Our User Product Reviews

চমৎকার একটি বই,, এটি পরে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য দেশে।

প্রথমেই বলে রাখি এটা একটা কিশোর উপন্যাস । তবে ঠিক গৎবাঁধা নিয়মের কোন কিশোর উপন্যাস নয় । সবচেয়ে আজব করার মতো খবর হল এই কিশোর উপন্যাসটি লিখতে লেখিকা রিজিয়া রহমানের সময় লেগেছে পনেরো বছরেরও বেশী সময় । আসলে নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি অসম্ভব রকম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে এ উপন্যাসটি শেষ করেছেন । জন্মের পর থেকে ৫০০ কোটি বছরের আবর্তনে আমূল বদলে গেছে আমাদের এ চিরচেনা পৃথিবী । এই বিশাল সময়ের মাঝে বদলে গেছে পৃথিবীর আবহাওয়া,এর ভৌগোলিক আকার-আয়তন,বদলে গেছে জলবায়ু , ঘটেছে বহু প্রাণীর বিবর্তন । এক কথায় বলতে গেলে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে “প্যালেওন্টোলজির” উপর ভিত্তি করে । প্যালেওন্টোলজি হল প্রাণীর বা উদ্ভিদের ফসিল বা জীবাশ্ম বিষয়ক বিজ্ঞান । পৃথিবীর ইতিহাস অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত । পৃথিবীর ভৌগোলিক আবহাওয়া,প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উপর ভিত্তি করে করা এসব শ্রেণীবিভাগের নানা স্তর বইটির নানা কাহিনীর পরতে পরতে লেখিকা তুলে এনেছেন খুব যত্ন করে, শিশু-কিশোরদের জন্য সহজ আর সাবলীল ভাষায় । যাদের প্যালেওন্টোলজি নিয়ে ঠিক ততটা ধারণা নেই এ কিশোর উপন্যাসটি ধীরে ধীরে তাদেরকে বিজ্ঞানের এই শাখাটার সম্পর্কে গল্পের ছলে পুরোপুরি না হলেও মোটামুটি একটা স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস । এবার প্যালেওন্টোলজি নিয়ে কিছু কথা বলি । আগেই বলেছি প্যালেওন্টোলজি জীবাশ্ম বিষয়ক বিজ্ঞান । এটা জিওলজি বা ভুতত্ত্বের একটা অংশ । পৃথিবীর বয়স নির্ধারণে এই প্যালেওন্টোলজির ভূমিকা অনস্বীকার্য । ভুতত্ত্ববিদরা আদিমকালের বিভিন্ন প্রাণী আর উদ্ভিদের জীবাশ্ম বা ফসিল খুঁজে বের করে তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন । এই গবেষণার সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে পৃথিবীর বয়স,পৃথিবীর ভুতাত্ত্বিক ইতিহাসের বৈচিত্র্যময় স্তরবিন্যাস এবং আরও অনেক কিছু । বাবলু নামের এক কিশোরের জীবনের নানা কাহিনী, তার চারপাশের মানুষজন এবং আরও বেশকিছু ঘটনার ঘনঘটায় ধীরে ধীরে কিশোর উপন্যাসের আঙ্গিকে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে প্যালেওন্টোলজির নানা রূপ । এর বেশী উপন্যাসের কাহিনীভেদ করলাম না । কারণ প্রতিটি উপন্যাস পড়ার আগেই পাঠকমনে জন্ম নেয় একটা চাপা উত্তেজনা । তাই উপন্যাসের বিষয়বস্তু কি তার কিছু ধারণা দিলাম মাত্র । তবে এই উপন্যাসের বিষয়বস্তুকে কীভাবে কাহিনীর পরতে পরতে সাজানো হয়েছে তার রহস্যভেদের গুরুদায়িত্বটা পাঠকের । তাই আগেভাগে এই গুরুদায়িত্বটা পালন করে ফেলাকে ঠিক সমীচীন মনে করছিনা । তাই পাঠকদের প্রতি একটাই আহ্বান, অজানাকে জানার আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়ুন । কথা দিচ্ছি, হতাশ হবেন না একদমই ।