User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
১ স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের কথা কবি জাহানারা পারভীন তুলে ধরেন তাঁর ‘নিদ্রাসমগ্র’-এ। আমরাও পাঠ নেই কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতায় ব্যর্থতার আর অনুতাপের সুর: ‘দিঘি থেকে আমার শ্যাওলা তুলে আনার কথা ছিল আমি তা আনতে পারিনি। সেই অনুতাপ এখনো বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়ে ফুটে আছে ত্বকে।’ (দিঘিকাব্য, নিদ্রাসমগ্র, জাহানারা পারভীন) প্রতিটি ব্যর্থতা জন্ম দিতে পারে নতুন উদ্যেগ। আর সেই নতুন কণ্ঠই শুনি কবির কণ্ঠে- ‘আমি পুরাতন কুয়োর জলে সঁপে দিয়েছি অনিদ্রার সব পাথর’ (নিদ্রানামা, নিদ্রাসমগ্র, জাহানারা পারভীন)। ২ বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতি কবির ক্ষোভ ধরা পড়ে। কোথাও পারিবারিক দ্বন্দ্বকেও কবিতায় তুলে আনেন। ‘পিতৃতান্ত্রিক মেঝেতে বসে আমাদের মায়েরা সবজির ছলে কাটেন নিজেদের আয়ু ...’ (পারিবারিক, নিদ্রাসমগ্র, জাহানারা পারভীন)। ‘বেহুলাকথন’ ও ‘কাজলরেখা’ কবিতায় তুলে আনতে চেয়েছেন নারীর বিপরীতে নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ। কখনো কখনো তুলেছেন সময়ের প্রয়োজনীয় বিনীত স্বর, চেয়েছেন অসময়ের ক্ষত নিরাময়ের ঔষধ। ‘.... আহত শালিকের ভাঙা ডানা ফেরি করে বেড়ায় নিঃস্বার্থ কবিরাজ, ওষধি গাছেরা আজ অনশনে যাবে। আজ তাই মলম চাই, চাই সুখী মানুষের জামা।’ (সুখী মানুষের জামা, নিদ্রাসমগ্র, জাহানারা পারভীন)। খুব বেশি মোহিত করে ‘সেই থেকে খোলা রাখি গুড়ের বয়াম’ কবিতার কয়েকটি লাইন- ‘তখন আকাশে মৃত জ্যোৎস্নার শোক, বাতসের ঘায়ে অজস্র পাকাবেল ঝরে পড়ে টিনের চালে, সে কী বিকট শব্দ সমবেত পায়ের আওয়াজে কেঁপে উঠছিল পাড়া। কারো কিছুই করার ছিলো না, একদল পিঁপড়ে শুধু পা বেয়ে উঠে গিয়েছিল রাজাকারের শিশ্নে।’ ৩ কিছু কিছু কাজ যেমন খুব অসাধারণ মনে হয়েছে। তেমনি কোথাও কোথাও পেয়েছি ভাষা ও ভাবের পতন। যেমন- ‘ডালিমের দানার মতো মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে কাঁকড়া মন শুষে নেয় স্যাভলনের ঘ্রাণ।’ (গাবফুলের গ্রাম, নিদ্রাসমগ্র, জাহানারা পারভীন)। ডালিমের দানার উপমার পর স্যাভলনের ঘ্রাণ আমার অস্বস্ত লেগেছে। ‘কোনো কোনো ক্ষমা পাপের চেয়েও দীর্ঘ’ কবিতার শুরু থেকে বিস্তার অসাধারণ লাগে আমার। মুগ্ধতায় বুদ হতে হতে হতাশ হই শেষ লাইনে। আপস মেনে নেয়া যায় না। ‘পরাজিত উইয়েরা কেটেছে গ্রন্থের প্রতিটি অক্ষর, আমরা তাদের সঙ্গে বসে চা কফি খাচ্ছি.....’ (কোনো কোনো ক্ষমা পাপের চেয়েও দীর্ঘ, নিদ্রাসমগ্র, জাহানারা পারভীন)। জাহানারা পারভীন ‘প্রস্থানের আগে’ কবিতায় নেন রুখে দাঁড়ানোর পাঠ: ‘আর কোন পতনের গল্প নয়, এবার শুধু রোদের প্রসঙ্গ/ দীর্ঘশ্বাসকে ঝাটা বানিয়ে ঝাড়– দেব পৈত্রিক ভিটে,’ অথচ ‘অপনা মাঁসে হরিণা বৈরি’ কবিতায় তিনি আপসের সুরে বলেন, ‘সেদ্ধ ডিমের কুসুম হয়ে বসে আছি প্লেটে’। ৪ কবিতার দুঃসময়ে কবি জাহানারা পারভীনের ‘নিদ্রাসমগ্র’ থেকে পেয়েছি চিন্তার খোরাক। কিছু অসাধারণ শব্দগুচ্ছ বোধ হয়ে করেছে বিনোদিত। তাঁর পরবর্তী কাজ আমাদের কতটুকু দগ্ধ করতে পারে, আছি তার অপেক্ষায়।