধু কতগুলো ইট পাথরের শহরের কথাই জানতে পারিনি পাশাপাশি জানতে পেরেছি বিশ্ব রাজনীতির একটি মূলধারা সমাজতান্ত্র ও তা থেকে উৎসারিত সমাজ সভ্যতা ও সংস্কৃতির রূপ। তিনি অবলিলায় বলেছেন সমাজতন্ত্রের সম্ভাব্য সংকট-দ্বন্দ্ব-দূর্বলতা এবং সম্ভাবনার কথাও। লেখক একজন বামপন্থি রাজনিতিক হয়েও তখনি শ্রেণি সমন্বয়ের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং প্রতিবিপ্লবের আশংকা করেছেন এই গ্রন্থে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য তার সেই আশংকাই আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। লেখকের দেখা সেই সময় আর আমার পাঠের সময়ের বিশ্ব রাজনীত এক নয়। তখন সমাজতন্ত্রের ভরা মৌসুম। বিশ্বে গণতন্ত্রও সমাজমন্ত্রের মাঝে ঠাণ্ডা লড়াই। লেখক একজন গণতান্ত্রীক দেশের সচেতনতম সাংবাদিক ও রাজনীতিক হওয়াতে এই দুই রাজনৈতিক দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা তিনি ভ্রমণের সাথে সাথে তুলে এনেছেন।বার্লিন বুদাপেস্ট ও কস্কো, এই তিন নগরির সচেতন নাগরিকদের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বুঝতে চেয়েছেন সেই সময়ের সমাজতন্ত্রের আবদ্ধে গড়ে ওঠা নাগরিকদের চিন্তা ও চেতনার ধারা। তিনি তার পূর্ব ধারণার কারণে কখনো হোঁচট খেয়েছেন আবার কখনো পুলকিত হয়েছেন। ভ্রমণ কাহিনী হলেও এই গ্রন্থের ভাষা শৈলি সাহিত্যের মর্যাদার দাবিদার। কাব্যিক ভাব, অভিনব শব্দচয়ন আর প্রাঞ্জলভাষা প্রবাহ গ্রন্থটিকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। একটি উদাহরণ না দিলেই নয়, 'তিনি হাসছেন সেই মাপা হাসি, যেন স্মৃতির স্রোতের কল্লোলে অবগাহন করছেন। শোনা নয়, লাল কেল্লায় দেখেছি দিনান্তের সূর্যের ম্লান রশ্মির মত যৌবনের স্মৃতির হাসিতে প্রতিফলিত উত্তর তিরিশের রশ্মি।' এমন ভাষার ব্যবহারে মুগ্ধহয়ে পাঠ করতে করতে সেই সময়ের সমাজতন্ত্রীর রজনীতির গভীরে এমন ভাবে আর কখনো প্রবেশ করিনি। চমৎকার রচনাশৈলি ও তার দেখা ইউরোপের এই নিখুঁত বর্ণনা সেই ১৯৭২-৭৪ সময়ের। এখন সেই চেকোস্লোভাকিয়া আজ আর একদেশ নেই ভাগ হয়েছে চেক ও স্লোভাক নামে। দুই জার্মান এক হয়েছে । নেই জিডিআর নেই সোভিয়েত ইউনিয়ন । তবুও সমাজতন্ত্রী সেই দেশের মানুষের বিশ্বাস-মুক্তিচেতনা-প্রত্যাশা কেমন ছিল কৌতুহলি পাঠককে আনায়াসেই সেই কৌতুহল মেটাতে পারবে এই অমর গ্রন্থ-সময়ের ফসিল ।