User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথের শেষ বয়সের সাহিত্য-প্রয়াস ও তাঁর নানা সামাজিক-রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড দর্শন-বিচারে বলেছিলেন, বাঙালির বয়স যত বাড়ে, তত বেশি গোঁড়ামির বেড়াজালে আবদ্ধ হলেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার পুরো বিপরীত চরিত্রের। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের বয়স যত বেড়েছে, ততই তিনি উদার হয়েছেন, হয়েছেন প্রগতিমুখীন। কোনো ধরনের ছকের ছদ্মাবরণে নিজেকে বিন্দুমাত্র আড়াল করেননি। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের এক প্রাচ্যচিত্তে প্রতীচ্য প্রতীতি গ্রন্থের অন্তর্ভুত ৫টি প্রবন্ধে রবীন্দ্র-মানসের নানা দিকের তেমনি সব ভাবনারই স্ফুরণ ঘটেছে যেখানে বিষয়সম্পৃক্ত বিষয়ে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে একেবারেই অদ্বিতীয় ও একক তিনি। আলোচ্য বইয়ে, রবীন্দ্রনাথের ভাবনার জগৎটিকে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নতুনতর চিন্তায় উপস্থাপন করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ ও পাশ্চাত্য সাহিত্য’ প্রবন্ধে হাবিবুর রহমান তুলে ধরেছেন নানা উদাহরণ ও সূত্রের বরাতে রবীন্দ্রনাথের ইংরেজিসহ পাশ্চাত্য সাহিত্য পঠনপাঠনের বিশাল ব্যাপ্তি, পাশাপাশি তাঁর সে সবের পাঠোত্তর মূল্যায়নের চালচিত্রটিকে। এর পরিচয় পাওয়া যায়, রবীন্দ্রনাথ যখন শেলি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘শেলিকে তাঁর জীবনকালে ও পরবর্তীকালে তাঁর দেশের লোকে নাস্তিক বলে অপবাদ দিয়েছে। তার কারণ এই যে প্রচলিত ধর্মতন্ত্র ও পুরোহিততন্ত্রকে তিনি আঘাত করেছেন। কিন্তু তাঁর মধ্যে যে গভীর একটা ধর্মের তৃষ্ণা ছিল, একটা আধ্যাত্মিক উপলব্ধি ছিল, সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ করা যেতে পারে না।’ আমরা জানি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কালের রীতি অনুযায়ী শৈশবেই রঙ-তুলি হাতে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁর আনুষ্ঠানিক অভিযাত্রার সূচনা একেবারেই শেষ বয়সের প্রান্তে এসে। লেখক ‘রবীন্দ্রনাথ ও পাশ্চাত্য চিত্রকলা’ প্রবন্ধের ভেতর দিয়ে তুলে ধরেছেন এহেন রবীন্দ্রনাথকে পাশ্চাত্যের চিত্রকলা রীতি কতখানি প্রভাবিত করেছিল, তিনি কতটা এই রীতির পক্ষে ও বিপক্ষে ছিলেন, চিত্রকলা সম্পর্কে তাঁর ভাবনা, কীভাবে তিনি এই রীতিটির সংস্পর্শে আসেন ইত্যাদি দিক। ‘রবীন্দ্রনাথ ও পাশ্চাত্য সংগীত’ শীর্ষক প্রবন্ধে হাবিবুর রহমান যেমন বাল্যে ও কৈশোরকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথের পাশ্চাত্য সংগীতের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শগত আবহে আসার বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন, তেমনি খোদ ইউরোপের মাটিতে বসবাস করার সময় কীভাবে সেই সাংগীতিক ধারাটি তাঁকে প্রভাবিত করেছিল, দিয়েছেন তার বিবরণও। ‘রবীন্দ্রনাথ ও ইংরেজের আইন’ শীর্ষক প্রবন্ধ এই গ্রন্থের সবচেয়ে রসাত্মক রচনা। নিজে বিচারপতি বলেই তাঁর চোখে, ইংরেজদের শাসন কায়েম হওয়ার পর তৎকালীন ভারতবর্ষীয় সমাজে ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল, সেটা তুলে ধরেছেন বেশ রসাত্মক ভঙ্গিতে। ‘এক প্রাচ্যচিত্তে প্রতীচ্য প্রতীতি’ এই গ্রন্থের শেষ নিবন্ধ। রবীন্দ্রনাথের জটিল এক মানসগত পরিক্রমা বা বিবর্তনের ধারারই প্রতিফলন ঘটেছে এই নিবন্ধে। ভিক্টোরিয়াকে ভারতশ্বেরী ঘোষণা দিয়ে দিল্লিতে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, ১৮৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে যে রবীন্দ্রনাথকে তার বিরোধিতায় সোচ্চার হতে দেখা যায়, কালক্রমে সেই তাঁকেই ইংরেজ শাসন সম্পর্কে নানারূপে, নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। কখনও সমন্বয়বাদীর, কখনো-বা তীব্র প্রতিবাদীর ভূমিকায়। ইংরেজ শাসন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যটি খুবই প্রণিধানযোগ্য, যেখানে তিনি বলেন, ‘জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলাম, য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ এই সভ্যতার দানকে। আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।’ তাঁর দূরপ্রসারী অন্তর্ভেদী এই বক্তব্যের প্রতিফলনই আমরা লক্ষ করি কবির মৃত্যুর পর বছর কয়েকের ব্যবধানে বৃটিশ রাজের ভারতবর্ষের মাটি থেকে চির বিদায়ের ঘটনার ভেতর দিয়ে। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান লেখেন একজন প্রদীপ্ত তরুণের মতো। না হলে এক নিঃশ্বাসে এই বই পড়ে শেষ করতে পারা গেল কী করে! আমরা বহুল প্রচার কামনা করি এ বইয়ের।