User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
বইগুলো খুব ভালো এবং সার্ভিসও আলহামদুলিল্লাহ ভালো
Was this review helpful to you?
or
V
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনী সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত বাহিনী। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা এটি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব বাহিনী ছিলো, কিন্তু মূলত গঠন কাঠামো অনুসারে এটি ছিলো মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গড়া বাহিনী যাদের কাজ ছিলো মূলত পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করা (অনেকটা বর্তমান র্যাবের মতো)। লেখক বইটিতে মূলত রক্ষীবাহিনীর গঠন প্রক্রিয়া, সমালোচলিত হওয়ার কারণগুলো এবং পরবর্তীতে বিলুপ্তি নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। যুদ্ধের পর প্রস্তাবিত মিলিশিয়া বাহিনী গঠন প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অমুক্তিযোদ্ধারা এসে পিলখানায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে মুক্তিযোদ্ধা সৈন্যদের নিয়ে রক্ষীবাহিনী গঠিত হয় আর বাকি আগ্রহী মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা আর সাবেক ইপিআর সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বিডিআর)। যুদ্ধের পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত এ দেশে সৈনিকদের পোষাক সরবরাহ করতে না পেরে ভারত সরকারের সহায়তায় স্বল্পদামী জলপাই রংয়ের পোষাক সরবরাহ করে রক্ষীবাহিনীকে দেয়ার পর বামপন্থী দলগুলো সমালোচনা করে বলে জলপাই রংয়ের পোষাকে ভারতীয় সেনারা এদেশে ঢুকে পড়ছে। রক্ষীবাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তা অানা হলে তাতে গুজব হালে পানি পায়, আর কিছুদিন পর রক্ষবাহিনী কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণে পাঠানো হলে সমালোচনা চরম রূপ ধারণ করে। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়, তা নিয়ে সমালোচনা হয়নি। যখন সিরাজ সিকদারসহ সর্বাহারা পার্টি, জাসদ গণবাহিনী অার নকশালপন্থীরা বিভিন্ন থানা আক্রমণ করে পুলিশ হত্যা করছিলো আর বিভিন্ন শ্রেণীশত্রু খতমের নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা আর সাংসদদের হত্যা করছিলো, তখন রক্ষীবাহিনী হয়ে উঠেছিলো পুলিশসহ সাধারণ মানুষের ভরসার নাম। এ কারণে বামপন্থী দলগুলোর চক্ষুশূল ছিলো রক্ষীবাহিনী। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় অাওয়ামী লীগের নেতারা অবৈধ জায়গা দখল করলে সেখানে রক্ষীবাহিনী অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করায় অাওয়ামী লীগের অনেক নেতারই সমালোচনার বিষয়বস্তু হয় রক্ষীবাহিনী। বাংলাদেশে প্রথম কোন বাহিনীর নাম বাংলায় নামকরণ করা হয় রক্ষীবাহিনী, যার দেখাদেখি পরে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনীর বাংলায় নামকরণ করা হয়। লেখক ব্যাক্তিগতভাবে এ বাহিনীর গঠন থেকে বিলুপ্তি পর্যন্ত যুক্ত থাকায় অনেক ভিত্তিহীন সমালোচনার জবাব দিয়েছেন, আর অনেক অজানা ব্যাপার প্রকাশ করেছেন। এক কথায় তথ্যবহুল একটি বই এটি।
Was this review helpful to you?
or
কিছু কিছু প্রক্রিয়া বা ঘটনা আছে, যা সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পরও আলোচনায় বারবার ফিরে আসে। বিতর্ক চলে দশকের পর দশক। এই বিতর্কের প্রধান কারণ হলো, ওই প্রক্রিয়া বা ঘটনার পক্ষ-বিপক্ষ ছিল এবং তা পরবর্তী সময়েও বহাল আছে। আমাদের জাতীয় জীবনে এমন একটি বিষয় হলো জাতীয় রক্ষীবাহিনী। এই বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল, এর কার্যকলাপ নিয়ে অভিযোগ ছিল এবং এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে বিতর্ক ছিল। রক্ষীবাহিনী বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ৩৮ বছর হতে চলল। কেন আলোচনার কেন্দ্রে বিষয়টি বারবার ফিরে আসে? এর উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ওলট-পালটের মধ্যে, জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে এবং অবশ্যই জাতির সামগ্রিক মনস্তত্ত্বের মধ্যে। সম্প্রতি ‘প্রথমা প্রকাশন’ আনোয়ার উল আলমের লেখা একটি বই প্রকাশ করেছে, নাম রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা। এ প্রজন্মের যাঁরা সত্তরের দশকের প্রথম বছরগুলো সম্পর্কে জানেন না, বা অন্যের কাছে শুনে শুনে ভাসা ভাসা একটা ধারণা রাখেন, তাঁদের ওই বিশেষ সময়টা বুঝতে এই বই কিছুটা সাহায্য করতে পারে। বইটিতে এমন কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে, যা আগে হয়তো কেউ বলেননি। লেখকের একটা সুবিধা ছিল, তিনি রক্ষীবাহিনীর জন্মলগ্ন থেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এই বাহিনীতে কাজ করেছেন শেষ অবধি। তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও পর্যালোচনা বইটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ইতিহাসের একটা পর্বকে তিনি তাঁর মতো করে উন্মোচিত করেছেন, এ জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে স্মৃতিচারণামূলক লেখা হলেও এটা নির্ভেজাল ইতিহাস হয়ে উঠতে পারেনি। যাঁরা ওই সময়ের মানুষ, তাঁরা বইটি পড়লেই লেখকের বিশেষ একটি রাজনীতির প্রতি পক্ষপাত লক্ষ করবেন। লেখক ঠিক নির্মোহ হতে পারেননি। লেখক রক্ষীবাহিনী গঠনের শুরুর পর্বটা পুরোপুরি বলেননি। রক্ষীবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য লেখক ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল এস এস উবানের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ধন্যবাদ জানান। কিন্তু উবানকে ছাড়া রক্ষীবাহিনীর হয়তো জন্মই হতো না। তিনি ফ্যান্টমস অব চিটাগং-দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তরিত লিখেছেন। আগ্রহী পাঠক পড়ে নিতে পারেন। রক্ষীবাহিনী গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে সচরাচর যে প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়, সেগুলো হচ্ছে: ১. মাত্র ১২ হাজার লোকের জন্য একটি আলাদা বাহিনী তৈরি না করে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ জাতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে তাদের কি নিয়োগ দেওয়া যেত না? রক্ষীবাহিনীর কাজের যে পরিধি উল্লেখ করা হয়েছে, তা তো নিয়মিত পুলিশ বাহিনীর কাজ। সেটি কেন করা হলো না? ২. শেখ মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তারচেয়ে তাঁর বড় পরিচয় ছিল, তিনি নতুন রাষ্ট্রটির প্রধান স্থপতি, ‘জাতির পিতা’। মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পুলিশ বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর কাছে দায়বদ্ধ ছিল। সশস্ত্র বাহিনীও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। সে ক্ষেত্রে আর একটি বাহিনী তাঁর ব্যক্তিগত কমান্ডে রাখার কী যুক্তি থাকতে পারে? অন্য বাহিনীগুলোর ওপর কি তাঁর কোনো আস্থা ছিল না? ৩. মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের একটি পাঁচদলীয় উপদেষ্টা কমিটি ছিল। এই কমিটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও ন্যাপ (মোজাফ্ফর), ন্যাপ (ভাসানী), কমিউনিস্ট পার্টি (মণি সিংহ) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস (মনোরঞ্জন ধর) অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই কমিটি তখনো কাগজে-কলমে বজায় ছিল। একটি নতুন বাহিনী তৈরি করার জন্য যে ধরনের জাতীয় ঐকমত্য দরকার, তার প্রয়াস লক্ষ করা যায়নি। উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গেও কোনো রকম আলাপ-আলোচনা হয়নি। রক্ষীবাহিনী গঠন করায় এর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু থেকেই লক্ষ করা যায়। রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পান, তাঁদের হাতে অধিকতর উন্নতমানের অস্ত্র, সাজসরঞ্জাম ইত্যাদি প্রচার ছিল। সুযোগ-সুবিধা ও সাজসরঞ্জামের দিক দিয়ে সেনাবাহিনীতে ক্ষোভ ছিল অনেক। লেখক আনোয়ার উল আলম বেশ বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গেই দেখাতে পেরেছেন, এই প্রচারের কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল না। তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে রক্ষীবাহিনীর বাজেট ছিল মাত্র নয় কোটি টাকা। পক্ষান্তরে সেনাবাহিনীর বাজেট ছিল ৯২ কোটি টাকা, যা পরে বাড়িয়ে ১২২ কোটি টাকা করা হয়েছিল। সুতরাং সম্পদের অপ্রতুলতার দোহাই দিয়ে সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এত অল্প বাজেটে আরেকটি বাহিনী গড়ে তোলার কী যুক্তি থাকতে পারে, যদি না এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে? জনগণের মনে রক্ষীবাহিনী সম্বন্ধে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, তাকে চীন-পাকিস্তান ও স্বাধীনতাবিরোধীদের অপপ্রচার বলে যে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে, তা নিতান্তই সরলীকৃত ও খোঁড়া যুক্তি মনে হয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত জিম্মায় পৃথক একটি নিরাপত্তা বাহিনী রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন প্রতীতি জন্মেছিল যে ক্ষমতাসীন দল এই বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। একটা প্রশ্ন স্বভাবতই উঠতে পারে, রক্ষীবাহিনীর কোনো সামাজিক উপযোগিতা কি ছিল? ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে এই বাহিনীকে যখন সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণের সিদ্ধান্ত হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় যখন রক্ষীবাহিনী বিলুপ্ত হয়ে যায়, তার পরে কি কখনো মনে হয়েছে যে রক্ষীবাহিনীকে টিকিয়ে রাখাটা খুব জরুরি ছিল? আলোচনা থেকে আমি একটা জিনিস স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে চাই যে আমি কখনোই একটি শক্তিশালী ও বড় সেনাবাহিনী রাখার পক্ষে সাফাই গাইছি না। আমি নীতিগতভাবে একটা বড় ও স্থায়ী সেনাবাহিনী ‘প্রতিপালন’ করার বিরোধী। বাংলাদেশের জন্য ছোট্ট একটা সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থাকালীন সরকারকে সাহায্য করার জন্য রাখা যেতে পারে। প্রয়োজনে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে প্রয়োজনের সময় তাদের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। দুঃখের বিষয়, গত ৪২ বছরেও আমাদের দেশে কোনো ‘জাতীয় নিরাপত্তা নীতি’ তৈরি হয়নি। যে কাজগুলো করার জন্য কথিত রক্ষীবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল একটি পেশাদার পুলিশ বাহিনীর কাজ। একটা সংগঠিত, পেশাদার ও নাগরিকবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনের চেষ্টা না করে রাষ্ট্রের অভিভাবকেরা যে ভুলটি করেছিলেন, পুরো জাতি আজ তার মূল্য দিচ্ছে। আনোয়ার উল আলমের বইটির একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এটা পড়লে মনে হয় তৎকালীন সরকারের কোনো মুখপাত্র একটা বড়সড় বিবৃতি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কে কোথায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন, তার বিস্তারিত ফিরিস্তি আছে বইটিতে এবং সন্ত্রাস দমনে রক্ষীবাহিনীর প্রয়াসের বিস্তারিত বিবরণ আছে। কিন্তু এই বর্ণনাগুলো একপেশে। যাঁরা আওয়ামী লীগের সদস্য নন, তাঁদের হত্যা করার লাইসেন্স কে দিল? তাঁদের কারও নামটি পর্যন্ত আলম সাহেব তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। সিরাজ শিকদারের উল্লেখ আছে যদিও অন্য একটি প্রসঙ্গে। আর তা হলো, এ ব্যাপারে রক্ষীবাহিনীর কোনো দায় নেই। সিরাজ শিকদার ছিলেন একজন ‘তারকা খ্যাতিসম্পন্ন সন্ত্রাসী’। আমি উল্লেখ করতে চাই সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীদের আমি উল্লেখ করতে চাই সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীদের কথা, যাঁরা ওই সময় নানাভাবে সরকারি দল কিংবা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন। এখানে আমি কয়েকজনের কথা উল্লেখ করতে চাই। স্বাধীন বাংলাদেশে সন্ত্রাসের প্রথম বলি ছিলেন মুন্সিগঞ্জের দোহার থানার কৃষক লীগের নেতা সিদ্দিক মাস্টার। ’৭২-এর নভেম্বরে তাঁকে খুন করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলা জাসদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদত হোসেন বাদল ’৭৩-এর ১০ জানুয়ারি নিহত হন। ২৬ মে নরসিংদীতে আলাউদ্দিন ও মোমেন নিহত হন। সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বোরহানউদ্দিন রোকনকে খুন করা হয়। ’৭৪-এর ৩ ফেব্রুয়ারি জাসদের জাতীয় কমিটির সহসভাপতি মোশাররফ হোসেনকে যশোরে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের নেত্রী রওশন জাহান সাথীর (বর্তমানে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য) বাবা। রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের অনেককেই পিটিয়ে বা গুলি করে হত্যা করেন। রক্ষীবাহিনীকে অলিখিত ইমিউনিটি দেওয়া হয়েছিল। আলম সাহেব এই কথাগুলো লেখেননি। তার পরও বলব, এই বইতে কিছু সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে, স্বচ্ছতার প্রয়োজনে যা জানানো দরকার ছিল। যেমন টাঙ্গাইলে লতিফ সিদ্দিকী আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ি দখল করেছিলেন কিংবা আমির হোসেন আমু এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ব্যক্তিগত শত্রুকে শায়েস্তা করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রক্ষীবাহিনীকে দিয়ে অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। রক্ষীবাহিনী অবশ্য ফাঁদে পা দেয়নি, বরং সত্য উদ্ঘাটন করেছিল। কিন্তু অপরাধীদের কোনো রকম বিচার হয়েছিল বলে আমরা জানি না। ক্ষমতাসীনদের এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আজও বজায় আছে। রক্ষীবাহিনীর সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, তাকে ক্ষমতাসীন ‘রেজিম’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি বাহিনী হিসেবে পরিচিত হতে হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ ছিল, এর সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সাধারণ শর্তগুলোও পূরণ করেননি। অবশ্য এই অভিযোগ অতীত ও বর্তমানের সব বাহিনীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা বিপ্লবের নামে বিভিন্ন বাহিনী সম্পর্কেও। আমাদের দেশে নিরাপত্তার কাজে সম্পৃক্ত, এমনকি সিভিল প্রশাসনের জন্যও অতি জরুরিভাবে মানবাধিকার-সম্পর্কিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্টি হওয়া সিভিল প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এদের সংস্কারের তেমন প্রয়াস এ যাবৎ লক্ষ করা যায়নি। ফলে যা হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, নাগরিকেরা স্বাধীনতা পাননি। মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক। [email protected]