User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভেতর ও বাহিরটা বুঝার জন্য ‘রাফকাট’ বইটি কাজে আসবে নিঃসন্দেহে। গতকাল শুরু করে আজ সকালে এসে শেষ হলো এই ঢাউস সাইজের বইটি। আমাদের সময়ের মিডিয়া ও ফিল্ম জগতের শ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে জানা, তার সংগ্রাম এবং স্বপ্নের সাথে পরিচিত হওয়া বেশ উপভোগ্য ঘটনা। বইটিতে রয়েছে ফারুকীর একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকার, কিছু কবিতা, একটি ছোট গল্প, কয়েকটি প্রবন্ধ এবং তার অনেকগুলো ছবি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সাংবাদিক সাজ্জাদ হুসাইন। বইটি ‘ঐতিহ্য’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সমকালের বড় শিল্পীদের অনেক সময়ই চিনতে ভুল করা হয়। এটা ঘটে সমকালকে ছাপিয়ে ব্যক্তির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার কারণে। আবার প্রস্তুত সময় তার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের বরমাল্য দিয়ে ভূষিত করতেও সমর্থ হয়। শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাসে আমরা দুটিই দেখি। কেউ কেউ তার সময়েই তার অবস্থান ঘোষণা করে যেতে পেরেছেন। আবার কারো কারো কাজ উপযুক্ত অডিয়েন্স পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে সাথে এটা আমাদেরও সৌভাগ্য তিনি তার সময়ে, আমাদের সময়ে তার অবস্থান শক্তভাবে জানাতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশের সিনেমা জগতকে দেশীয় পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাওয়ার পাইওনিয়ার হিসেবে তাকে শ্রদ্ধার আসনে রাখবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের নির্মাতারা। বলতে কেমন শুনায় আমি মাত্র গতবছর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রায় সবগুলো সিনেমা দেখে শেষ করেছি! টিভি নাটক সবগুলো না দেখলেও কয়েকটা দেখেছি। কিন্তু পুরো ছবি একটাও দেখার সৌভাগ্য হয়নি। গতবছর তার কিছু ইন্টারভ্যু পড়ে ছবিগুলোর দিকে বেশ আগ্রহী হলাম। প্রত্যেকটা ছবিই আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে এবং একেকটা থেকে অন্যটাতে যাওয়ার মাঝখানে যে বাংলা সিনেমার উন্নতি সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনুশোচনা বলবো না কারণ জীবনে কোন অনুশোচনা রাখতে চাই না তবে একটু কষ্ট ছিল যে পত্রিকার সমালোচনা বা রিভিয়্যু পড়ে অপিনিয়ন তৈরি করে রাখা নিঃসন্দেহে বড় ভুল ছিল। এ ভুল কাটিয়ে উঠতে পেরেছি বলে মনে করছি। যা দেখবো নিজের চক্ষু-মন দিয়ে দেখবো, যা বলবো নিজের চিন্তা দিয়েই বলবো। ফারুকীর একটা ছোট্ট কবিতা আমার বেশ ভালো লেগেছে। কবিতাটির নাম ‘প্রতিধ্বনি’। কথাগুলো হচ্ছে এমন- আমি বলি ‘একটা প্রেম দাও।’ প্রতিধ্বনি ফিরে আসে ‘একটা ফ্রেম দাও।’ ফ্রেমের সাথে তার প্রেমের সাক্ষর যেন এই ছোট্ট কবিতাটি। তিনি তার এ সম্পর্কে অটল থাকুন আমাদের এই প্রত্যাশা। তার একটি কবিতা ‘ভাত-কাক সম্পর্ক’ পাঠককে ভাবাবে। নারী-পুরুষের সম্পর্ককে ভাত-কাকের সম্পর্কের সাথে মেশানোর মেটাফরটা আকর্ষনীয় হয়েছে। ফারুকীর চোখ-মুখ যীশু খ্রিস্টের মতো। কথা বলেছেনও যীশুর মতো অনেক উদাহরণ দিয়ে, প্যারাবল মিশিয়ে, সমাজের সচল ভাষায়-প্রমিত নামী কোন অচল ভাষায় নয়। ভাষা নিয়ে তার সরল কথা-‘ভাষা কোন স্মৃতিসৌধের বেদির মতো অটল এবং স্থির নয়। ভাষা বহতা নদীর মতো-’ বইয়ের ব্যাক কভারে লেখা- ‘এই বইয়ে তাঁর শৈশব, কর্ম, কর্ম প্রেরণা, প্রেম, দাম্পত্য জীবন, রাজনৈতিকতাবোধ, ধর্মদর্শন, ভাষাতাত্ত্বিক বিতর্কসহ ব্যক্তিচরিত্রের বিভিন্ন দিক প্রতিফলিত হয়েছে।’ পড়া শেষ করে যথার্থই মনে হলো।
Was this review helpful to you?
or
রাফ কাট একটি সাক্ষাৎকার রচনা। এখানে মস্তফা সরয়ার ফারুকির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজ্জাদ হুসাইন।আর বইটি প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য থেকে। সাক্ষাৎকার পড়তে কার কেমন লাগে সেটা জানি না। কিন্তু আমার সাক্ষাৎকার পড়তে দারুন লাগে কারণ এক জন মানুষ কি খায় ,কি পরে,শিক্ষা, জীবনে কয়টা প্রেম করেছে, কতবার ছেঁকা খেয়েছে,জীবন বোধ, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি সবই জেনে ফেলা যায়। তো ফারুকি মানুষ যেমনই হন না কেন তার সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত রাফ কাট বইটি বেশ ভালো।আমি মজা পেয়েছি। সাক্ষাৎকার শুরু ফারুকির পরিচালক হিসেবে মিডিয়া জীবন শুরুর ঘটনা, শৈশবের কথা,মা- বাবার কথা ইত্যাদি নিয়ে। মজা পেলাম ফারুকির দাঁড়ি নিয়ে কথা উঠায়।বইটিতে ফারুকির দাঁড়ির কথা ঘুরে-ফিরে বেশ কয়েকবার এসেছে। দাঁড়ি রাখার গোপন রহস্য জানতে চাওয়ায় ফারুকি দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এক. দাঁড়ি রাখলে বয়স বেশি দেখায়( এক কালে ফারুকি মনে প্রানে নিজেকে বড় দেখাতে চাইতেন। এখন অবশ্য চান না)। দুই. মুখের চাপা ভয়াবহ রকমের ভাঙ্গা তাই সেটা ঢাকতেই দাঁড়ি রাখা। কথায় কথায় আসল সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা প্রেম এ। শুধু তিশার প্রেমেই পড়েন নি।প্রথম প্রেমে পড়েন ক্লাস এইটে পড়ার সময়। ক্লাস ফোরে পড়ুয়া মহল্লার এক পিচ্চি মেয়ে তার প্রথম প্রেমিকা। অবশ্য ফারুকির মতে, সেটা শুধুই ভালো লাগা ছিল। ফারুকির জীবনে এই প্রেম বহুবার বহুভাবে এসেছে।বহুবার বহুজনকে না পেয়ে কষ্ট পেয়েছেন।অদূর ভবিষ্যতে অন্য কারো প্রেমে পড়বেন না সেটার ও কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি। সরল স্বীকারোক্তি। কিন্তু শ্রদ্ধাবশত কারো নাম উল্লেখ করেন নি।ব্যাপারটা ভালো লাগলো। কারণ নাম-ধাম বলে বইটির কাটতি বাড়াতে পারতেন। যাই হোক,এই বইটি বের হওয়ার পর তিশার একটা মাইর ও যে নিচে পড়ে নি বোঝা যায়। কোন প্রেমিকার ভালো লাগবে প্রেমিকের বহু প্রেমের কথা শুনতে আর সেটা আমজনতাকে জানাতে। অবশ্য প্রেমিকা মহান কোন নারী হলে ভিন্ন কথা! তিশাকে খুশি রাখতে কিছু আহ্লাদি টাইপের কথাও ফারুকি বলেছেন। সেটা আর নাইবা উল্লেখ করলাম। এখন আসি সিনেমার কথায়।“ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার” ছবিটি একই সাথে প্রশংসিত এবং সমালোচিত। ছবিটি রিলিজ হওয়ার পর থেকেই আমার দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল।ছবির নাম একটু অদ্ভুত হওয়াতেই এত আগ্রহ ছিল। কিন্তু হলে বসে দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি। যাই হোক, গত ঈদ এ চ্যানেল এই তে ছবিটি দেখিয়েছিল।আমি মাত্র এক ঘণ্টার মতো দেখেছিলাম। বাকি অংশ দেখতে পারি নি কাঁড়ি কাঁড়ি বিজ্ঞাপনের কল্যাণে। আমার ধৈর্যে কুলায় নাই।আমি যত টুকু দেখেছি তাতে মোটামুটি লেগেছে। তো এই ছবি নিয়ে যে কারণে এত হইচই সেটা হল এখানে নাকি লিভ টুগেদার দেখানো হয়েছে। ব্যাচেলর ছবি টি নিয়েও নাকি অভিযোগ আছে যে সেখানে ফারুকি দেখিয়েছেন একটা ছেলে এক সাথে দুইটা তিনটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে। এইসব দেখিয়ে ফারুকি নাকি ছেলে-মেয়েদেরকে উৎসাহিত করছেন। প্রশ্নকর্তার এই প্রশ্নের জবাবে ফারুকি একটি জটিল উত্তর দিয়েছেন-“ এখন এখানে দুইটা প্রশ্ন –ডিম আগে না মুরগী আগে। সমাজ থেকে শিল্প নেয় নাকি শিল্প থেকে সমাজ নেয়? এটা কঠিন প্রশ্ন। দুইটা থেকেই দুইটা হয়। আমি সমাজ থেকেই নেই।আমি সমাজে যা দেখেছি তাই দেখিয়েছি। আবার আমারটা দেখে কেউ অনুপ্রাণিত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।আবার কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে যাবে-এই ভয়ে সমাজের কোন খারাপ দিক কি আমি দেখাবো না?” আরও বলেছেন,” ............অনুপ্রাণিত হবে- এইজন্য দেখাবো না?তাহলে তো শিল্প- সাহিত্য থেকে সব খারাপ কাজ দেখানো বাদ দিয়ে দিতে হবে। সিনেমায় প্রতিটি চরিত্র ভালো ভালো কথা বলবে, ভালো কাজ করবে এবং আমাদের ছবির নাম, সবার ছবির একটাই নাম হবে।কি জানেন তো? সবার ছবির নাম হবে –“ একটি ভালো ছবি”। “ আহা, চিন্তা করতেই ভয় লাগছে। শিল্প-সাহিত্য এ সব ভালো ভালো জিনিস থাকলে কত বোরিং হতো!! শিল্পসাহিত্য তো টক- মিষ্টি- ঝাল-তিতাই ভালো লাগে। যাই হোক, সকল সমালোচনার জবাব দিতে ফারুকি নাকি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটির ডিভিডির সাথে “ ওকে কাট “ নামে একটি ডকুমেন্টারি বেইজ ভিডিও ছবি জোড়া লাগিয়েছেন। এটা নাকি তার ওই মুহূর্তের রাগের রিঅ্যাকশন!! এই তথ্য আগে জানা ছিল না। বইটি পড়ে জানতে পারলাম। আপনারা কেউ দেখেছেন সেটা ? ফারুকির সাথে প্রথম আলো পত্রিকার উপ- সম্পাদক আনিসুল হকের বন্ধুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা কারো অজানা নয় কারণ ফারুকির বেশির ভাগ নাটক ,মুভির script রাইটার হচ্ছেন আনিসুল হক। তাই এটাই ধারনা করা স্বাভাবিক যে সেই সুবাধে প্রথম আলোর সাথেও ফারুকির ভালো সম্পর্ক। কিন্তু ফারুকির কথা ভিন্ন। তার মতে, আনিসুল হক বন্ধু হওয়াতে যে ট্রিটমেন্ট প্রাপ্য ছিল সেটা প্রথম আলো থেকে তিনি কখনও পান নি এবং তিনি হচ্ছেন প্রথম আলোর নিরপেক্ষতার বলি!!!! তাকে অবহেলা করলে প্রথম আলো যে নিরপেক্ষ এটা নাকি প্রমান করা সম্ভব হয় প্রথম আলোর পক্ষে!!! আমি ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে ধরতে পারি নি। রাফ কাট বইটির একটি বৈশিষ্ট্য হল এখানে যেসব টপিকস নিয়ে কথা বলা হয়েছে সেগুলো একটা সঙ্গতিপূর্ণ শিরোনামের আওতায় সাজানো হয়েছে। যেমন প্রেম নিয়ে আলোচনার শিরোনাম ঠিক এইরকম-“ আমিতো প্রেমে পড়ি নি, প্রেম আমার ওপরে......”। এই রকমই একটি শিরোনাম হল- “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়...”। ফারুকির নাটক-সিনেমা যারা দেখেছেন তারা সবাই জানেন যে সেগুলোতে অপ্রমিত ভাষা মানে করতেছি, খাইতেছি, করছি,খাইছি এই টাইপ ভাষার প্রাধান্য বেশী।এই ব্যাপার নিয়েও ফারুকি তীব্র সমালোচিত। যারা সমালোচনা করছেন তাদের মতে ,টেলিভিশন দেখে বাচ্চারা শেখে তাই প্রমিত ভাষা দিতে হবে। কিন্তু ফারুকির মতে, যদি ঢাকা শহরের সব মানুষ প্রমিত ভাষায় কথা বলে তাহলে চরিত্রের ভাষা ও প্রমিত হবে। এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো।আর তাই তার নাটক -সিনেমায় করতেছি, খাইছি এই টাইপ ভাষা ব্যবহার করা হয়। কথায় কথায় মনপুরা, মেহেরজান, মনের মানুষ, বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ড, বিজ্ঞাপন , ঈশ্বর, ছবিয়াল ইত্যাদি সহ আরও নানা প্রসঙ্গ এসেছে।এগুলো নিয়ে লিখতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে।বলতে ভুলে গেলাম এক্সট্রা হিসেবে এই বইটিতে সাক্ষাৎকার শেষে ফারুকির লেখা কিছু কবিতা, একটি ছোট গল্প, একটি প্রবন্ধ,আর পার্সোনাল কিছু ফটো আছে।অনেকটা একই অঙ্গে বহু রুপ এই টাইপ ব্যাপার!! তো যারা বইটি পড়তে চান তাড়াতাড়ি কিনে ফেলেন। আর এটা আমার লেখা জীবনের প্রথম প্রায় বুক রিভিউ!!!!!!