User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
“জোছনা ও জননীর গল্প” হুমায়ুন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনন্য সৃষ্টি। সহজ ভাষায় লেখা এই উপন্যাসটি যুদ্ধের ভয়াবহতা, ভালোবাসা ও মানবিকতার গভীর রূপ তুলে ধরে। লেখকের কাহিনি বলার দক্ষতা পাঠককে মুগ্ধ করে এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে ও অনুভব করতে এটি অবশ্যপাঠ্য। রকমারি থেকে সহজেই সংগ্রহ করুন!
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্প - হুমায়ুন আহমেদ অমর সৃষ্টি।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদের সেরা এক সৃষ্টি "জোছনা ও জননীর গল্প"। ৭১ এর ইতিহাস ভিত্তিক আবেগঘন এক উপন্যাস। সবার উচিত বইটি সংগ্রহে রাখা।
Was this review helpful to you?
or
It's the most beautiful book I've ever read.
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া সেরা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। আমার মত সাধারন মানুষদের জীবনে মুক্তিযুদ্ধ কি রূপে এসেছিল, সহজেই বুঝা যায় বইটি পড়লে।
Was this review helpful to you?
or
খুবই ভালো...?
Was this review helpful to you?
or
সত্য, সহজ ও সুন্দর করে লেখা মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সবাই পড়বেন।
Was this review helpful to you?
or
সবার জন্য অবশ্যপাঠ্য একটি বই। ❤️❤️❤️
Was this review helpful to you?
or
it's an amazing book as HUMAYUN AHMED was an amazing novelist..I've enjoyed it very much..
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযদ্ধভিত্তিক লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা একটি বই। হুমায়ুন আহমেদ লেখা সেরা বইগুলোর মধ্যে জোছনা ও জননীর গল্প বইটি উপরের সারিতেই থাকবে।
Was this review helpful to you?
or
Best.
Was this review helpful to you?
or
good book
Was this review helpful to you?
or
This are good
Was this review helpful to you?
or
সেরা সেরা সেরা।
Was this review helpful to you?
or
this book is real deal
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
Pleased
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
বইটার অনেককিছুই আমার কাছে ভালো লাগেনি। যেমন: তকদির ও তাওয়াক্কুলের ভুল ব্যাখ্যা, ন্যাকা ন্যাকা প্রেম ইত্যাদি।
Was this review helpful to you?
or
Perfect ?
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি প্রতিটি তরুণের একবার হলেও পড়া উচিৎ! বিনম্র শ্রদ্ধা লেখকের (হুমায়ূন আহমেদ) প্রতি। ❤️
Was this review helpful to you?
or
sera
Was this review helpful to you?
or
Nice book
Was this review helpful to you?
or
Excellent service
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়েভালো লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
খুবই চমৎকার একটা বই৷
Was this review helpful to you?
or
one of my favourites novel.
Was this review helpful to you?
or
ok
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ!!!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ুন আহমেদ এর সেরা বইগুলোর একটি।
Was this review helpful to you?
or
Ah!!!!!!!!!!Masterpiece এখানে ৫ স্টার না থেকে যদি ১০ থাকত আমি মনে হয় তাই দিতাম extremely recommended অ্যান্ড eternally grateful to হুমায়ূন স্যার to make মুক্তিযুদ্ধ a interesting things to me
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ছিল জোছনা। তিনি জোছনাকে কেন্দ্র করে অনেক গানও লিখেছেন। তার কাছে জোছনা মানেই আবেগ, ভালোবাসা। অসাধারণ একটা উপন্যাস জোছনা ও জননীর গল্প ?
Was this review helpful to you?
or
excellent
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযাদ্ধার প্রেক্ষাপটে অসাধারন একটি বই
Was this review helpful to you?
or
WORTH EVERY PENNY!
Was this review helpful to you?
or
Very large book which was narrated by an amazing story teller
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
My favourite book
Was this review helpful to you?
or
অসম্ভব সুন্দর একটি উপন্যাস।প্রতিটা বাক্যই মনমুগ্ধকর।হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
এককথায় অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধ দেখলাম।
Was this review helpful to you?
or
এ যে কি অসাধারন... লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
Was this review helpful to you?
or
it is the best!!
Was this review helpful to you?
or
⭐⭐⭐⭐⭐
Was this review helpful to you?
or
Its a nice book about the war in 1971
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাসের একটি হল ' জোছনা ও জননীর গল্প' ।
Was this review helpful to you?
or
#Book_Review জোছনা ও জননীর গল্প লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ ক্যাটাগরিঃ উপন্যাস(ইতিহাস নির্ভর) জোছনা ও জননীর গল্প মূলত একটা উপন্যাস। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ইতিহাস নিয়ে লেখা। লেখক বইটির ভূমিকায় বলেছেন যে, উপন্যাসে বর্ণিত প্রায় সব ঘটনাই সত্য।লেখকের অভিজ্ঞতাও উঠে এসেছে উপন্যাসে। বইটিতে লেখক মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এমন সব ঘটনার উল্লেখ করছেন যা অন্য কোনও লেখকের বইতে পাওয়া যায় না। এই বইয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মমতার পরিচয় যেমন পাওয়া গেছে, তেমনি মুক্তিবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ মিশনের কথাও রয়েছে। আবার রয়েছে বিদেশিদের ভূমিকার কথা। ভারতীয় বাহিনির যুদ্ধকালীন সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতেও লেখক ভুলে যান নি।চরম অনিশ্চয়তায় পূর্ণ উপন্যাসের শেষে রয়েছে দেশ বিজয়ের অসীম আনন্দ।
Was this review helpful to you?
or
"Jochna O Jononir Golpo is a novel by Humayun Ahmed. The translated copy is named as ’ A tale of moonlight and mother’, published in February 2004. The novel is based on the Liberation War of Bangladesh. In the novel, by means of a captivating fictional story that skillfully includes various historical figures and many true incidents as well as the author's own personal experiences. Jochna O Jononir Golpo was translated into English by Roger Gwynn. It is considered one of the best novels based on the Liberation War of Bangladesh. The story of josna o jononir golpo by Humayun Ahmed the novel begins in the month of February 1971, when the Arabic teacher of Nilganj High School, Mawlana Irtazuddin went to stay with his younger brother Shahid and his family in Dhaka. Then the writer narrates various exquisite stories of the characters. He describes how Irtazuddin became a supporter of the Liberation War of Bangladesh, swearing not to perform Jummah Salat until Bangladesh become independent. At last, he was shot by the Pakistani Military. "
Was this review helpful to you?
or
এই উপন্যাসটি আসলে অনেকগুলো মানুষকে নিয়েই লেখা, এরমধ্যে আমার কাছে শাহেদ-আসমানী জুটি আর নাইমূলের সাথে রফিকের চরিত্রটি বেশ ভাল লেগেছে। ৫২৮ পৃষ্ঠার বইটি শুরু করতে না করতেই শেষ হয়ে গেল। হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন জাদুকরী মানুষের নাম যিনি অনায়াসে একটি মানুষকে নিজের জগতে হারিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। মুক্তিযাদ্ধাদের উপর অনেক বইপত্র, দলিল দস্তাবেজ আর পত্র পত্রিকা ঘেটে এই বইটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি উপন্যাস বানিয়ে আপনি আসলেও স্বার্থক হয়েছেন স্যার।
Was this review helpful to you?
or
onk shundor boi..
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমদের লেখাগুলোর মধ্যে এই লেখাটি তার অনবদ্য শ্রেষ্ঠ একটি সৃষ্টি। যার নির্মান নিয়ে তার ভূয়সি প্রশংসা করা যেতে পারে। এ বইটা আমার কাছে এতোটা চমৎকার লেগেছে যে আমি বলব এটি তার, মাস্ট রিড একটা বই। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা এই বইটি একটি ইতিহাসের বই না একটি উপন্যাস বটে , কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আপনাকে সুন্দরভাবে ধারণা দিবে। যা আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আপনার আগ্রহ বাড়িয়ে দেবে। আমাদের যুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের ইতিহাস সমন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। এই বইটি তরুণ প্রজন্ম যেন অবশ্যই পড়ে সেই অনুরোধ জানাই। ইতিহাসের আদলে উপন্যাস তৈরি করে এতো সুন্দর করে যে উপন্যাস লেখা যায়, তা আসলেই একটি মাস্টারপিস।
Was this review helpful to you?
or
সত্যিই বইটি মুগ্ধ করার মতো।জ্ঞ্যানের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য বইটি যথেষ্ট উপযোগী।শুধু এই বিষয়ের ছাত্র না, সবাই এই বইটি সমানভাবে উপভোগ করতে পারবে।শিখতেও পারবে অনেক কিছু।বইটি পড়ার পর ভালো লাগা কাজ করবেই।অনেক চিন্তার খোরাক যোগাবে বইটি।আমি সবাইকে রেফার করবো বইটি পড়ার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে রচিত উপন্যাস। যুদ্ধ-দামামার ফলে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করা কিছু মানুষের এলোমেলো জীবনের আখ্যান। হত্যা, নৃশংসতা, দীর্ঘশ্বাস, না ফিরে আসা আর ভালোবাসার এক হৃদয়বিদারক কাহিনী। হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে ততটা আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটার অনেক সুখ্যাতি শোনায় খানিকটা ধৈর্য নিয়ে পড়লাম। কিছু জায়গায় লেখকের ঠাট্টা-তামাশা কিছুটা অসামঞ্জশ্যপূর্ণ মনে হলেও, মোটের উপর ভালো লেগেছে। বিশেষ করে শেষের দিকের হাহাকারটা খানিকটা হলেও হৃদয় ছুয়ে গেছে।
Was this review helpful to you?
or
Just amazing
Was this review helpful to you?
or
পড়ার সময় রীতিমত বুঁদ হয়ে ছিলাম। হুমায়ুন আহমেদের লেখার ধার আর সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধার। দুয়ে মিলে এক্কেবারে দোধারী তলোয়ার। কাটার সময় দুপাশেই কাটে, কাটতে কাটতে পড়া শেষে ছিন্নভিন্ন অবস্থা আমার। আশা করি যারে পড়েছেন তারাও ছিন্নভিন্ন হয়েছেন এবং যারা পড়বেন তারাও ছিন্নভিন্ন হবেন। আমি একইসাথে মুক্তিযুদ্ধ ভক্ত এবং হুমায়ুন ভক্ত। তাই আমি যদি বই নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাই তাহলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই বই বা তার গুণগত মান নিয়ে খুব বেশি না বলি। শুধু যেটুকু বললে মটেই বেশি বলা হয় না সেটুকুই বলি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া বই যে খুব কম পড়া হয়েছে তা না। কোন বই ৭১-এ দেশের রাজনীতির অবস্থা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে, কোনটাতে সামাজিক অবস্থা, কোনটাতে আবার মানবিক বিপর্যয়ের অবস্থা বেশি ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। এগুলোর কোনটাকে খারাপ বলতে চাই না। শুধু বলতে চাই, এই বইতে দেশের সার্বিক অবস্থা ফুটে উঠেছে। আরেকটা বড় ব্যাপার যেটা সেটা হল, অনেক উচ্চমার্গীয় বইতে ৭১'র বর্ননা এমন ভাবে করা হয় যে মনে হয় যেন বহুদূরের কাহিনি, নিজেকে বইয়ের কাহিনির সাথে রিলেট করতে কষ্ট হয়। কিন্তু জোছনা ও জননীর গল্প পড়ার আগে থেকেই আপনাকে রিলেট করে রেখেছে। আপনাকে আর আলাদা করে রিলেট করতে হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর পুরো মজাটা নিতে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কম-বেশি জানতেই হয়। কিন্তু এই বইয়ের জন্য সেটা দরকার নেই। আপনি শুধু পড়ে যান, কাজ এমনিতেই হয়ে যাবে। এটাই এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার বলে মনে হয়েছে আমার। আর হ্যা, এটাই সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস। তবে একটা ব্যাপার সম্ভবত মনে করিয়ে দেয়ার দরকার নেই যে ঐতিহাসিক হলেও এটা শুধুমাত্র ফিকশন, ইতিহাস নয়।
Was this review helpful to you?
or
I consider it as the best work of Humayun Ahmed. Probably the best book on 1971 by any writer so far. I found myself at the time frame of liberation war while reading this one. I literally cried after reading this book. A must read for each n every Bangladeshi.
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ুন আহমেদ রচিত জোছনা ও জননীর গল্প আসলে গল্প নয় কাহিনি নয় নয় শুধু উপন্যাস এটি হলো বাংলাদেশের বা বাঙালি জাতির গৌরবান্বিত রক্তাক্ত ইতিহাস।
Was this review helpful to you?
or
আমার মতে মুক্তিযুদ্ধের যত বই আছে সেগুলোর শেষ্ঠ এটি। মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় ও নিষ্কৃয় মানুষ সম্পর্কে দারুন ধারণা পাওয়া যায়। আর যুদ্ধে মওলানা ভাসানীর অবস্থানটা আমার জানা ছিল না। মোট কথা দারুন ও শেষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
Excellent Book.One of the best novel related to 1971
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যত উপন্যাস দেখি তার একটি কমন বৈশিষ্ট হল উপন্যাস গুলি মুক্তিযুদ্ধের খন্ড চিত্র বা মুক্তিযুদ্ধের সমসাময়িক কিছু সময়ের অবস্থা তুলে ধরে।কিন্তু জোৎস্না ও জননীর গল্প উপন্যাস টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে কাহিনীর শুরু হয়েছে মার্চ মাস থেকে এবং শেষ হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসই এখানে ফুটে উঠেছে ।এছাড়াও আছে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র থেকে কিছু তথ্য।
Was this review helpful to you?
or
"জোসনা ও জননীর গল্প" হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটি অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস। এই উপন্যাসটিই তাঁর জীবনে লেখা শেষ উপন্যাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেখক অত্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে উপন্যাসটি লেখার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বাবা ছিলেন পিরজপূর জেলার পুলিশ প্রধান। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তার পর থেকে হুমায়ুন আহমেদ এবং তাঁর পরিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। যুদ্ধকালীন সময়ের তাঁর সে দুঃসহ স্মৃতি, যুদ্ধ পরবর্তীকালে অন্যান্য মানুষের থেকে সংগ্রহ করা ঘটনাসমূহ, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নিররম অত্যাচারের চিত্র তিনি বইটিতে অত্যন্ত সন্দর ভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করেছেন। এ বইটির প্রত্যেকটি ঘটনাই সত্য। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম তদুপরী স্বাধীনচেতা বাঙ্গালির সাহসিক্তার গল্প হুমায়ুন আহমেদ স্যারের মতো খুব কম লেখকই তাঁদের লেখনিতে তুলে ধরেছেন।
Was this review helpful to you?
or
বাঙালি জাতির বিজয়ের ইতিহাস জোছনা ও জননীর গল্প। ৫০৫ পৃষ্ঠার বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা আবিষ্টকর। বাঙালি জাতির সবচাইতে দুঃসময়ের সময়টাকে অবলোকন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার জন্যে হলেও এই বইটি অন্তত একবার পড়া উচিত আর মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারন করতে হলে এই বই বহুবার পড়া উচিত৷ এই বই মনে করিয়ে দিবে ১৯৭১ সাল,৭ইমার্চ, ২৫শে মার্চ, রক্তক্ষয়ী ৯মাস, ৭কোটি নিরীহ বাঙালী, পাকিস্তান মিলিটারির নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, বাঙালী নারীদের প্রতি নিপীড়ন অত্যাচার, রাজাকার, মুক্তিবাহিনী, প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং বিদেশী কয়েকটি দেশের মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা। ইরতাজউদ্দিন, রফিক,কংকন নাইমুল এর জীবনের পরিণতি আমি মেনে নিতে পারি না। আমি চোখের জল মোচন করতে পারি নি যখন দেখলাম কলিমউল্লাহর মতো রাজাকার বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছে আর নাইমুলের মতো মুক্তিযোদ্ধা ফিরে আসে নি। বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথাও নাকি নাইমুলের কবর হয়েছে। ৪৮ বছর আগে অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল,যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিলো তারা জানতো দেশটা একদিন স্বাধীন হবে কিন্তু সেই স্বাধীন দেশে হয়তো তারা থাকবে না, নিজেদের জীবনের বিনিময়ে তারা আমাদের বিজয় উপহার দিয়েছিল, কিন্তু আমরা? আমরা শুধু বলে গেছি এবং বলছি বাংলাদেশে কিচ্ছু হবে না। অশ্রুসিক্ত লাইনঃ ★কংকন যখন লেখককে শাহেদের কথা বুঝাছিল, তখন তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল কান্নায়। কান্নাটা কংকনের ছিলনা, কান্নাটা ছিল বাংলার জননীদের। তখন কংকন কাঁদছিল না, কাঁদছিল আমাদের গোটা বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ! ★নীলগঞ্জের অতি শ্রদ্ধেয় অতি সম্মানিত মানুষ মাওলানা ইরতাজউদ্দিনকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় প্রদক্ষিণ করা হলো৷ তাঁকে প্রথম নিয়ে যাওয়া হলো নীলগঞ্জ স্কুলে। সেখান থেকে নীলগঞ্জ বাজারে। বাজারে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটল দরজির দোকানের এক দরজি একটা চাদর নিয়ে ছুটে এসে ইরতাজউদ্দিনকে ঢেকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকল৷ ঘটনা এতই দ্রুত ঘটল যে সঙ্গের মিলিটারিরা বাধা দেবার সময় পেল না। ইরতাজউদ্দিন এবং দরজিকে মাগরেবের নামাজের পর সোহাগী নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হলো। মৃত্যুর আগে আগে ইরতাজউদ্দিন পরম নির্ভরতার সঙ্গে আল্লাহপাকের কাছে উঁচু গলায় শেষ প্রার্থনা করলেন,হে আল্লাহপাক, যে মানুষটা জীবনের মায়া তুচ্ছ করে আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল তুমি তার প্রতি দয়া করো।তুমি তার প্রতি তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও ★নাইমুল কথা রাখেনি। সে ফিরে আসতে পারেনি তার স্ত্রীর কাছে। বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথাও তার কবর হয়েছে। কেউ জানে না কোথায়। এই দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কবরের মাঝে তারটাও আছে। তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানকে ধারণ করেছে। জোছনার রাতে সে তার বীর সন্তানদের কবরে অপূর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে- আহারে… আহারে... পুনশ্চঃ অশ্রুসিক্ত লাইন আরও অসংখ্য, এত লাইন লেখা যাবে না।
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্প- বিশেষজ্ঞ না হলেও এতটুকি বলতে পারি- এটি হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে ভালো উপন্যাস। কারণ এর প্রেক্ষাপট যেমন মহৎ, লেখনী ও কাহিনী বিন্যাসও তেমনি প্রবুদ্ধ। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো হলো ১. ইরতাজউদ্দিন- যিনি শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ভালো মন্দ পুরোপুরি না বুঝে কিন্তু পাকিস্তানি হানাদারদের মুখোশ খুলে যাওয়ার পর তিনি অস্বীকৃতি জানান তাদের সামনে ইমামতি করার। এরপর তাঁর মৃত্যুই স্বাভাবিক। কিন্তু কেমন সে মৃত্যু? কেমন মর্মান্তিক? ২. শাহেদ ইরতাজ উদ্দিন সাহেবের ভাই। তার স্ত্রী আসমানী। যুদ্ধের ডামাডোলে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা তার কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে! এরপর কি হলো তাদের? আসমানী পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবির থেকে কি ফিরে এসেছিল? আবার কি তারা জীবিত দেখতে পরস্পরকে? ৩) শাহেদের বন্ধু গৌরাঙ্গ। যার মেয়ে ও স্ত্রীকে পাকহানাদার ধর্ষণ করে মেরে ফেলে। এরপর গৌরাঙ্গ পাগল হয়ে যায়। ৪) সাতই মার্চের ভাষণের সময়ও নির্বিকার থাকা নাঈম নামের লম্বা গোছের লিকলিকে ছেলেটিও ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। ঘরে তার সদ্য বিবাহিত বউ। কিন্তু নাঈম দেশে দেশে ত্রাস ছড়াচ্ছিলো রাজাকারদের মনে। অসাধারণ সব অভিযান চালাচ্ছিল সে। এরপর যুদ্ধ শেষ হয়। নাইনের জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করে তার স্ত্রী। কিন্তু অপেক্ষা কি সার্থক হয়? এরকম আরো ছোটখাটো চরিত্র ও তাদের সংযোগ ও ঘটনার উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্য জোছনা ও জননীর গল্প। উপন্যাসে লেখকের পরিবারের কথাও ফুটে উঠেছে গভীর স্মৃতিবিধুরতা ও আবেগের মিশেলে। বইটি পড়লে আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতার জন্য যে ত্যাগ তার জন্য আমাদের অজান্তেই বেরিয়ে আসবে দীর্ঘশ্বাস
Was this review helpful to you?
or
ইরতাজউদ্দিন নীলগঞ্জ মসজিদে জুম্মার নামাজ পআহমদ আলী শেখ অবাক দৃষ্টি মেলে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ ধরে। সহসা বাড়ির পুরোনো চাকর আবদুলের গলা ফাটানো কান্না আর চিৎকারে সম্বিত ফিরে পেলেন বুড়ো কর্তা। আম্মাজান আম্মাজান গো। মইরা গেছে। মইরা গেছে। হন্তদন্ত হয়ে এ ঘরে এসে ঢুকলো আবদুল। ছুটে গিন্নীর দিকে এগিয়ে গেলো। মইরা গেছে। মইরা গেছে গো আম্মাজান। কি হয়েছে। জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন জোহরা খাতুন। আবদুল বললো, বউডা কেমন কেমন করতেছে। হাতপা খিইচা চিল্লাইতাছে, শরীর ঠাণ্ডা অইয়া গেছে আম্মাজান গো। আম্মাজান জলদি কইরা চলেন। আম্মাজান। কি হয়েছে। কর্তা অবাক হলেন। বউডা কেমন কেমন করতাছে। শরীর ঠাণ্ডা অইয়া গেছে আম্মাজান গো। কি হয়েছে। এবার স্ত্রীর দিকে তাকালেন আহমদ আলী শেখ। কি আর হবে। জোহরা খাতুন উত্তর দিলেন। ওর বউয়ের বোধ হয় ডেলিভারি পেইন উঠেছে। কদিন ধরে বলছি হাসপাতালে দিয়ে আয়। কিন্তু কে কার কথা শোনে। কথাটা সম্পূর্ণ না করেই পাশের ঘরের দিকে ছুটে চলে গেলেন জোহরা খাতুন। আবদুল তখনো চিৎকার করছে। আম্মাজান গো মইরা যাইবো। মইরা যাইবো আম্মাজান। বউ আমার মইরা যাইবো। ওর চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই এ ঘরে ছুটে এসেছে ততক্ষণে। চার ছেলে। তিন বউ। একমাত্র মেয়ে আমেনা। কি হয়েছে? আবদুল চিৎকার করছে কেন? কিরে কি হয়েছে আবদুল? চিৎকার কবি, না বলবি কি হয়েছে। কি আর হবে। বুড়ো কর্তা আহমদ আলী শেখ আবদুলের হয়ে জবাব দিলেন। ওই উল্লুকটার কোন কাণ্ডজ্ঞান আছে নাকি। বউয়ের বাচ্চা হবে, হাত পা খিচোচ্ছে তাই দেখে হল্লা শুরু করে দিয়েছে। অপদার্থ কোথাকার। এ এমন সময় গিন্নী জোহরা খাতুন আবার এ ঘরে ফিরে এলেন। তার চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। হায় হায় হায়। মেয়েটা মারা যাবে গো। এই তোরা কেউ এক্ষুণি ছুটে গিয়ে আশেপাশে কোথাও থেকে একটা ডাভার ডেকে নিয়ে আয় না। মা তার ছেলেদের সবার মুখের দিকে তাকালেন একবার করে। তারা দাঁড়িয়ে রইলি কেন। জলদি যা– আবদুল তখনো কাঁদছে। মইরা গেছে। মইরা গেছে গো আম্মাজান। চিৎকার করছিস কেন উল্লুক। এখানে চুপচাপ বসে থাক। হঠাৎ রেগে গেলেন বুড়ো কর্তা। তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ইয়ে হয়েছে। এখন এত রাতে কোথা থেকে ডাক্তার ডাকবো শুনি। বড় ছেলে পাশে দাঁড়িয়েছিলো। সে বললো, ডাক্তাররা কি সারারাত জেগে থাকে নাকি। মেজ ছেলে বললো, হাজার টাকা দিলেও এখন কোন ডাক্তার আসবে না। সবার মুখের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে যেদিক থেকে এসেছিলেন সেদিকে আবার ফিরে গেলেন গিন্নী জোহরা খাতুন। আবদুল ততক্ষণে মাটিতে বসে পড়ে কাঁদছে। মইরা গেছে গো আম্মাজান। মইরা গেছে। আহা, কাদিস না, কাদিস না। হায়াত মওত সব আল্লার হাতে, আল্লা আল্লা কর। সরে এসে বিছানার ওপর বসলেন আহমদ আলী শেখ। সহসা তিন বউয়ের দিকে চোখ পড়তে ঈষৎ বিরক্তির সঙ্গে বললেন। তোমরা সব এখানে হা করে দাঁড়িয়ে কেন। গিয়ে একটু দেখো না মেয়েটা বেঁচে আছে, না মরে গেছে। শ্বশুরের ধমক খেয়ে তিন বউ তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে পড়লো। আমেনা অনুসরণ করলো তাদের। চার ভাই পরস্পরের দিকে একবার করে তাকালো। বুড়ো কর্তা কপালে হাত রেখে বিছানার ওপর চুপচাপ বসে। অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বললো না। সহসা আহমদ আলী শেখ নীরবতা ভঙ্গ করলেন। বললেন। ইয়া আল্লাহ। ওই দুঃস্বপ্ন। কি এমনিতে দেখেছি আমি, তখন বলিনি তোমাদের? তোমরা তো বিশ্বাসই করতে চাইলে না। ছেলেদের সবার মুখের ওপর একবার করে চোখ বুলিয়ে বললেন বুড়ো কর্তা। আবদুল তখনো কাঁদছে। বড় ছেলে মনসুর সহানুভূতির স্বরে বললো, কাঁদিস না আবদুল। কেঁদে কি হবে। সামান্য সান্ত্বনায় আরো ভেঙ্গে পড়লো আবদুল। ভাইসাব গো ভাইসাব। পোলার লাইগা। নিজের হাতে ছোট ছোট কাঁথা সিলাই কইরা রাখছিলো গো ভাইসাব। আবদুল কাঁদছে। আবার নীরবতা নেমে এলো সারা ঘরে। চার ভাই আবার পরস্পরের দিকে তাকালো। তাদের চোখেমুখে আগের সেই উৎকণ্ঠা এখন আর নেই। মনে হলো ঘুম পাচ্ছে তাদের। সহসা মেজ ছেলে বললো, মানুষের কার যে কখন মউত এসে যায় কেউ বলতে পারে। বড় ছেলে বললো, ওর বউটা স্বভাবে চরিত্রে বেশ ভালই ছিলো। সেজ ছেলে তাকে সমর্থন করে বললো, সারাদিন চুপচাপ কার্জ কর্ম করতো। আবার নীরবতা। বুড়ো কর্তা মুখ তুলে আবদুলের দিকে তাকালেন। কাঁদিস না। কাঁদিস কেন। এখন আর কেঁদে কি হবে। তার কণ্ঠস্বরে গভীর সহানুভূতির ছোঁয়া। সহসা পাশের ঘর থেকে সদ্যজাত শিশুর কান্নার শব্দে চমকে উঠলো সবাই। পরক্ষণে গিন্নী জোহরা খাতুন ছুটে এলেন এ ঘরে। সঙ্গে তিন বউ আর আমেনা। ওগো শুনছো। যমজ বাচ্চা হয়েছে গো। যমজ বাচ্চা হয়েছে। ওদের সবার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। আবেগের সঙ্গে বললো। আবদুল ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো ওদের দিকে। আঁ উল্লুকটার কাণ্ড দেখেছো। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন আহমদ আলী শেখ। একসঙ্গে দু দুটো ছেলের বাপ হয়ে গেছে হারামজাদা, আবার দাত বের করে হাসে দ্যাখো না। আবদুলের দিকে তেড়ে এলেন বুড়ো কর্তা। যেন হাতের কাছে পেলে এক্ষুণি তাকে দুটো চড় মেরে বসবেন, তিনি। গিনী হেসে বললেন, দাঁড়ায়ে রইলে কেন অজু করে এসো তাড়াতাড়ি আজান দাও। বুড়ো কর্তা কি বলবেন, কি করবেন ভেবে না পেয়ে বোকার মতো সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিলেন। তারপর দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলেন কলতলার দিকে। খুব চমৎকার একটি উপন্যাস এই ‘কয়েকটি মৃত্যু’। সবার এই বইটি পড়া উচিৎ। যারা এখনো পড়েন নাই তারা পড়ে ফেলুন ভালো লাগবে।ড়ান। তার মনে দেশের প্রতি ভালবাসা জন্মালে তিনি একপর্যায়ে বিদ্রোহ করে বলেন- ‘যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই।’ জুম্মার নামাজ না পড়ানোর কারণে ক্যাপ্টেন বাসেত তাকে বলেন- 'আমি খবর পেয়েছি আপনি জুম্মার নামজ পড়াবেন না।কারণ আমি জুম্মার নামাজ পড়তে যাই। আমার মতো খারাপ মানুষকে পেছনে নিয়ে নামাজ হয় না। এই জাতীয় বক্তৃতাও নাকি দিয়েছেন।' ইরতাজউদ্দিন শান্ত গলায় ব্যাখ্যা করলেন কেন তিনি জুম্মার নামাজ পড়াচ্ছেন না। ব্যাখায় শুনে ক্যাপ্টেন বাসেতে মুখ কঠিন হয়ে গেল। - আপনি বলতে চাচ্ছেন পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তান পরাধীন? - জ্বি জনাব। নামাজ না পড়ানোয় তাকে কি শাস্তি দেয়া হল দেখুন "নীলগঞ্জের অতি শ্রদ্ধেয় অতি সম্মানিত মানুষ মাওলানা ইরতাজউদ্দিনকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় প্রদক্ষিণ করা হল। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হল নীলগঞ্জ স্কুলে। সেখান থেকে নীলগঞ্জ বাজারে। বাজারে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটল। দরজির দোকানের এক দরজি একটা চাদর নিয়ে ছুটে এসে ইরতাজউদ্দিনকে ঢেকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকল। ইরতাজউদ্দিন এবং দরজিকে মাগরেবের নামাজের পরে সোহাগি নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করা হল। মৃত্যুর আগে ইরতাজউদ্দিন পরম নির্ভরতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে উঁচু গলায় শেষ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহপাক যে মানুষটা জিবনের মায়া তুচ্চ করে আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল তুমি তার প্রতি দয়া কর। তুমি তার প্রতি তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও।" (৩৮৪ পৃঃ) (নেত্রকোনা অঞ্চলের এই সত্য ঘটনাটির সাক্ষী যে দরজি সে গুলি খাওয়ার পরেও প্রানে বেঁচে যায়। হুমায়ুন আহমেদ তার কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেন।) মনসুর সাহেব তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ইরতাজ উদ্দিনকে মিলিটারিরা গতকাল সন্ধ্যায় নদীর গুলি করে মেরছে। তাঁরা এ অঞ্চলে কারফিউ দিয়ে রেখেছে। মৃত দেহ পড়ে আছে নদীর পাড়ে। ভয়ে কেউ সেখানে যাচ্ছে না। আমি ওনার ডেডবডি নিয়ে আসতে চাই। নিয়মমতো কবর দিতে চাই। আসিয়া বললেন আপনি একা এই কাজ করতে পারবেন? -কেন পারব না? পারতে হবে। -আপনি যদি বলেন, তাহলে আমি যাব আপনার সাথে। মনসুর সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি যেতে চাও? -জ্বি যেতে চাই।মিলিটারিরা যদি আপনাকে গুলি করে মারে তাহলে আপনার সঙ্গে আমিও মরতে চাই। আমি একা বেঁচে থেকে কি করব? ‘নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। হটাৎ একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি। মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম? আগন্তুক বলল, আমি বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।’ (ইরতাজউদ্দিনের নামজে জানাজা হয় দেশ স্বাধীন হবার পর। ঐ দিন তাঁর কবর হলেও জানাজা হয়নি। জানাজার জন্যে মাওলানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।)
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাসের আদলে উপন্যাস লেখার ঢংটা সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের চাইতে সুন্দর কেউ পারেনা। এই উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্র একেকটা শ্রেণীর প্রতিচ্ছবি। মুক্তিসংগ্রামে এই বাংলার একেক শ্রেণীর মানুষের ভূমিকা একেক রকম ছিল। কোনো ভূমিকার পেছনে ছিল প্রয়োজনের চাহিদা, কোনোটা ছিল প্রবৃত্তির চাহিদা, কোনোটা ছিল একরোখা দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। জোছনা ও জননীর গল্পে এই সবই আছে। লেখনীড় ও গল্পের গাঁথুনি অসাধারণ। গল্পের শেষে অসংখ্য নাইমুলদের জন্য আপনার চোখের কোণে অশ্রু জমা হবে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই!
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধকে জানতে,সেই সময় দেশের অবস্থা জানতে এই বই এক অসাধারন ভূমিকা রাখে। এখানে রয়েছে সেই সময়ের পরিবারের প্রিয় জনকে হারানোর বেদনা,অপরদিকে রয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার আনন্দ। প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি এই উপন্যাস টিতে ফুটে উঠেছে। ধন্যবাদ হুমায়ুন আহমেদ কে পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পৌঁছানোর জন্য।
Was this review helpful to you?
or
মানুষের যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। হুমায়ুন আহমেদের দৃষ্টিতে একজন লেখক সেই ঋণ শোধ করেন লেখার মাধ্যমে। একজন লেখক হিসেবে দেশমাতার প্রতি হুমায়ুন আহমেদের যে ঋণ তা শোধ করার জন্য তিনি ‘জোছনা ও জননীর গল্প’-কে বেছে নেন।
Was this review helpful to you?
or
'জোছনা ও জননীর গল্প' বইটি শেষ করে আমার মনে হাহাকার জেগে ওঠে-কেন নাইমুল মরিয়মকে পেল না। মরিয়ম কত আশায় ছিল তার প্রিয়জন যুদ্ধ শেষে ফিরে আসবে, কিন্তু নাইমুল আর আসে না। অপর দিকে বৃদ্ধ মাওলানা হাজারো নির্যাতন সহ্য করেও শত্রুর কাছে নতি স্বীকার করেন নি। যদিও 'জোছনা ও জননীর গল্প' একটি উপন্যাস তবুও এটি এমন এক উপন্যাস যে তা পড়লেই বুঝা যায় এটা কোন জাদুকর লেখকের লেখা। আর সে জাদুকর হলেন হুমায়ূন আহমেদ। অসম্ভব ভালোলাগার একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
Story of Jochana and Janani, a war-based novel by Humayun Ahmed, a popular novelist of Bangladesh.Great! The whole time I read the book, I felt like I was in the war of liberation. How long after the magical writing of Humayun Ahmed! No, I will not say "Jochena and Johnny" is the best book on the war of liberation, but the aspects of the War of Liberation he wrote so long a novel really deserves praise! After buying this book and leaving it in the house for 2 years, it seemed that reading this book would make all his books read! How do I know when I finish the book ....! Can't read such writing anymore! What a pain
Was this review helpful to you?
or
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধকে একটি উপন্যাস দিয়ে বুঝতে চাইলে এই বইটির বিকল্প আর কিছু নেই। একটি উপন্যাসের আদলে ওই উত্তাল সময়কে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। মাঝে ইতিহাসের ছোঁয়াও আছে। অনেকটা আবেগঘন লেখা। মাঝে মাঝে সরাসরি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির বর্ণনাও আছে। বৃহৎ আকারের এই বইটি পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও বিরক্তি আসবে না। বইয়ের শেষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা দেওয়া আছে। আমাদের যোদ্ধাদের বীরত্ব, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগীতা আর পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংসতা ফুটে উঠেছে। আমার বিবেচনায় হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা বইগুলোর মধ্যে এটিই সেরা।
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্প" মূলত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাস হলেও এতে প্রেম,ভালোবাসা সবই আছে। হুমায়ুন তার স্বভাবসুলভ গল্প বলার ভঙ্গিতে ৭১'এর সেই ভয়াল ৯ মাসের কথা বলেছেন পাঠকদের।উপন্যাসের শুরু হয়েছে নীলগঞ্জ স্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপূরীকে দিয়ে যিনি ঢাকায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসেন।... তারপর শাহেদ আর আসমানীর মমতায় পরিপূর্ণ সংসারজীবনের গভীরে যেতে যেতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে নিজের চেনা জগতের সঙ্গে। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির ঢাকায় আসা, রাস্তা হারিয়ে ফেলা, ভুল ঠিকানা, পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত জীবন অস্থির উত্তাল মিছিল স্লোগানমুখর ঢাকায় তার বিপন্ন জীবনবোধ শুরু করিয়ে দেয় এক মহাযাত্রার।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ধরণের বই পড়েছি তার মধ্যে এই একটা মাত্র বই পড়ার সময় এটার ভেতর প্রতিটা চরিত্রের সাথে মিশে গিয়েছি। প্রতিটা চরিত্র ভাবিয়ে তুলতে বাধ্য। অনেক গুলো মানুষের মুক্তিযুদ্ধ সময়কার গল্প খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে যেখানে তারা সবাই ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সাথে জড়িত। অনেক গুলো জীবনকে লেখক এক বইয়ে নিয়ে এসেছেন। যারা এখনো পড়ে নাই তাদের অবশ্যই পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা অন্যতম সেরা উপন্যাস। সাহিত্যিকের কাজ ইতিহাস বলা নয়, সাহিত্যিক এর কাজগল্প বলা। কিন্তু ইতিহাসকে অবিকৃত রাখা তার দায়িত্ব। হুমায়ুন আহমেদ তার দায়িত্ব অ কর্তব্য দুটো পালনেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। অনুভুতির আলোড়ন জাগান, সুখপাঠ্য এক উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
ইরতাজউদ্দিন নীলগঞ্জ মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ান। তার মনে দেশের প্রতি ভালবাসা জন্মালে তিনি একপর্যায়ে বিদ্রোহ করে বলেন- ‘যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই।’ জুম্মার নামাজ না পড়ানোর কারণে ক্যাপ্টেন বাসেত তাকে বলেন- 'আমি খবর পেয়েছি আপনি জুম্মার নামজ পড়াবেন না।কারণ আমি জুম্মার নামাজ পড়তে যাই। আমার মতো খারাপ মানুষকে পেছনে নিয়ে নামাজ হয় না। এই জাতীয় বক্তৃতাও নাকি দিয়েছেন।' ইরতাজউদ্দিন শান্ত গলায় ব্যাখ্যা করলেন কেন তিনি জুম্মার নামাজ পড়াচ্ছেন না। ব্যাখায় শুনে ক্যাপ্টেন বাসেতে মুখ কঠিন হয়ে গেল। - আপনি বলতে চাচ্ছেন পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তান পরাধীন? - জ্বি জনাব। নামাজ না পড়ানোয় তাকে কি শাস্তি দেয়া হল দেখুন "নীলগঞ্জের অতি শ্রদ্ধেয় অতি সম্মানিত মানুষ মাওলানা ইরতাজউদ্দিনকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় প্রদক্ষিণ করা হল। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হল নীলগঞ্জ স্কুলে। সেখান থেকে নীলগঞ্জ বাজারে। বাজারে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটল। দরজির দোকানের এক দরজি একটা চাদর নিয়ে ছুটে এসে ইরতাজউদ্দিনকে ঢেকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকল। ইরতাজউদ্দিন এবং দরজিকে মাগরেবের নামাজের পরে সোহাগি নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করা হল। মৃত্যুর আগে ইরতাজউদ্দিন পরম নির্ভরতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে উঁচু গলায় শেষ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহপাক যে মানুষটা জিবনের মায়া তুচ্চ করে আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল তুমি তার প্রতি দয়া কর। তুমি তার প্রতি তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও।" (৩৮৪ পৃঃ) (নেত্রকোনা অঞ্চলের এই সত্য ঘটনাটির সাক্ষী যে দরজি সে গুলি খাওয়ার পরেও প্রানে বেঁচে যায়। হুমায়ুন আহমেদ তার কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেন।) মনসুর সাহেব তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ইরতাজ উদ্দিনকে মিলিটারিরা গতকাল সন্ধ্যায় নদীর গুলি করে মেরছে। তাঁরা এ অঞ্চলে কারফিউ দিয়ে রেখেছে। মৃত দেহ পড়ে আছে নদীর পাড়ে। ভয়ে কেউ সেখানে যাচ্ছে না। আমি ওনার ডেডবডি নিয়ে আসতে চাই। নিয়মমতো কবর দিতে চাই। আসিয়া বললেন আপনি একা এই কাজ করতে পারবেন? -কেন পারব না? পারতে হবে। -আপনি যদি বলেন, তাহলে আমি যাব আপনার সাথে। মনসুর সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি যেতে চাও? -জ্বি যেতে চাই।মিলিটারিরা যদি আপনাকে গুলি করে মারে তাহলে আপনার সঙ্গে আমিও মরতে চাই। আমি একা বেঁচে থেকে কি করব? ‘নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। হটাৎ একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি। মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম? আগন্তুক বলল, আমি বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।’ (ইরতাজউদ্দিনের নামজে জানাজা হয় দেশ স্বাধীন হবার পর। ঐ দিন তাঁর কবর হলেও জানাজা হয়নি। জানাজার জন্যে মাওলানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।) .............. জোছনা ও জননীর গল্পে এমন আরো কিছু দৃশ্য আছে যা আপনার পাথর হৃদয়কেও মোমের মতো গলিয়ে দিবে, নয়নে অশ্রু ঝরাবে।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকগুলো উপন্যাস লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। গল্পও লিখেছেন। কিন্তু তার মধ্যে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’-র মতো জনপ্রিয়তা কোন বই অর্জন করতে পারেনি। বেশ বড় ক্যানভাসে চিত্রিত এই উপন্যাসে নানা চরিত্র, ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং সেই সময়ের বাস্তবতা। হুমায়ূন আহমেদ খব যত্ন করে বইটি লিখেছেন, বইয়ের প্রতি পাতায় তা বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত আবেগের সঙ্গে বাস্তবতা আর পরাবাস্তবতা মিশিয়ে অদ্ভুত রসায়ন সৃষ্টি করেছেন গল্পের জাদুকর। সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এক লেখায় এই উপন্যাসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে যে ঘরে দু’টি অন্তত বই আছে তার মধ্যে একটি ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাস”।
Was this review helpful to you?
or
'জোছনা ও জননীর গল্প' বাংলাদেশের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। বইটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে আছি! বইটা যেনো মুক্তিযুদ্ধের ৯ টি মাসের টাইমলাইন! উপন্যাসে বর্ণিত প্রায় সব ঘটনাই সত্য | কিছু হুমায়ুন আহমেদের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া | ইতিহাসের যে সময়টা তিনি বর্ণনা করেছেন সে সময়ের বা তার কাছাকাছি সময়ের তার ব্যাক্তিগত জীবনের ঘটনা প্রবাহ তিনি তখন তুলে ধরেছেন। কিছু গল্প আছে যেগুলো আবার অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে ধার নেওয়া হয়েছে। যার নির্ঘণ্ট হুমায়ূন আহমেদ বইএর শেষের দিকে দিয়ে দিয়েছেন। উপন্যাসটি প্রকাশের আগেই তিনি এর পাণ্ডুলিপি অনেককে দিয়ে পড়িয়েছেন। এই প্রজন্মের পাঠক যারা মুক্তিযুদধকে দেখেননি তাদের অনেকের কাছে অনেক ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক মনে হয়েছে। তাদের জন্য হুমায়ূন আহমেদ শুধু মাত্র একটা কথাই বলেছেন ' সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মিশ্র এক জগৎ। সবই বাস্তব আবার সবই অবাস্তব। ' হুমায়ূন আহমেদ সেই ভয়ংকর সুন্দর সময় পার করে এসে তার খানিকটা ধরতে চেয়েছিলেন এ প্রজন্মের জন্য যাতে তার মানবজীবন হয় ধন্য।
Was this review helpful to you?
or
“পিরোজপুর মহকুমার সাব ডিভিশনাল অফিসার এই ঘোষণা শুনে আনন্দে ছেলেমানুষের মতো চিৎকার শুরু করতে থাকেন – ‘যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আমরা যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছি। আর ভয় নাই।’ তিনি পিরোজপুরের পুলিশদের অস্ত্রভাণ্ডার থেকে দুইশ রাইফেল স্থানীয় জনগণকে দিয়ে দেন। যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে। পাকিস্তান মিলিটারি তাঁকে হত্যা করে ৫ মে। এই ঘটনার বত্রিশ বছর পরে তাঁর বড় ছেলে ‘জোছনা ও জননী’ নামে একটা উপন্যাস লেখায় হাত দেয়।” হুমায়ুন আহমেদকে একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এত বড় কাজ করে ফেলেছেন, আপনি পারলেন না কেন? ওনার সপাট উত্তর, উনি স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেন নি বলে লেখাটা ওনার পক্ষে এত সহজ হয়েছে। (কাঠপেন্সিল) তা বটে, সুনীলের ‘সেই সময়’ এবং ‘প্রথম আলো’র পরে সবারই একটা উৎসাহ ছিল, এবার কি প্রার্থিত উপন্যাসটিই লিখবেন তিনি? ট্রিলজি? লিখলেন, এবং শুধু তাই নয় ৯৮৬ পাতার এক সুবৃহৎ উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে ৪০টিরও বেশি বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করলেন। তথ্য – যা লিখতে সাহায্য করে বটে, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর পক্ষে সেই তথ্য পুণরাবলম্বন করে পাঠকদের জন্য একটা মরমী উপন্যাস সৃষ্টি করে যাওয়া হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হওয়া যায়গাটিতে খুঁচিয়ে ঘা করার মতন হয়ে যায়। হুমায়ুন আহমেদ ৫২০ পাতার এই উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে মোট ৯১টি বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলই পড়েছেন ৭ খণ্ড (মোট ১৫ খণ্ড)। তাই দু’তরফের লেখার মধ্যে তফাত থাকে আকাশ-পাতাল। রামচন্দ্র গুহ তার ‘India After Gandhi’ বইতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বলতে খরচ করেছেন মাত্র ২০ পৃষ্ঠা (বাংলা অনুবাদ ‘গান্ধী উত্তর ভারতবর্ষ’)। তাও ভারতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ তা পারেন না, পারেন না তার কারন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা তিনি হুবহু তুলে দিয়েছেন তার বইতে (পৃষ্টা ১৪৯-১৫৪, ৩৩৩-৩৩৯, ৩৪৯-৩৫৪, ৩৭৩-৩৭৬) সেই ঘটনাগুলো পড়লে এবং সেই সাথে মুখবন্ধে তার জীবনস্মৃতি, কীভাবে পাকিস্তান মিলিটারি বাহিনী দ্বারা একদিন একটা সাগরকলা দিয়ে তাকে বলা হল, পরের দিন সকালে তাকে গুলি করে মারা হবে, সে যেন তৈরী থাকে। উপন্যাসে শাহেদ যেন ঠিক এমনই এক অভিজ্ঞতার শিকার, হুমায়ুন আহমেদের অনুভুতি শাহেদের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। আর এ থেকেই বোঝা যায় যে তার পক্ষে এ ধরনের উপন্যাস লেখা কত কঠিন। হুমায়ুন আহমেদের কাছে তাই এ উপন্যাস এক রকমের ঋণশোধ। “মানুষকে যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। একজন লেখক সেই ঋণ শোধ করেন লেখার মাধ্যমে।” পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলি নারকীয় ও বীভৎস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, বাংলাদেশের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতমই নয়, বেশ উচ্চস্থানে থাকবে। বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নেও যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, এবং সারা পৃথিবী জুড়ে তার সমর্থনও আসতে পারে সেটা ভাবলেই বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। অবশ্য মানবিকতা ও রাজনীতির মধ্যে তফাত অনেক। ভারত-পাকিস্থান দুই যুযুধান দেশ। ভারত আস্তে আস্তে ইন্দিরা গান্ধীর হাত ধরে শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে, এমতাবস্থায় ’৬১–র যুদ্ধে চীনের কাছে নাস্তানাবুদ এবং তারও আগে দু-দুটো ভারত-পাকিস্থানের যুদ্ধে উভয়পক্ষের প্রায় সমান সমান পরিসমাপ্তি বিশ্ব রাজনৈতিক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – অবশ্যই ভারতকে দাবিয়ে রাখার এক অনন্য কৌশল বলে আমেরিকা এবং চীনের মত দেশও এই সময় পাকিস্থানের দিকে ঝুঁকে গেল। তৎকালীন বিশ্বের বাকি সমস্ত মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সব জেনেশুনে চুপ করে রইল। ফল হল, একদিক থেকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে ইয়াহিয়া খাঁ’র সৈন্য আস্তে আস্তে বাংলাদেশের বাকি অঞ্চলে তাদের ত্রাস ছড়ালো রাজাকারদের সহায়তায়, আর অন্যদিকে ভারতে ত্রিপুরা-আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে পুণরায় শরণার্থীর ঢল নামল। কেমন সে ঢল? রামচন্দ্র গুহ জানাচ্ছেন, এপ্রিল মাসে ৩৫ লক্ষ, এবং মে মাসে তার সংখ্যাটা ৮০ লক্ষে ছাড়িয়ে যায়। এদের স্থান করে দিতে হল ওড়িশা আর মধ্যপ্রদেশের ঘণ অরণ্য অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেও। তৎকালীন সোভিয়েত প্রতিনিধি জ্যাকভ মালিকের কথায়, “জাতিসংঘের ৮৮টি দেশের কোনোটির জনসংখ্যা এক কোটির বেশি না অথচ পূর্ব পাকিস্থান থেকে এক কোটির বেশি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।” এরপরের ইতিহাস ঘুরে দাড়ানোর ইতিহাস। সীমান্তবর্তী শিবিরে শুরু হল ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় গেরিলা প্রশিক্ষণ, তৈরী হল মুক্তিযোদ্ধা। এরাই মূল স্বাধীনতার কাণ্ডারী। গ্রামেগঞ্জে এদের ইতিহাস রূপকথার পর্যায়ে চলে গেল। উপন্যাসের শেষের দিকে মূলত তাদেরই জয়গাথা লেখা হয়েছে। নাইমূল যেন তাদেরই এক প্রতীক হয়ে পুরো উপন্যাস জুড়ে এক যোদ্ধা তথা সংগ্রামী হয়ে ওঠার কাহিনী বলে। আর পাশাপাশি বিশ্ব ইতিহাস? লেখকের দৃষ্টি সেদিকেও ছিল। তিনি লিখলেন, পাকিস্থান হঠাৎ করে আক্রমণ করল ভারতকে। চার তারিখে ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। চীন ঘোষণা করল, পাকিস্থান সবরকম সাহায্য পাবে। রাশিয়া চীন সীমান্তে দশ লক্ষ সেনা মোতায়েন করল, যাতে চীন ভারত আক্রমণ না করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্থানের সমর্থনে বিবৃতি দিল, তাদের পরমাণু শক্তিচালিত সপ্তম নৌবহরকে পাঠিয়ে দিল বঙ্গোপসাগরে। জবাবে রাশিয়া পাঠালো তাদের ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরী এবং পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজ। এই দাবাখেলার যাতাকলে রাশিয়া একাই আটকে রাখল বিশ্বের তাবড় তাবড় দুটো দেশকে। ভারতীয় বাহিনী সরাসরি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পন্ন করল, আর পূর্ব সীমান্তে কাশ্মীর অঞ্চলে পাকিস্থানকেও যোগ্য জবাব দিল। (পৃষ্ঠা ৪৭৯-৪৮৪) রাশিয়া নব্বইয়ের দশকে এর ফল পেল। ঠান্ডা যুদ্ধে আমেরিকা রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করে বেশ দুর্বল করে তবে ক্ষান্ত দিল। ধান ভানতে শীবের গান? কোথায় গল্পের কথা, তাদের চরিত্রের আলোচনা? তা না করে কেবল ইতিহাসের মারপ্যাঁচ!!! আচ্ছা বলুন তো, হুমায়ুন আহমেদের লেখা এমন কোন উপন্যাস আছে যেখানে তার গল্পের সমালোচনা করা সম্ভব? তার গল্পে মুগ্ধতা ছাড়া আর কিছুই থাকে না, এই উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তাই, আর তাই বুদ্ধিমান পাঠক পড়েই তার রসাস্বাদন করবেন, বলাই বাহুল্য। এই উপন্যাসের প্রকৃত পটভূমিকার একটা আবহ বিশেষ করে অ-বাংলাদেশী এবং বর্তমান পাঠকদের জন্য একান্তই প্রয়োজন, আর সেই প্রয়োজনেই এই রিভিউ আমার লিখতে বসা। উপন্যাসের চরিত্রের বিভিন্নতা নিয়ে বিষ্ময় হতে হয় সন্দেহ নেই, কারণ এখন আপনি জানেন প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্রেরই কোন না কোন রূপ সে সময়ে বর্তমান ছিল। ছিল ইরতাজউদ্দিনের মতো নমস্য মুসলমান; ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীর মতো আপনভোলা প্রফেসর – দেশের সম্পদ, যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্থান একরাত্রে হত্যা করে বিদ্রোহ দমনের নাম করে তিনি ছিলেন তাদেরই একজন; ছিলেন নির্মলেন্দু গুণ, মুজিবুর রহমানের মতন লেখক, নেতা তথা বুদ্ধিজীবী; ছিলেন মোবারক হোসেন, ফয়জুর রহমানের মতন পুলিশ অফিসার; ছিলেন গৌরাঙ্গের মতন হিন্দু; ছিলেন কলিমউল্লাহ, পীর সাহেবের মতন গিরিগিটিরা; ছিলেন কফিলুদ্দি, আবু তাহেরের মতন দেশদ্রোহী; ছিলেন কয়েস আলী, রফিকদের মতন শহীদ, যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় নেই; ছিলেন কাদের সিদ্দিকি, হিমুদের মতন মুক্তিযোদ্ধারা; আর ছিলেন আসমানী-মাসুমা-সোফিয়া-মরিয়মের মতন সাধারণ নারী, যারা যুদ্ধবিদ্ধ্বস্ত পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের কঠোর জীবন সংগ্রামের প্রতিনিধি। আর সেই সময় গ্রন্থের লেখক ঢাকার ঝিকাতলার একটি বাসায় লুকিয়ে ছিলেন মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসে, তার বন্ধু আনিসের সাথে, যিনি কিনা তার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন। ষোলই ডিসেম্বরে তাদের মনে হল যেন তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আনিস বাড়ির সামনের মাঠে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে শব্দ করে কাঁদছেন, গড়াগড়ি খাচ্ছেন। লেখক তাকে টেনে তুললেন, এবং দুজনে হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়লেন ঢাকার রাস্তায়, এই প্রথম – নির্ভয়ে। ফাঁকা রাস্তায় কোনরকম কারণ ছাড়াই আনন্দে দৌড়াতে শুরু করলেন… এবং এর বত্রিশ বছর পর লেখা হল- "জোছনা ও জননীর গল্প" বই: জোছনা ও জননীর গল্প; লেখক: হুমায়ূন আহমেদ; ধরন: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস; প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ
Was this review helpful to you?
or
?
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ এবং অবশ্য পাঠ্য বই ।
Was this review helpful to you?
or
সেরা বই
Was this review helpful to you?
or
কোন দিকে যাবে? দক্ষিণে জল সমুদ্রে বসে আছি। উত্তরে পর্বতমালা কন্ঠে দেব শেফালি ফুলের- কোন দিকে যাবে তুমি?? পালাবার পথ নেই, ব্যারিকেড চতুর্দিকেই, যেন আন্দোলন চলছে প্রত্যহ। কবিতাটা নির্মলেন্দু গুণ মশাইয়ের। আরেকটা আছে শামসুর রহমানের। তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?? আর কতবার দেখতে হবে খান্ডবদাহন?? আর দেখতে হবে না তাই না?? যুদ্ধ তো শেষ! আমরা এখন মুক্তপ্রিয় স্বাধীন জাতি। নোংরা ফুটপাতে বসা সলিমুদ্দির নোংরা দোকান থেকে কেনা গোটা বিশ্বের মানচিত্রে ছোট্ট একটা দেশ দাঁড়িয়ে আছে- নাম নাকি তার বাংলাদেশ। এখন হয়ত দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এক সময় শুয়ে ছিল, একসময় চোখ বন্ধ করে ছিল, বাতাসে তখন অক্সিজেন ছিল না, সে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারত না। আজ তার বুকের উপর দিয়ে স্বাধীনচেতা মানুষগুলো হেটে বেড়াচ্ছে কি দম্ভ নিয়ে! মৃত্যুর স্বাদ ওরা কি করে বুঝবে? স্বাধীনতার মর্ম ওরা কি করে বুঝবে?? সময় ১৯৭১। বছরের তিন টা মাস মিছিল মিটিং করতে করতেই গেল শহরের ছাত্রজনতার। ব্যবসায়ীদের লাভ ক্ষতির উঠানামা, চাকরীজীবীর দু দিন পর পরই ছুটি, স্কুল কলেজের বন্ধ বন্ধ ভাব যেন শহরের নৈমিত্তিক ব্যাপার। শেখ সাহেবকে আরেকবার ক্ষমতা ডান হাতে দিয়ে বাম হাত থেকে নিয়ে নিল ক্ষমতাসীন রা। শহরের একটা নীরব গলির শাহেদের আবার ও নিয়ে বেশি মাথা ব্যাথা নেই। স্ত্রী আসমানী আর পিচ্চি মেয়ে রুনীকে নিয়ে দিন ভালোই যাচ্ছে তার । শাহেদের ঝগড়া হত রোজই আসমানীর সাথে কিন্তু ও তেমন কোনো ব্যাপার না, স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্যতা হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । আজ ঝগড়া তো আবার কাল ভাব হবে দুজনার। এদিকে গোয়েন্দার প্রোফেসর মার্কা পোশাক ছেড়ে পুলিশের খাকি পোশাকটাই যেন শহরের আরেক পাশের বাসিন্দা মোবারক সাহেবকে খুব প্রশান্তি দিচ্ছে। তিন মেয়ে আর সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানকে নিয়ে তারও দিন কাল ভালোই যাচ্ছে। ছোট ছেলেটার নাম ও রাখসে ইয়াহিয়ার নামানুসারে। নতুন বিয়ে করা বউ সাফিয়ার ব্যবহারেও তিনি বেশ প্রশান্তি অনুভব করেন। স্ত্রীর চোখে যদি স্বামীর প্রতি ভয়ই না থাকে তয় সেই স্ত্রী বেশিদিন টিকে না। এডা মোবারক সাহেবের একান্তই ব্যাক্তিগত মতামত। সেনাবাহিনীর কর্ণেল সাহেব হুট করে একদিন তার পজিশন চেঞ্জ করে শেখের বাড়িতে দিয়ে দিলেন। সে কি কান্ড! শেখের বাড়িতে নিরাপত্তা দিবে তার মত একজন পুলিশ! ভাবতেই অবাক লাগে! শহরের মানুষগুলার একটাই চিন্তা ৭ই মার্চের ভাষণেও একবার শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা কেন দিলেন না?? তাহলেই তো যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নামতে পারত। গর্দভ বাঙ্গালী! তা শহরের বুকে ও রাতে নামল জলপাই রঙ্গের ট্যাঙ্কগুলি। গৌরাঙ্গ সাহেবের স্ত্রী নীলিমাকে ধরে নিয়ে গেসে ওরা, সন্তানটাকে কি মেরে ফেলসে ?? সাকিনা বিবির স্বামীকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে শাহেদের সাথে রাগ করে বান্ধবীর বাসায় চলে আসা আসমানীও কারফিউয়ের মুখে পড়ে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হল। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ঘুমন্ত রাসেল, কামাল, জামাল, হুমায়ুনদের কে জানি চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিল। বস্তিগুলোয় আগুনের শিখা জ্বলছে। মোবারক হোসেন কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর্তচিতকারে ভেসে যাচ্ছে পুরো ঢাকা। আজরাইল চলে আসল নাকি?? কেয়ামত না শুক্রবারে আসার কথা?? সেদিন তো শুক্রবার ছিল না। তাহলে ওই দানবেরা কে ছিল?? যারা নারীদের স্তন ছিড়ে ফেলেছিল! যারা বোনেদের যোনীপথ বেয়নেটের খোচায় ঝাঝড়া করে দিয়েছিল?? ছোট বাচ্চাগুলোকে দেয়ালে আছড়ে মেরেছিল! শাহেদেরা হয়ত ফিরতে পারেনি আসমানীর ওই ছোট্ট বুকে! সদ্য বিয়ে হওয়া মরিয়মের মিষ্টি ঠোটে চুমু খেতে পারে নি বিদেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া তার স্বামী নাইমুল। রুনীরা ফিরতে পারে নি সেদিন বাবার কাছে। হাতি মার্কা খাতা কিনে দেয় নি বলে সেদিনের পর থেকে হয়ত আর রুনীরা কান্না কাটি করে নি। বর্ষার শুরুর তীব্র তাপদাহে স্কুলের মাঠে পতাকা টানাতে এসে ইরতাজউদ্দীন যে স্বাধীন তারাবিহীন পতাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন সে স্বপ্ন এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের এক উষ্ণ বিকেলে সমাপ্ত হয়। সে দুঃস্বপ্নে রুনীরা তাদের বাবাকে হাজারো লাশের মিছিলে খুজেছিল, সে দুঃস্বপ্নে নাইমুলের খোজে মরিয়মরা বাসার সিড়িতে দাড়িয়ে থেকেছিল। সে দুঃস্বপ্ন যাতে এ ঘুণেধরা বাঙ্গালীকে আর না গ্রাস করে! আর না গ্রাস করে! ❤❤❤ পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মুক্তিযুদ্ধ কতটা কঠিন ছিল বাঙ্গালীর জীবনে তার ০.০০০০১% উপলব্দি করেছিলাম "জাহানারা ইমামের" একাত্তরের দিন গুলি পড়ে। সেদিন কেদেছিলাম, আর আজো কাদলাম। একাত্তর! একাত্তর! হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে নিয়ে কিছু বলার নেই। তিনি একজনই। আল্লাহ একজন হুমায়ুন আহমেদকেই আমাদের মাঝে পাঠিয়েছেন। "জোছনা ও জননীর গল্প" আমার জীবনের একটা পার্ট হয়ে থাকবে যেমন ৭১ এর যুদ্ধ প্রত্যেকটা সত্যিকার বাঙ্গালীর হৃদপিন্ডের অলিন্দ আর নিলয় হয়ে আছে। ❤ বইয়ের নামঃ জোছনা ও জননীর গল্প লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫২৮ বই রেটিংঃ ৫/৫ প্রচ্ছদ রেটিংঃ ৫/৫ দেশের মাটিকে ভালোবাসুন ❤❤
Was this review helpful to you?
or
Best of Humayun Ahmed sir
Was this review helpful to you?
or
এককথায় অসাধারণ। স্বভাবসিদ্ধ সহজ লেখনী আর উপস্থাপনা,সঙ্গে দুর্দান্ত প্লট। বাংলা ভাষার অন্যতম সেরা বই।
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্প বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে হুমায়ুন আহমেদ রচিত একটি উপন্যাস। মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে। কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দিশালার ঐ শিকলভাঙা তারা কি ফিরিবে আর সুপ্রভাতে ? যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভুমি এসো স্বদেশ ব্রতের মহাদীক্ষা লভি, সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি। যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা, মৌন মলিন মুখে জাগালো ভাষা। সেই রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি, বিজয়লক্ষ্যি দেব তাদেরই গলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সঙ্ঘটিত তাঁর নিজ জীবনের এবং নিকট সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তিনি উপন্যাসিক আঙ্গিকে এতে ফুটিয়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ তৎকালীন কিছু উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ঘটনা তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে উঠে এসেছে এই উপন্যাসটিতে।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন হুমায়ুন আহমেদ এর বয়স ২৩ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রসায়ন বিভাগের ছাত্র।আর এক বছর বাকি M.s.c পাশ করার।এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এর লেকচারার হিসেবে যোগ দিবেন।পিএইচডির জন্য বিদেশে যাবেন। গল্প উপন্যাসে আদর্শ ভালো কিছু ছাত্রের চিত্র থাকে, তিনি ছিলেন ওই রকম একজন। ভালো ছাত্রদের বন্ধু বান্ধব থাকে না, তাদের বন্ধু হয় বই। তিনি সারাক্ষন লাইব্রী, বই, কখনো মধুর ক্যান্টিন এরকম করেই সময় কাটাতেন। এমন কি নিজের রুমের প্রায় অর্ধেক এর বেশি তিনি বই দিয়ে পূর্ণ করে ফেলেছেন।গান শোনার প্রবল আগ্রহ থাকায় বাবা, 'ফয়জুর রহমান' একটা রেডিও কিনে দেন। বাইরে যখন ৭১ এর ভয়াবহ আন্দোলন, তখন তিনি রুমে দরজা লাগিয়ে গান শুনছেন।এত সুন্দর সময় টা অগোছালো হয়ে গেল ১৯৭১ সালে।এমন ভাবে যার জন্য তিনি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। ছায়া ঘেরা শান্ত দিঘির একট মাছ কে হঠাৎ যেন নিয়ে যাওয়া হলো চৈত্রের দাবদাহে ঝলসে যাওয়া স্থল ভূমিতে। ভাই বোন নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো, মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে ভর্তি হওয়া, পাকিস্থানি মিলিটারী রা মাথায় গুলির বাক্স দিয়েছেন, তা নিয়ে নেত্রকোনা অবাদি হেটে আসা। আরো কত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। এরকম হাজারো যন্ত্রনাদায়ক কাহিনী। শুধু নিজের (হুমায়ুন আহমেদ) না, বহুজনের। পরিচিত, অপরিচিত বিভিন্নজনের। উপন্যাসের শুরু সেখান থেকে যখন ১৯৭১ সালের ফাল্গুন মাসে বা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়, নীল গঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন তার ভাই শাহেদ, ভায়ের বউ আসমানী মেয়ে রুনি কে দেখতে ঢাকা আসে। গল্প গুলো তাদের ও। তাদের ঘিরে থাকা মানুষ জন দের নিয়ে এই উপন্যাস 'জোছনা ও জননীর গল্প'। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, রাজাকার দের গল্প, নির্যাতিত দের গল্প, অসহায় সব মানুষের গল্প স্বার্থন্বেষীদের গল্প।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের এসব বেদনা, হতাশা,গ্লানি নিয়ে লেখা হলেও পুরো চিত্র কোথাও তুলে ধরা হয় নি লেখক এর আর তাই তুলে ধরতে তিনি এই উপন্যাস টি রচনা করেন। অনেক টা মাতৃভূমির কাছে ঋণ শোধ করার মতো।লেখক তো তার লেখার মাধ্যমে ঋণ শোধ করার অবকাশ পায়। তিনি বলেছেন ইতিহাস মিশ্রিত বা ইতিহাসের আদলে হলেও এটা একটা উপন্যাস। তবে তিনি ইতিহাসের বেশ কাছাকাছি থেকে লেখার চেষ্টা করেছেন।তাই বলা যায় উপন্যাস এর আদলে গড়া ইতিহাসের দলিল। যে সে ইতিহাসের নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিল।এত বড় একটা উপন্যাসের চরিত্র চিত্রন করা খুব কঠিন কাজ। তবে লেখক সব গুলো চরিত্র পরিপূর্ন ভাবেই তুলে ধরেছেন। মাউলানা ইরতাজ উদ্দিন, শাহেদ,শাহ কলিম, নাইমুল, মরিয়ম, কংকন প্রতি টি চরিত্র একেক টা জ্বলে জ্বলে উঠেছে পুরো উপন্যাসে। ইতিহাসে খাতিরে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থা গুলো। বিভিন্ন রাজনীতি বিদ দের কথা এসেছে, মুজিব, ইন্দিরা, ভুট্টো, জিন্নাহ এদের কথা। মুক্তিযুদ্ধা দের কথা। এক কথায় পুরো উপন্যাস জুড়ে আছে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী একেক টা দিন। ভয়াবহ একেক টা সময়..! এই উপন্যাস ধারাবাহিক আকারে শুরু করে ও লেখক তেমন সময় দিতে পারছিলেন না । থেমে থেমে লেখা এগুচ্ছিল না বেশি। এক সময় এর লেখক এর মনে হলো তিনি বোধ হয় এ লেখা টা শেষ করতে পারবেন না। তখন তিনি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে। ওপেন হার্ট সার্জারি। অপারেশান এর বেডে যখন অচেতন হওয়া শুরু হলো তখন তিনি ভাবলেন- "আমাকে যদি আর একবার পৃথিবীতে আসার সুযোগ দেওয়া হয়। আমি অবশ্যই লেখা টা শেষ করবো।"প্রিয় লেখক এর স্থানে যারা হুমায়ুন আহমেদ কে বসিয়েছেন আমি মনে করি লেখক তার জীবনমৃত্যু সন্ধি ক্ষনে যে বই টা নিয়ে ভেবেছেন তা একবার পড়া উচিৎ। নিতান্ত ব্যাক্তিগত কথা উল্ল্যেখ করে তিনি বলেন, আমার জন্মদিনে গুলতেকিন আমাকে পাচশ পেইজের একটা খাতা দিয়ে বলল, আমি যেন প্রতিদিন এক পৃষ্টা করে যেন খাতাটায় একটা মুক্তিযুদ্ধের বড় উপন্যাস লিখি। আশা করি ও খুব খুশি হয়েছে। লেখক এর এই বই টা আমার প্রিয় বই গুলোর মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া অনেক দিন পর আবারো সেই পুরোনো অনুভূতি। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধ সম্পর্কিত এই বইয়ে লেখক অনেক ইতিহাস সংযোজন করে রচনা করেছেন। তখন কার কাহিনী, সমাজের যে কি অবস্থা তা এত সুন্দর করে তুলেছেন চরিত্র গুলো দিয়ে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদের সকল লেখনীর মধ্যে এটিই হয়তো সবচেয়ে বড় এবং উল্লেখযোগ্য। ইতোপূর্বে নানান উপন্যাস ও গল্পে মুক্তিযুদ্ধকে হাজির করলেও এর সাথে আগেরগুলোর কোন মিলই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, এর কারণ সম্ভবত “ জোছনা ও জননীর গল্প “ শুধু উপন্যাস নয়, উপন্যাসের চেয়ে বেশি কিছু। এ হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত এক মহাকাব্য। “জোছনা ও জননীর গল্প” মূলত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাস হলেও এতে প্রেম,ভালোবাসা সবই আছে। হুমায়ুন তার স্বভাবসুলভ গল্প বলার ভঙ্গিতে ৭১’এর সেই ভয়াল ৯ মাসের কথা বলেছেন পাঠকদের। উপন্যাসের শুরু হয়েছে নীলগঞ্জ স্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপূরীকে দিয়ে যিনি ঢাকায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসেন।… তারপর শাহেদ আর আসমানীর মমতায় পরিপূর্ণ সংসারজীবনের গভীরে যেতে যেতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে নিজের চেনা জগতের সঙ্গে। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির ঢাকায় আসা, রাস্তা হারিয়ে ফেলা, ভুল ঠিকানা, পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত জীবন অস্থির উত্তাল মিছিল স্লোগানমুখর ঢাকায় তার বিপন্ন জীবনবোধ শুরু করিয়ে দেয় এক মহাযাত্রার। শাহেদের অফিস। দৃশ্যপট নতুন। ঘটনা একই। সতর্ক কেউ কেউ। এক জায়গায় সংক্ষেপে হুমায়ুন আহমেদ বর্ণনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং হলের ছাত্রদের উপর চালানো বর্বরতার কথা। যদিও খুব বেশি বিশদ বিবরণ নেই কোনো ঘটনারই কিন্তু তাতেও যুদ্ধের ভয়াবহতার কোনো কমতি ছিলো না। খুব সহজ ভাষায় পাকিস্তানী হানাদারদের নয় মাসের বীভৎসতার বর্ণনা দিয়েছেন, সাথে সাথে “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র” থেকে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনাও তুলে ধরেছেন। এনেছেন নিজের পরিবারকেও, তার পিতা পিরোজপুর মহকুমার সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান তার অস্ত্রভাণ্ডার দিয়ে দেন সাধারণ মানুষকে ৫ মে মিলিটারিরা হত্যা করে তাকে। এরপর তাঁর মা সন্তানদের নিয়ে বাঁচবার জন্য কীভাবে চেষ্টা করেন মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে তার বর্ণনাও রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পরকে ধারনা পেতে বইটি সবার পড়া দরকার।
Was this review helpful to you?
or
স্যারের লেখা সবচাইতে বড় উপন্যাস এটা।মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আশ্রিত একটা উপন্যাস। উপন্যাসের শুরুটা বেশ নাটকীয়ভাবে না হলেও,বিভিন্ন অধ্যায়ে আপনি যে নাটকীয়তার সম্মুখীন হবেন তা শ্বাসরুদ্ধকর। মাঝে মাঝে পৌছে যাবেন সেসব স্থানে,যেখানে আমার দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা তাদের মা কে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন,দেশের জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন। এটা এমনই একটা উপন্যাস,যেটাকে নিয়ে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা লেখা যাবে।কিন্তু এতটা ক্ষমতাও আমার নেই।বেশী কথা বাড়াতেও চাই না।আপনাদের ঘুম চলে আসতে পারে! যেহেতু এটা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস,সেহেতু এখানে ইতিহাসের বিখ্যাত বেশ কয়েকটি চরিত্রের আগমন ঘটাই স্বাভাবিক। লেখক চরিত্রগুলোর বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন,তা এক কথায় অতুলনীয়।সেসব চরিত্র আপনার কাছে একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠবে।কিছু চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে বহুগুণে,আর কিছু চরিত্রের প্রতি ঘৃণায় আপনার চোখ ছোট হয়ে আসবে। হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের ঘটনাগুলো পড়ে হয়তোবা আপনার চোখে পানি চলে আসবে।কি নৃশংস সেই অত্যাচার!!ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে। একাত্তরে ঘটে যাওয়া অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েই অনেকের মনে বড় কিছু ভুল ধারণা আছে।বইটা পড়লে সেই ভুল ধারণা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আমি মনে করি। হুমায়ুন স্যার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। স্যারের লেখা নিয়ে নিন্দুকেরা অনেক ধরনের কথা বলে থাকে। তাদেরকে অনুরোধ করবো কষ্ট করে জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি পড়ে দেখার জন্য। তিনি যে কতটা প্রতিভাবান তা তার সমালোচকরাও জানে। আমার মনে হয় তিনি তার লেখক সত্তার যতটুকু গুন আছে, তার সবটুকু দিয়ে লিখেছেন "জোছনা ও জননীর গল্প" উপন্যাসটি। যথেষ্ট সময় নিয়ে এবং ধীরে ধীরে। তার গতানুগতিক উপন্যাসগুলোর চেয়ে জোছনা ও জননীর গল্প একেবারেই অন্যরকম।অদ্ভুত অসাধারণ সুন্দর একটা উপন্যাস।পড়তে পড়তে সম্মোহিত হয়ে যাবেন।
Was this review helpful to you?
or
The liberation war was an exceptional thing that could happen to any country. Being from a very different generation it's hard for us to contemplate what happened during those times. All the non-fictions I have read about the '71 war, they all have been moving. But I must thank the genius of Humayun Ahmed, for he introduced me to that era and made me enthusiastic about those times. I have read hundreds of his books, this one stands out in the midst of all of them especially when you realize how seriously he took it. He was writing from 1972 but to write a full liberation war novel he took 32 years! If you are too afraid to read these many pages, I'd recommend one of his books titled '1971'. You can be assured when you finish that one, you'll be interested to read this one. I believe this book to be his best writing just for the range of emotions I go through reading this, whether Major Zia being quoted 'If anything happens to my family, I'll kill you' or Bangabeer Kader Siqqiqui being quoted, 'I don't shake hands with people who murder children'. This is an essential book that will speak to generation after generation.
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্প : ছুঁয়ে দেখা মুক্তিযুদ্ধ ধুলিধূসর এ ধরার কিছু মানুষকে নিয়ে এত বেশি আলোচনা হয়, তাঁদের সৃষ্টিকর্ম এত নাড়াচাড়া হয় যে অজান্তেই তাঁরা আমাদের আপন হয়ে ওঠেন। তাঁদের সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনা করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার হয়ে যায়। একটি লাইন লিখতে গেলেও মনে হয়, কেউ একজন নিশ্চয় আমার আগে এ কথা বলে ফেলেছেন! মৌলিকতা নিয়ে সংশয় থাকার পরও মানুষ তাদের নিয়েই কথা বলতে বা লিখতে পছন্দ করে সবচেয়ে বেশি। এর কারণ সম্ভবত প্রিয় মানুষকে নিয়ে বলা ও লেখার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আছে। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ তেমন একজন, যাঁর লেখা পড়ে মনে হয় এ তো আমার কাহিনি! গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চরিত্রগুলোও অতি পরিচিত, কাছের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের আনন্দ-বেদনা-হতাশা-গ্লানিকে জীব্য করে লেখক বেশ কিছু ছোটগল্প লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাসও লিখেছেন, বানিয়েছেন নাটক-চলচ্চিত্র। কিন্তু ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসকে হুমায়ূন আহমেদ দেশমাতার ঋণ শোধের উপলক্ষ্য হিসাবে নিয়েছিলেন। লেখকের বয়ানেই তা উঠে এসেছে। পাঁচশ’র বেশি পৃষ্ঠার এ উপন্যাস স্বাধীনতা সংগ্রামের এক খন্ডিত আখ্যান, যার মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ আগুনঝরা সময়ের চিত্র এঁকেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। এত সহজ-সাবলীল ভঙ্গিতে মুক্তিযুদ্ধের নিগূঢ় কথা বলার ক্ষমতা লেখকের সহজাত দক্ষতার পরিচায়ক। উপন্যাসের শুরু ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে। যখন নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী ছোটভাই শাহেদ ও তার পরিবারকে দেখতে ঢাকা আসেন। এই মাওলানা ইরতাজউদ্দিন, শাহেদ, আসমানী আর তাদের ঘিরে থাকা মানুষজনদের নিয়ে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসকালের উত্থান-পতনের সাক্ষী লেখক নিজেও। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর পূর্ণতা দিতে যা লেখককে সাহায্য করেছে। শহীদ পিতা এবং নিজ পরিবারকে গল্পের অংশে জুড়ে দিয়ে লেখক উত্তাল সময়য়ের বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। সপ্ন ও দুঃসপ্নের মিশ্র এক জগত। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব।’ ‘জোছনা ও জননীর গল্প’র আগে মুক্তিযুদ্ধনির্ভর বেশ কিছু গ্রন্থ পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, লেখক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনার চেয়ে ভয়াল সে সময়ে ভর দিয়ে জীবনের গল্প বলায় অধিক মনোনিবেশ করেছেন। ঘটনার সঙ্গে অণুঘটনা জোড়া দিয়ে সাজিয়েছেন গোটা উপন্যাস। আবেগ, হতাশা, ক্ষোভ, ভয়, সংকল্প, ভালোবাসার নিখুঁত বর্ণনা দীর্ঘ উপন্যাসপাঠের ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তবু ইতিহাসনির্ভর সাহিত্যে ইতিহাস ও কল্পনার মধ্যে একটি আনুপাতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হয়। তা করতে গিয়েই মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ এবং দৃঢ়চেতা মানুষের, শাহেদকে দিয়ে সে সময়ের স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে খুঁজে ফেরা কোনো স্বামীর, গৌরাঙ্গকে দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তৎকালীন হিন্দুদের, নাইমুলকে দিয়ে এদেশের মুক্তিকামী যুবকদের, শাহ কলিমের মাধ্যমে সুবিধাভোগী-স্বার্থালোভী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করিয়েছেন। সময়কে ধরতে অনেক ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঘটনার সন্নিবেশ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালরাত্রি, অস্থায়ী সরকার গঠন, মাওলানা ভাষানী থেকে ইন্দিরা গান্ধী -সবাইকে তুলে এনে ইতিহাসের কলকব্জা এটেছেন বাস্তবতার প্লটে থেকে। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’একাত্তরের গভীর জীবনবোধের অনবদ্য বয়ান। অনিশ্চয়তার মোড়া শ্লোগানমুখর দিনগুলোর অচ্ছেদ্য আলেখ্য। প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে মিশে আছে যুদ্ধদিনের চরম আতঙ্কের ছাপ। যুদ্ধকালীন সময়ে শাহেদ-আসমানীর পুনঃমিলন যেমন চোখে পানি আনে, তেমনি যুদ্ধের পঁচিশ-ত্রিশ বছর পর উদয় হওয়া কংকনের কান্না শুনে ‘কংকন কাঁদছে না, কাঁদছে বাংলাদেশ’ -বক্তব্যে একইভাবে আপ্লুত হই। আবার মরিয়মের ভাগ্য অন্তর্গত হাহাকার তীব্র করে। বিয়ের পরপরই স্বামী নাইমুল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধের উত্তাপের মধ্যেও বাংলার চিরন্তন বধূর মতোই স্বামীর চিন্তা করে, পৌঁছাবে না জেনেও তাকে চিঠি লেখে। নাইমুলের পরিণতিতে চোখে জল আসে। ধার্মিক ইরতাজউদ্দিনের করুণ মৃত্যু অনুভূতিকে বেশি দগ্ধ করে। একটি উত্তাল সময় কীভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষকে ঠেলে দিয়েছিল স্বাধীনতার দিকে, কীভাবে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিল মানুষ, উপন্যাসে ছড়ানো আছে সে কথা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন স্তরের মানুষ কারো সঙ্গে হয়তো কারো সম্পর্ক নেই, অথচ সবাই সবার সঙ্গে যুক্ত! আশ্চর্য রকমের সরল-ঘরোয়া ভাষায় অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে লেখক একাকার করে দিয়েছেন গল্পের ভেতর। যেভাবে লিখে আনন্দ পেয়েছেন, পাঠকের মনোজগৎ ছুঁতে পেরেছেন বলে মনে হয়েছে গল্প সেভাবেই এগিয়েছে। যেখানে যে তথ্যের প্রয়োজন নির্দ্বিধায় তা ব্যবহার করেছেন, ফুটনোটে উল্লেখ করেছেন তথ্যসূত্র। কোথাও আবার মুক্তিযুদ্ধের দলিল থেকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তুলে দিয়েছেন। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে ক্রোধে-আবেগে-ঘৃণায়-মমতায় হৃদয় কেঁপে উঠেছে। ফিরিয়ে নিয়ে গেছে স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মিশ্র সময়ে, ১৯৭১-এ। (সোহেল নওরোজ; ১৪ নভেম্বর ২০১৬)
Was this review helpful to you?
or
বইটি যেহেতু অনেক আগে পড়া এবং পুনরায় পড়ার ইচ্ছা নাই, তাই আমি বইটা সম্পর্কে কিছু লিখতে চাইনি। কিন্তু বইটার রেটিং দেখে প্রতিদিন শঙ্কিত হই। শুধু রেটিং নয় মাঝে প্রিয় দশটি বই বিষয়ক একটি খেলা ফেসবুকে ছিল এবং এতে অনেকের প্রিয় দশটি বইয়ের তালিকায় আমি বইটিকে দেখেছিলাম। এবং দেখে শঙ্কিত হয়েছিলাম। বইটি পড়ার সময় অনেকগুলো পয়েন্টে জানা তথ্যের সাথে অমিল ঘটেছিল। এখন সবগুলো আমার আমার মনে নেই। বছরখানেক আগে এটা নিয়ে ফেসবুক বই পড়ুয়া গ্রুপে আলোচনার সময় (তখনও আমার বইটির স্মৃতি তেমন ছিল না) নিজের ব্রেন টাকিয়ে-টুকিয়ে কিছু ভুলের কথা বলেছিলাম। আজ আরেকটা মনে পড়লো। এগুলো আপাতত লিখে রাখি, পরবর্তীতে আরও কিছু মনে পড়লে বা জানতে পারলে রিভিউ (রিভিউ না বলে ভুলের লিস্ট বলা ভাল) আপডেট করা হবে। ১/ উনি বইটির ভূমিকায় "স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে"র নানা জায়গায় ওনার খটকা আছে বলে উনি উল্লেখ করেন। খটকার উদাহরণ দেবার জন্য একটি এখানে নারী নির্যাতনের একজন সাক্ষদানকারীর দেয়া জবানবন্দীকে উনি প্রশ্ন বিদ্ধ করে বলেছেন – “যা আমার কাছে একেবারে গ্রহণযোগ্য না তা হলো সাক্ষ্যদানকারী বলেছেন এই সব তরুণীদের বই-খাতা-কলম ছিল। অর্থাৎ স্কুল বা কলেজে যাবার পথে তাদের ধরা হয়েছে। যে ভয়ঙ্কর সময়ের কথা বলা হয়েছে সে সময় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। বইখাতা নিয়ে কারো বাইরে যাবার প্রশ্নই উঠে না।” এটি রাবেয়া খাতুন নামে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এক সুইপারের সাক্ষ্য। সাক্ষ্যটি নানা গবেষক তাদের লেখায় ব্যবহার করেছেন। এর মাঝে আছেন শাহরিয়ার কবির,"একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি" বইতে এই সাক্ষ্য ব্যবহার করেন। এর মাঝে আছেন মুনতাসির মামুন, বইয়ের নাম মনে পড়ছে না। এবং আরও অনেকে। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুধু নিজের যুক্তিকে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষীর উপর স্থান দেবার আগে ন্যূনতম গবেষণা করেননি। পাকিস্তানী সরকার রীতিমত হুকুম জারী করে ঢাকায় স্কুল-কলেজ খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছিল। ১ মে থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯ মে থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়। এমন কি ১৫ জুলাই থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে ছিল পুলিশ এবং রাজাকারদের টহল। পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্য সরকার পক্ষ থেকে এবং অংশ না নেবার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রচারণা করা হয়। এই তথ্য এত বইয়ে আছে যে এটা জানতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক পড়াশুনার দরকার হয় না। বহুল পঠিত জাহানারা ইমামের "একাত্তরের দিনগুলিতে"ই পাওয়া যায়। ২/ বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে "জিয়ে পাকিস্তান" নিয়ে সুশীল গোত্রীয় একটি বিতর্ক উপস্থাপন করেন, যার কোনো উত্তর তিনি নিজে দেন নি। ৭ মার্চের ভাষনে বঙ্গবন্ধু "জিয়ে পাকিস্তান" বলেননি তার প্রমাণ পেতে এই পোস্টটি দেখতে পারেন। ৩/ বইটির মাঝামাঝি এক জায়গায় মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকেও সুশীলতার সাথে কিছু রেফারেন্স ব্যবহার করে প্রথম ঘোষণা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন বলে যতদূর মনে পরে। কিন্তু উনি এটাকে প্রথম বলে দু-চারটা রেফারেন্স দিতে পারলে আমি বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে দিতে পারবো গাদাখানেক। এই পোস্টটা দেখা যেতে পারে। আর আমি মুক্তিযুদ্ধের বইতে ভুল দেখলে তাকে শূন্য রেটিং দেয়ার পক্ষে, কিন্তু আফসোস শূন্য দেবার সিস্টেম নাই, তাই এক।
Was this review helpful to you?
or
স্যারের লেখা সবচাইতে বড় উপন্যাস এটা।মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আশ্রিত একটা উপন্যাস। উপন্যাসের শুরুটা বেশ নাটকীয়ভাবে না হলেও,বিভিন্ন অধ্যায়ে আপনি যে নাটকীয়তার সম্মুখীন হবেন তা শ্বাসরুদ্ধকর। মাঝে মাঝে পৌছে যাবেন সেসব স্থানে,যেখানে আমার দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা তাদের মা কে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন,দেশের জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন। এটা এমনই একটা উপন্যাস,যেটাকে নিয়ে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা লেখা যাবে।কিন্তু এতটা ক্ষমতাও আমার নেই।বেশী কথা বাড়াতেও চাই না।আপনাদের ঘুম চলে আসতে পারে! যেহেতু এটা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস,সেহেতু এখানে ইতিহাসের বিখ্যাত বেশ কয়েকটি চরিত্রের আগমন ঘটাই স্বাভাবিক। লেখক চরিত্রগুলোর বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন,তা এক কথায় অতুলনীয়।সেসব চরিত্র আপনার কাছে একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠবে।কিছু চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে বহুগুণে,আর কিছু চরিত্রের প্রতি ঘৃণায় আপনার চোখ ছোট হয়ে আসবে। হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের ঘটনাগুলো পড়ে হয়তোবা আপনার চোখে পানি চলে আসবে।কি নৃশংস সেই অত্যাচার!!ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে। একাত্তরে ঘটে যাওয়া অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েই অনেকের মনে বড় কিছু ভুল ধারণা আছে।বইটা পড়লে সেই ভুল ধারণা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আমি মনে করি। হুমায়ুন স্যার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। স্যারের লেখা নিয়ে নিন্দুকেরা অনেক ধরনের কথা বলে থাকে। তাদেরকে অনুরোধ করবো কষ্ট করে জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি পড়ে দেখার জন্য। তিনি যে কতটা প্রতিভাবান তা তার সমালোচকরাও জানে। আমার মনে হয় তিনি তার লেখক সত্তার যতটুকু গুন আছে, তার সবটুকু দিয়ে লিখেছেন "জোছনা ও জননীর গল্প" উপন্যাসটি। যথেষ্ট সময় নিয়ে এবং ধীরে ধীরে। তার গতানুগতিক উপন্যাসগুলোর চেয়ে জোছনা ও জননীর গল্প একেবারেই অন্যরকম।অদ্ভুত অসাধারণ সুন্দর একটা উপন্যাস।পড়তে পড়তে সম্মোহিত হয়ে যাবেন।
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া সেরা বইগুলোর মধ্যে এই বইটি অন্যতম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত সুন্দর একটি উপন্যাস কখনো পড়ব ভাবতে পারিনি
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতার গল্প বইয়ের কথা বলতে গেলে তুলনা আসবেই, প্রথমেই বলে রাখলাম। আর এই বই হুমায়ুন আহমেদের অন্য বইয়ের মত নয়। এর কাহিনী আমাদের সবার জানা। তবে এক হিসেবে ভালো যে হুমায়ুন আহমেদ যদি সুনীলের মত পুর্ব পশ্চিম লিখতেন তবে বইয়ের দাম গিয়ে দাড়াত ২০০০ টাকা। আবার তিনি যেহেতু সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন না, সিনেমার মত ঠুশ ঠাশ দেখালে বিরক্ত হতাম। তিনি তার মতই। আপনি যদি বর্তমান সময়ে বেচে থাকেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষন নিয়ে এই বই পড়লে আপনার খটকা লাগতে পারে, বঙ্গবন্ধুর পাশের বিরোধী চরিত্রদেরকেই তিনি তার কালি দিয়ে গিয়েছেন। ওমা অবাক হচ্ছেন? তার লেখনীই তো এরকম। মধ্যাহ্ন পড়েছেন, নন্দিত নরকে পড়েছেন, তবে বুঝছেন না, তিনি কিভাবে সারা বই জুড়ে কাদামাটি দিয়ে মুর্তি গড়ে, শেষ পাতায় কঠিন শিলার রুপ দেন। বইয়ের কলেবর বড় হওয়ায় তা হয়তো আগেই হয়েছে। আর কাহিনী যেহেতু আমাদের জানা, পরিনতিও আমাদের জানা তাই হানাদারদের গায়ে অযথা পাপড়িবর্ষন বেশ গলায় লাগে। “পুরো বাঙালি জাতি এখন একজনের ডিউটি করছে, সেই একজনের নাম শেখ মুজিব” মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব আমাদের এক করেছেন, বাঙালি হয়তো রাতে কম্বলের নিচে মুড়ি দিয়ে আর সব দোয়ার সাথে সাথে মোনাজাত করেছে, হে আল্লাহ তুমি শেখ মুজিব রে বাচায় রাখিয়ো। অন্য লেখক হলে হয়তো অনেক উপমা দিতেন। কিন্তু এক বিহারির মুখে এই উচ্চারন সেই বাড়ির সামনে, মিছিলের প্রান্তে এক আলাদা মহিমা এনে দেয় বইতে। অন্যান্য উপন্যাসে আমাদের আদরের চরিত্রগুলোকে মারতে লেখক বেশ সময় নিতেন। এই বইতে তা করতে হয়নি। ইরতাজউদ্দিন, আসগর আলীকে টুক করে মিলিটারি গুলি করে মেরে দিল-শেষ। উপন্যাসে এরকম অনেক চরিত্র আমাদের জানান দিয়েছে, পুরো উপন্যাসে আমরাও অনেক গুলি খেয়েছি। আর সারাজীবন কত কিছু করে ছুটে বেড়ানো মানুষ শেষ মুহুর্তে কত তুচ্ছ জিনিসের পিছনে পিছু টান অনুভব করতে থাকে। মৃত্যুর লাইনে দাঁড়িয়ে সেই ইতার পানির জন্য মন টানে। যেন ইতার পানির ব্যবস্থা হলে সেই নিজেই লাইনে এসে দাঁড়ায়। সেই সময় পাওয়া যায় নি। মিলিটারি কনভয় চলতে থাকে। শেষ করার আগে আবার কেন জোসনা জননীর গল্প পড়লাম বলে রাখি, আইডিয়াটা আসে তুষার ভাইয়ের স্ট্যাটাস দেখে। সামনে বিসি এস ভাইভা, এত সময় কই?? তারপরে আবার বইয়ের যে দাম মোবাইলে নামিয়ে নিলাম-বাসের জ্যামে, বাথরুমের লাইনে-যাহ কিছুক্ষনের জন্য সবকিছু ভুলে থাকা যায়। বইটা পড়ার সময় মরিয়মকে কল্পনা করতে যেয়ে সেই বিপাশা হায়াতের কথা মনে পড়ছিল-“মা আমাকে দেখতে কী সুন্দর লাগছে” সেই উৎসুক দৃষ্টি। তার নায়ক নাইমুল মারা যাবেই। সুনীলের পুর্ব পশ্চিম যারা পড়েছেন তারা সেই সুর পাবেন, আর আনোয়ার পাশা তার রাইফেল রোটি আওরাতে নিজেই বলেছেন যেন নিজের কথা। কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে আজকাল রাজনীতি বিদরা নানা কথা বলে থাকেন। কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে বিতর্ক কাম্য নয়। ডিসেম্বর মাসের বর্ননায় কবি ছিলেন নীরব। যেন সমাজ বইয়ের পাতা খসখস করে লিখে চলেছেন। তাই তো সামান্য একটু নড়চড় হলেই বেশ নড়ে বসতে হয়। টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী যখন নিয়াজীর বাড়ানো হাতকে উপেক্ষা করে ইংরেজীতে বলেনঃ “নারী এবং শিশু হত্যাকারীর সাথে আমি করমর্দন করিনা” এই বিষয়টি আগেও আরেকটা উপন্যাসে পেয়েছি। যদি সত্য হয়ে থাকে-তবে সত্য মহান, ধন্যাবাদান্ত। বইটা মনে হয় বি এন পির আমলে প্রকাশিত হয়। নাহলে এখনকার সময়ে বইটি প্রকাশিত হলে দেয়ালের মত সংশোধনের আবেদন পড়তে পারত। অন্তুত বেগম জিয়ার কাহিনী বা মেজর জিয়ার কাহিনী এত পৃষ্ঠা জুড়ে থাকতো না। বাজারে অনেক বই আছে, যুদ্ধের আমার এখন কাদের সিদ্দিকীর বই পড়তে ইচ্ছে করছে, করছে হেমায়ের বাহিনীর বই পড়তে , যেই বাহিনীর প্রধানের আরেক নাম ছিল “হিমু”।
Was this review helpful to you?
or
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কিছু উপন্যাস চিরদিনই হৃদয়ছোঁয়া। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম একটি উপন্যাস “জোছনা ও জননীর গল্প”। মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য কাহিনিগাঁথা হুমায়ূন আহমেদের এ উপন্যাসটি। এটি যেন শুধু একটি উপন্যাস নয়, উপন্যাসের চেয়েও অনেক বেশি কিছু । গল্প বলার জাদুকর তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই বর্ণনা করে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের একেকটা মর্মস্পর্শী কাহিনীকথা। উপন্যাসের শুরুটা নীলগঞ্জ স্কুলের আরবি শিক্ষক ইরতাজুদ্দিন কাশেমপুরী কে দিয়ে। তিনি ঢাকায় এসেছেন তার ভাই শাহেদের সাথে দেখা করতে। শাহেদ ঢাকায় চাকুরি করে। ইরতাজুদ্দিন সাহেবের ঢাকায় আসা,শাহেদ আর তার স্ত্রীর মান-অভিমানের পালা যেন একাত্তরের গভীর জীবনবোধেরই পরিচয় বহন করে। উত্তাল ঢাকার সেই স্লোগানমুখর দিনগুলো লেখনির গভীরতায় উঠে এসেছে উপন্যাসের প্রতিটি পাতায়। আর প্রতিটি ঘটনার সাথে যেন মিশে আছে যুদ্ধদিনের চরম আতঙ্কের ছাপ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর চালানো পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার মর্মস্পর্শী বর্ণনা তিনি দিয়েছেন খুব দক্ষতার সাথে। উপন্যাসের সেই লাইনগুলোয় যেন তাই বারবার উঠে এসেছে বীভৎস সেই ভয়াবহতাগুলোই। “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র” থেকে বেশ ক’জন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনার মাধ্যমে যুদ্ধের নয় মাসের ভয়াবহতাটা তুলে ধরেছেন নিপুণভাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কবি কলিমউদ্দিনের কথা যাকে উপন্যাসের সূত্রধর হিসেবে দেখা যায়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনারও উল্লেখ পাওয়া যায় উপন্যাসটিতে। আলোকপাত করা হয়েছে মুজিব পরিবারের উপর। বেগম মুজিবের সেই অসহায় দিনগুলো আর তাঁর পরিবারের নানামুখী অস্থিরতাও উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। এত বিশাল একটা প্রেক্ষাপট কে ভিত্তি ধরে তা নিয়ে সুবিশাল সার্থক একটা উপন্যাস লেখা অবশ্যই একজন মহান এবং বড় মাপের লেখকের পরিচায়ক। হুমায়ূন আহমেদ সেই কাজটিই সম্পন্ন করেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে এবং সফলতার সাথে। সফল হয়েই হয়তোবা তিনি বলেছিলেন, “এখন যদি আমার মৃত্যুও হয় তবুও আক্ষেপ নেই।” উপন্যাসের অনেকগুলো চরিত্রের সাথে প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে কালজয়ী কিছু ব্যক্তিত্বের কথাও। মওলানা ভাসানী,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান,বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী,ইন্দিরা গান্ধী,ইয়াহিয়া খান,ভুট্টো,টিক্কা খান তথা সেই সময়কার কিছু নন্দিত এবং নিন্দিত-বিতর্কিত কিছু মানুষ। ঐতিহাসিক উপন্যাস মানে হুবহু কোন ইতিহাসের রগরগে বর্ণনা নয়। ইতিহাস এখানে আশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করে মাত্র। একটা কথা আছে–“ঔপন্যাসিক ইতিহাসের দাস নন,তিনি শিল্পের বশ”। শিল্পকে সঠিক পন্থায় শিল্পিত রূপ দেবার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত না করে একজন ঔপন্যাসিক মনের মাধুরী মিশিয়েই লিখতে পারেন বলা যায়। অর্থাৎ ইতিহাসের কঙ্কালের উপর শিল্পময় রক্ত-মাংসের আবরণ তৈরি করাটাই তাঁর মূল কাজ। আর এ গুরুদায়িত্ব পালনে হুমায়ূন আহমেদ যে কতটা সফল তা বলাই বাহুল্য। আমার বিশ্বাস মহান এ উপন্যাসটি তাঁকে মহান কিছু সাহিত্যিকের কাতারেই দাঁড় করিয়েছে । লেখালেখিতে তাঁর অনন্য মুন্সিয়ানাই বাংলা সাহিত্য জগতে যোগ করেছে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। নক্ষত্রটির নাম “জোছনা ও জননীর গল্প”। তাই হুমায়ূন স্যার কে স্যালুট জানিয়ে আবার বলতে চাই দৃপ্ত কণ্ঠে,উপন্যাসটি শুধু পাঠকের মনোরঞ্জনের নিমিত্তে কোন গতানুগতিক উপন্যাস নয়,এটি আমাদের অস্তিত্বের উপন্যাস, অস্তিত্ব রক্ষার উপন্যাস আর হাজারো নির্যাতন আর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মাথা তুলে দাঁড়াবার করুণ কাহিনীচিত্রের মর্মস্পর্শী-হৃদয়ছোঁয়া উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
খুবই সুন্দর একটা বই। অতিরঞ্জিত গল্প নয়, সত্য কাহিনী অবলম্বনে লেখা। অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
recommend to read
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ ও সমকালীন বিভিন্ন সত্য ঘটনার আলোকে লেখা একটি উপন্যাস। বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে লেখন সেসময়ের অবস্থা তুলে ধরেছেন। ঐতিহাসিক চরিত্রের পাশাপাশি গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের গল্পও এখানে উঠে এসেছে, যাদের কথা আমরা কখনো শুনিনি। লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের বাবার আত্মত্যাগ, মা ও ভাইকে নিয়ে ছুটোছুটি, পালিয়ে বেড়ানো ইত্যাদি বিষয়গুলোও গল্প আকারে এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাকিস্তান মিলিটারী বাহিনীর হত্যাকান্ড, সেই সাথে দেশের শান্তি কমিটির কার্যক্রমও ঊঠে এসেছে। তবে লেখক স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নিজের মতামতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, ভারতে বাংলাদেশীদের শরণার্থীশিবির, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, বিভিন্ন গেরিলা কাহিনী ইত্যাদি গল্পাকারে ফুটে উঠেছেন। এই দুঃসময়েও বিভিন্ন পরিবারের পারিবারিক কাহিনী, বিয়ে, মৃত্যু, কান্না, হাসি - আনন্দ খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, কবি শামসুর রহমান, আতাউল গণি ওসমানী থেকে শুরু করে একাত্তরের সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাহিনী প্রাসংগিকক্রমে সুন্দর ভাবে সংযোজন করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীনতার জন্য প্রানের আবেগ যখন দুর্দমনীয় হয়ে উঠে, তখন পৃথিবীর যত ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রই ব্যবহার করা হোক না কেন, সেই আবেগের কাছে তা তুচ্ছ হয়ে যায়। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি ১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে । এত বেদনাবিধুর অথচ গৌরবময় সময় বাঙ্গালীর জীবনে আর কখনও আসেনি। এই একটি বছরের মধ্যে সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশকে জানল ,চিনলো এবং বুঝতে পারলো তার সূর্যসন্তানদের , ভেতো বাঙালী নামে অভিহিত, কাপুরুষ পরিচয়ে পরিচিত বাঙালি জাতিও প্রয়োজনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ১৯৭১ এর ভয়াল সেই নয় মাসের কথা হুমায়ূন আহমেদ তার চিরাচরিত গল্প বলার মতো করেই খুব সহজ সরল ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন জোছনা ও জননীর গল্প বইটিতে। কাহিনী সংক্ষেপ: গল্পের শুরুটা নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক মওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর ঢাকায় আসার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। মওলানা ইরতাজউদ্দিন সহজ সরল গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ঢাকায় সে তার ভাই শাহেদকে দেখতে আসে।তার ভাই শাহেদ ঢাকায় চাকরি করে। তার স্ত্রী আসমানী ও তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান রুনিকে ছোট্ট সুখী একটা সংসার। শাহেদের স্ত্রী আসমানী খুব অভিমানী । শাহেদের সাথে একটু কথাকাটাকাটি বা ঝগড়া হলে সে রাগ করে তার বাবার বাড়ি কিংবা এমন কোনো আত্মীয়ের বাড়ি যেয়ে উঠে যার ঠিকানা শাহেদের জানা নেই। মার্চ মাসের এমনই একদিনে শাহেদের উপর আসমানী রাগ করে তার প্রিয় বান্ধবী কুমকুমের বাড়িতে চলে যায়। যে সময় শাহেদ আসমানিকে খুঁজতে থাকে ঠিক সেই সময় শহরে মিলিটারি নেমে শুরু করে তাদের তান্ডব লীলা।ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উপর চালায় নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ। দিনটি ছিল ২৫ শে মার্চ। বাঙালির ইতিহাসে যা কালরাত্রি নামে অভিহিত। ২৫ শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর বাঙালিরা বসে থাকেনি তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলে।সাধারণ, অতিসাধারণ কৃষক, মজুর, জেলে, কামার, কুমার, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী, ছাত্রছাত্রীসহ সকল স্তরের মানুষ সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যেমন জোছনা ও জননীর গল্পে আমরা দেখতে পারবো শাহেদের প্রিয় বন্ধু নাইমুলকে যুদ্ধে যেতে তার প্রিয়তমা স্ত্রী মরিয়মকে রেখে। নাইমুলের মতো আরো অনেক নাইমুল জীবনের মায়া ত্যাগ করে যোগ দিয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে। শুধু নাইমুলই নয় দেশ প্রেমের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন মওলানা ইরতাজ উদ্দিন কাশেমপুরীও । ইরতাজউদ্দিন শুধু আরবি শিক্ষক নন উনি নীলগঞ্জ মসজিদের জুম্মার নামাজের ইমামতিও করতেন। একদিন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, ' তিনি আর জুম্মার নামাজ পড়াবেন না। কারণ পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই। তার এরকম সিদ্ধান্তের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন বাসেত ও তার সহযোগীরা মিলে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় নীলগঞ্জে প্রদক্ষিণ করা হয় । তার এই লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে এক দর্জি তাকে কাপড় দিয়ে তাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে তাই সেই দর্জি ও তাকে হত্যা করে। তার মৃত দেহ পড়ে থাকে নদীর পাড়ে। ভয়ে কেউ সেখানে যাচ্ছে না। পরদিন দুপুরে নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, নীলগঞ্জ হাইস্কুলের হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। হঠাৎ একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সেই আগন্তুক ছিল বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। তার নাম আসলাম খাঁ।’ নাইমুলেরা দেশমাতাকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে গেছে যেমন তার অপরদিকে কবি শাহ কলিমউল্লাহর মত এক শ্রেণীর মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর তাবেদারী করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভয়ে এক কোটি মানুষ ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। শরণার্থী শিবিরে তাদের সেই দুর্বিষহ সময়টাও সুনিপুণ ভাবে বইতে তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নিজের ও তার পরিবারের অসহায় অবস্থাও বর্ণনা করেছেন। কি দুর্বিষহ সময় পার করছেন সবাই ভাবা যায়! সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেই সময়ের আলোচিত অনেকের কথা উল্লেখ করেছেন লেখক বইটিতে । যেমন, শেখ মুজিবুর রহমান, মুজিব বিহীন তার পরিবারের অন্যান্য সবার অবস্থা, মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন, জিয়াউর রহমান,কবি শামসুর রহমান জুলফিকার আলী ভুট্টো সহ আরো অনেক নন্দিত , নিন্দিত মানুষজন। পাঠ প্রতিক্রিয়া: কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের কিছু উপন্যাস চিরদিনই হৃদয়ছোয়া। তার মধ্যে জোছনা ও জননীর গল্প বইটি অনন্য। উপন্যাসের প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি ঘটনার সাথে যেন মিশে আছে একাত্তরের সেই ভয়াবহ আতঙ্কের ছাপ।বইটি পড়ার সময় মনে হয়নি বইটি আমি পড়ছি, মনে হয়েছে উপন্যাসে বর্ণিত সব চরিত্রের সাথে আমি নিজেও যেন উপস্থিত। তাদের সাথে আমি নিজেও যেন পথে পথে ঘুরছি। আসমানীর শাহেদকে ফিরে পাওয়ার যে আকুলতা সেটা যেন আমার নিজেরও। মরিয়মের নাইমুলকে কাছে পাওয়ার যে ব্যাকুলতা সেটা যেন আমার নিজেরও। অামরা এ প্রজন্মের যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি শুধু বইপত্র পড়ে জেনেছি তাদের জন্য এটি হতে পারে অবশ্যপাঠ্য।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদের লেখা সেরা বইগুলোর মধ্যে একটি । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে জোছনা ও জননীর গল্প লিখা হয়েছে । মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেমিক সম্পর্কে খুব ঘনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সংঘটিত তাঁর নিজ জীবনের এবং নিকট সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তিনি উপন্যাসিক আঙ্গিকে এতে ফুটিয়ে তুলেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সাহসী পদক্ষেপে সবে অবাক হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের রাজাকারদের আচরণ দেখে অবাক হয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
বই টা কিনলাম অনেক ভালো লাগতেছে। আর আগে নেট বই টা পরেছি অনেক ভালো লাগেছে। অনেক ভালো। দাম টাও অনেক কম । সব মিলেই অনেক ভালো
Was this review helpful to you?
or
In this book, the author describes the situation of Bangladesh in the time of our liberation war. In this book, it is described that the rough and ugly behavior of the Pakistani army's for our country's people and also write that, how they were paying the hard punishment and torcher on the domestic people.
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি বইয়ের নামঃ জোছনা ও জননীর গল্প লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ প্রচ্ছদঃ মাসুম রহমান গায়ের মূল্যঃ ৭৫০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫২৮ রেটিংঃ ১০/১০ আমরা যারা স্বাধীন দেশের নাগরিক, তারা হয়তো দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অল্পবিস্তর জানি কিন্তু কখনো কি ভেবেছি দেশ স্বাধীন করার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন বা লড়েছেন তাদের ঋণ শোধ করার কথা? একজন মানুষের যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, তেমনি দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। সেই ঋণ শোধ করার জন্যই লেখক হুমায়ূন আহমেদ লিখেন "জোছনা ও জননীর গল্প"। "জোছনা ও জননীর গল্প" শুরু হয়েছে একটি সাধারণ ঘটনা দিয়ে। সেটা ছিলো ফাল্গুন মাসের শুরু, যখন নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দীন কাশেমপুরী ঢাকায় আসেন উনার ছোট ভাই শাহেদ ও তার পরিবারের সাথে দেখা করতে। কিন্তু সেই বাসায় গিয়ে দেখেন উনার ভাই বাসা পরিবর্তন করেছে,ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে উনি শহুরে মানুষের কঠিন ব্যবহারে কষ্ট পান, এর চব্বিশ ঘন্টা পর শাহেদের বাসা খুঁজে পান। শাহেদ, শাহেদের স্ত্রী আসমানী এবং তাদের চার বছরের মেয়ে রুনী কে ঘিরে উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হলেও বইয়ের প্রত্যেকটি চরিত্রই পরিপূর্ণ ভাবে ফুটে উঠেছে। প্রধান চরিত্র থেকে বাচ্চু মিয়ার মতো ছোট চরিত্রও দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে। শাহেদের স্ত্রী আসমানী অনেক অভিমানী। স্বামীর সাথে সাধারণ কিছু নিয়েই অভিমান করে বাপেরবাড়ি চলে যায়, আবার স্বামীকে অনেক ভালোও বাসে। এমনি একদিন স্বামীর সাথে অভিমান করে সে চলে যায় বান্ধবীর বাড়িতে। সেদিন ছিলো ২৫ শে মার্চের কালরাত্রি, শাহেদ আসমানী কে খুঁজতে তার শ্বশুরবাড়িতে যায় কিন্তু আসমানী সেখানে ছিলোনা। শাহেদ সেদিনের সেই দুর্যোগপূর্ণ রাতে আশ্রয় নেয় অন্যলোকের বাড়িতে যেখানে একদিনেই তারা পরম আত্মীয় হয়ে যায়, বিপদ মানুষ কে সবকিছু ভুলে যেতে সাহায্য করে। তারপর দিন থেকে ঢাকা শহরের মানুষের জীবন হয়ে যায় খরকুটোর মতো, ভাসমান। আসমানীও তার বান্ধবীর পরিবারের সাথে ভাসতে থাকে, আজ এখানে তো কাল অন্য জায়গায়। পুরো উপন্যাস জুড়ে দেখা যায় শাহেদ আর আসমানীর একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার আকুলতা। শেষ পর্যন্ত কি তারা খুঁজে পেয়েছিলো একে অপরকে নাকি যুদ্ধ তাদের নিয়ে গিয়েছিল কালের গর্ভে? উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র শাহেদের বন্ধু নাইমুল। নাইমুল ছিলো অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ যার কোন পিছুটান ছিলোনা। যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছিলো পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেনের বড় মেয়ে মরিয়ম কে। কিন্তু বিয়ের পর সে চলে যায় দেশ মায়ের ডাকে, মুক্তিযুদ্ধে। অসম্ভব সাহস আর বিক্রমের সাথে সে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে যাওয়ার আগে স্ত্রী মরিয়ম কে কথা দিয়ে যায় সে যেখানেই থাকে অবশ্যই ফিরে আসবে। নাইমুল কি তার কথা রেখে মরিয়মের কাছে ফিরে এসেছিলো নাকি দেশ মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পরেছিলো অন্যান্য বীর সন্তানদের মতো? মাওলানা ইরতাজউদ্দীন ছিলেন ধর্মপ্রান একজন মানুষ। পাকিস্তানের প্রতি ছিলো তার অগাধ বিশ্বাস। সেই পাকিস্তানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল লোক পাকিস্তানি মেজরের আদেশ অমান্য করে জুমুআর নামাজ পড়াতে অস্বীকৃতি জানান সেজন্য উনাকে সহ্য করতে হয় চূড়ান্ত শাস্তি তাও মাথা নত করেননি। উপন্যাসটি তে যেমন রয়েছে শাহেদ, নাইমুল এবং মাওলানা ইরতাজউদ্দীন সাহেবের মতো মানুষ তেমনি রয়েছে কলিমউল্লাহর মতো লোক যারা গিরগিটির মতো সময়ের সাথে সাথে নিজেদের রূপ পরিবর্তন করে ফেলে। "জোছনা ও জননীর গল্প" ঐতিহাসিক উপন্যাস হলেও লেখক অনেকগুলো কাল্পনিক আর বাস্তব চরিত্রের সমন্বয়ে লিখেছেন। বইটিতে যেমন রয়েছে শাহেদ, আসমানী, রুনী, নাইমুলের মতো কাল্পনিক চরিত্র তেমনি রয়েছে শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী, কাদের সিদ্দিকী, ইয়াহিয়া, ভুট্টো, আরো অসংখ্য চরিত্র। বইটিতে লেখকের নিজের বাস্তব চিত্রও দেখা যায়।লেখকের বয়স ছিলো তখন ২৩ বছর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র। খুবই গোছানো ছিলো উনার জীবন। সেই জীবনে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। হুমায়ূন আহমেদের বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার যাকে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। তারপর থেকেই তাদের জীবনে শুরু হয় ভাসমান জীবনযাত্রা। যুদ্ধ শেষে অনেকে ফিরে এসেছে তাদের প্রিয়জনদের কাছে আবার অনেকেই পারেনি ফিরতে। বাংলার অসংখ্য দামাল ছেলেরা জীবন দিয়েছে যাদের কবরের ঠিকানা কেউ জানেনা। জোছনা রাতে বাংলা মা পরম যত্নে সেই বীর সন্তানদের কবরে নকশা তৈরি করেন। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য বই যেমন-একাত্তরের দিনগুলি, মা, মধ্যাহ্ন আরো অনেক বই যেগুলো আমার মনে অনেকখানি যায়গা করে রেখেছে সেখানে সবার উপরে থাকবে জোছনা ও জননীর গল্প। হুমায়ূন আহমেদের সাবলীল লেখনশৈলীর কারণেই বই একটানা শেষ করতে পেরেছি। বইটা পড়ার পর মন একধরনের বিষাদে ভরে উঠেছে। এতো কষ্ট,ত্যাগ আর তিতিক্ষায় পাওয়া এই স্বাধীনতা আমরা কত সহজভাবে ভোগ করছি, এই ভেবে খারাপ লাগছে যে এতো কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতার আমরা কতটুকু মূল্য দিতে পেরেছি? বইয়ের প্রচ্ছদ এবং কাগজের মান দুটোই চমৎকার। বইটা পড়ার পর কিছুদিন ধরে শুধু মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে ইচ্ছে করছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি রিভিউ নংঃ১৩ বইঃ জোছনা ও জননীর গল্প লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ ধরনঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ মুল্যঃ ৬৩৮ টাকা (রকমারি মুল্য) প্রকাশনীঃ অন্য প্রকাশ লেখক পরিচিতিঃ হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ – ১৯ জুলাই, ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। কাহিনী সংক্ষেপেঃ সাল ১৯৭১, ছোট্ট মেয়েটি পরম বিশ্বাসে বাবার বুকখানা আকড়ে ধরেছে। হাতে একগুচ্ছ রঙ্গিন চূড়ি। বাবার আর মেয়ের নিথর বুলেটবিদ্ধ দেহদুটো নদীগর্ভে ভেসে যাচ্ছে কোন অজানা স্রোতের ঠিকানায়। মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে শক্ত করে বাবাকে জড়িয়ে ছিলো নাম না জানা অচেনার ঐ ছোট্ট মৃত্যু পথ যাত্রী। আর বাবাও মেয়েকে আলিঙ্গনে বুলেটের যন্ত্রনায় শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত খুজেছিলো তার সন্তানে বেচে থাকার আশ্রয়। কেন ওদের এভাবে হত্যা করা হলো? কারণ, ওরা অনেক বড় এক অপরাধ করেছিল। ওরা বাচতে চেয়েছিলো স্বাধীনতার জোছনায় এই দেশ জননীর মৃত্তিকায়। আর এমন জানা আর অজানা অসংখ্য রক্ত ঝরা মানুষের উপাখ্যান হলো হয়তো স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠ উপাখ্যান জোছনা ও জননীর গল্প। ২৫ শে মার্চ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত, দীর্ঘ নয় মাস এই দেশের সাধারণ পরিবারগুলোর মাঝে যে বিভীষিকার ঝড় তোলে তেমন কয়েকটি পরিবারের গল্প নিয়ে এই মহান উপন্যাসটি। নীলগঞ্জ (ময়মনসিংহ) হাইস্কুলের শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাসেমপুরী; তার ভাই শাহেদ এবং স্ত্রী আসমানী , ঢাকায় কর্মরত; পিরোজপুরের পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান ও তার পরিবার (লেখক পরিবার); ধান্ধাবাজ কবি কলিম এবং ভালো ছাত্র নাইমুল, এই কয়েকটি নিয়ে মূলত এই উপন্যাসটি বিস্তৃতি ঘটে যারা প্রতিনিধিত্ব করে সমগ্র নিপীড়িত জাতিকে। শাহেদের উপর তুচ্ছ কারণে অভিমান করে ২৫ মার্চ রাগ করে আসমানি অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। সমগ্র দেশের ধধংসলীলায় উদভ্রান্ত হয়ে আসমানি দিশেহারা হয়ে ছোট মেয়ে রুনিকে নিয়ে ছুটে চলে বেচে থাকার ছায়াতলে। আর শাহেদ নিজের নিরাপত্তার কথা এক মূহুর্ত চিন্তা না করে নিজের শেষ সামর্থ্যটুকু দিয়ে ওদের খুজে চলে, এক সময় মনে হয় এই খোজ নিরন্তরভাবে ঠিকানাবিহীন হয়ে থাকবে। শাহেদ কি পেয়েছিল পরিবারের সান্নিধ্য আবিষ্কার করতে? শাহেদের বড় ভাই মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাসেমপুরী জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেছেন। এমনি হয়েছিলেন স্থানীয় শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তার বিবেক, তার ধর্মীয় শিক্ষা যখন তার ভেতরের লালিত দেশপ্রেমের আবেগকে তাড়িত করে তখন উনি পাক হানাদারদের সামনে উদ্ধত কন্ঠে সেই অনুভূতি ঘোষণা করতে পিছপা হয় না। কি হয়েছিলো এই চেতনাধারীর ভাগ্যে? শাহেদের বন্ধু মেধাবী ছাত্র নাইমুল বিয়ের একদিন পর স্ত্রী মরিময়কে রেখে ঝাপিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির আহবানে। নিজের মেধা আর সাহস পুজি করে গড়ে তোলে এক বীর মুক্তিবাহিনী আর হানাদারদের বুকে কাপন ধরিয়ে স্বাধীন করে এক জনপদ থেকে অন্য জনপদ। স্বামী নাইমূল মরিয়মকে কথা দিয়েছিলো, দেশ স্বাধীন হলে সে ফিরে আসবে। সে কি রাখতে পেরেছিলো তার কথা? পিরোজপুরের পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান ( লেখকের পিতা ) আত্নভোলা একনিষ্ঠ মানুষটি ঠিকই অনুধাবন করেছিলেন তার কর্তব্য। মাটির ঋণ মেটানোর দায়ে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। আর তার পরিবারলে ভোগ করতে মৃত্যু ভয়ের অমানসিক যন্ত্রনা। লেখক এবং লেখকের অনুজ অস্ত্রের প্রশিক্ষন নেবার অপরাধে হানাদারের পাগল কুকুরের মত এই পরিবারের পিছু নিয়েছিলো। এই পরিবারটিকে বাচাতে প্রাণ গিয়েছিলো নিরাপরাধ একটি মানুষের। শেষ পর্যন্ত কি পরিণতি হয়েছিলো এই পরিবারটির ভাগ্যে? পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ পড়ার সময় রীতিমত বুঁদ হয়ে ছিলাম। হুমায়ুন আহমেদের লেখার ধার আর সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধার। দুয়ে মিলে এক্কেবারে দোধারী তলোয়ার। কাটার সময় দুপাশেই কাটে, কাটতে কাটতে পড়া শেষে ছিন্নভিন্ন অবস্থা আমার। আশা করি যারে পড়েছেন তারাও ছিন্নভিন্ন হয়েছেন এবং যারা পড়বেন তারাও ছিন্নভিন্ন হবেন। আমি একইসাথে মুক্তিযুদ্ধ ভক্ত এবং হুমায়ুন ভক্ত। তাই আমি যদি বই নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাই তাহলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই বই বা তার গুণগত মান নিয়ে খুব বেশি না বলি। শুধু যেটুকু বললে মটেই বেশি বলা হয় না সেটুকুই বলি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া বই যে খুব কম পড়া হয়েছে তা না। কোন বই ৭১-এ দেশের রাজনীতির অবস্থা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে, কোনটাতে সামাজিক অবস্থা, কোনটাতে আবার মানবিক বিপর্যয়ের অবস্থা বেশি ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। এগুলোর কোনটাকে খারাপ বলতে চাই না। শুধু বলতে চাই, এই বইতে দেশের সার্বিক অবস্থা ফুটে উঠেছে। আরেকটা বড় ব্যাপার যেটা সেটা হল, অনেক উচ্চমার্গীয় বইতে ৭১'র বর্ননা এমন ভাবে করা হয় যে মনে হয় যেন বহুদূরের কাহিনি, নিজেকে বইয়ের কাহিনির সাথে রিলেট করতে কষ্ট হয়। কিন্তু জোছনা ও জননীর গল্প পড়ার আগে থেকেই আপনাকে রিলেট করে রেখেছে। আপনাকে আর আলাদা করে রিলেট করতে হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর পুরো মজাটা নিতে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কম-বেশি জানতেই হয়। কিন্তু এই বইয়ের জন্য সেটা দরকার নেই। আপনি শুধু পড়ে যান, কাজ এমনিতেই হয়ে যাবে। এটাই এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার বলে মনে হয়েছে আমার। আর হ্যা, এটাই সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস। তবে একটা ব্যাপার সম্ভবত মনে করিয়ে দেয়ার দরকার নেই যে ঐতিহাসিক হলেও এটা শুধুমাত্র ফিকশন, ইতিহাস নয়।
Was this review helpful to you?
or
আমার মতে শঙ্খনীল কারাগারের পরে এটা হুমায়ুন আহমেদের সেরা বই। মুক্তিযুদ্ধের সত্যি ঘটনার সাথে লেখকের কল্পনার জগত মিলেমিশে এক চমৎকার দৃশ্যপটে যেকোন পাঠক হারিয়ে যেতে বাধ্য। বাংলা সাহিত্যের যেকোন একটি বই যদি আমাকে পছন্দ করতে বলা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে জোছনা ও জননীর গল্প থাকবে এক নম্বরে। একজন বাঙালি হিসেবে, একজন বাংলাদেশি হিসেবে বইটি অবশ্যই অবশ্যই পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যর আমার পড়া সবচেয়ে প্রিয় বই গুলোর মধ্যে জোছনা ও জননীর গল্প এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা । এই বই সম্পর্কে আমি অনেক কিছু লিখতে পারবো । লেখক যে পরিশ্রম করেছেন বইটি লেখার জন্য তা দেখা যায় শেষের কয়েকটি পৃষ্টা পড়লে । ভূমিকা পড়লে বোঝা যায় । আমি মনে করি প্রতিটা বাংলাদেশীকে এই বইটি অবশ্যই পড়া উচিত । নিজে পড়া উচিত এবং সবাইকে নিয়ে পড়লে পাঠচক্রের মতো পড়লে বেশি ভালো হয় । যদি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে পড়া যায় তবে বেশি ভালো হয় । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হলে এই বই টি পড়ার কোন বিকল্প নেই । এক সংঘে আপনি অনেক তথ্য পাবেন । জানতে পারবেন সব খুটি নাটি বিষয়গুলো । রেফারেন্স বইগুলো আপনাকে আরো বেশি সহায়তা দিবে । জানতে ও বুঝতে । সব মিলে বাংলা সাহিত্যর এক অনবদ্য সৃষ্টি এই বইটি ।
Was this review helpful to you?
or
একজন মানুষের তার দেশের প্রতি, দেশ মাতৃকার প্রতি তার জন্মের ঋণ শোধ করার সাথে একজন লেখকের শোধ করার পার্থক্য কি খুব বেশি? সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে যে গুরুগম্ভীর শব্দটা আমরা হরহামেশাই শুনি সেই দায়বদ্ধতাটা লেখক হিসেবে কিভাবে পুরন করবেন একজন লেখক? মানুষের যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। হুমায়ূন আহমেদের কাছে একজন লেখক হিসেবে সে ঋণ শোধ করা যায় লেখার মাধ্যমে। আর দেশ দেশ মাতৃকার প্রতি একজন লেখক হুমায়ুন আহমেদের যে ঋণ তা শোধ করার মাধ্যম হসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’কে। ভূমিকাতেই হুমায়ূন আহমেদ পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন যে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ কোন ইতিহাসের বই না কিন্তু এটা এমন একটা উপন্যাস যে উপন্যাসের কাহিনীকে সাজানো হয়েছে দেশ মাতার ঋণ শোধ করার জন্য। একজন লেখক হিসেবে লেখাকে পন্য বানানোর জন্য নয়, একজন লেখক হিসেবে মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বইয়ের পসারের জন্য তিনি এ উপন্যাসটি লেখেন নি। তাই উপন্যাস হলেও হুমায়ূন চেষ্টা করেছে ইতিহাসের একেবারে কাছাকাছি থাকার। সে অর্থে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ আমার মতে উপন্যাসে আদলে গড়া ইতিহাসের দলিল। যে সে ইতিহাসের নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিল। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এর শুরুটা ফাল্গুন মাসের শুরুতে, তার মানে ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে যখন নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর ছোটভাই শাহেদ, ভাইয়ের বউ আসমানী আর ভাইব এর মেয়ে রুনিকে দেখতে ঢাকা আসে। এই মাওলানা ইরতাজউদ্দিন, শাহেদ, আসমানী আর তাদের ঘিরে থাকা মানুষজনদের নিয়ে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। এত বড় একটা উপন্যাসের চরিত্র চিত্রন করা খুব কঠিন কাজ। যে বিষয়টি এই উপন্যাসে চরিত্র চিত্রনে আমার খুব ভালো লেগেছে তা হল প্রতিটি চরিত্রের পরিপুর্নতা। এত বড় উপন্যাস হিসেবে এর প্রধান প্রধান চরিত্রের নয় মাসকাল সময়ের উত্থান-পতন যেন ভূমিকায় লেখা হুমায়ূন আহমেদের সেই লেখাটাই মনে করিয়ে দেয়ঃ ‘সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন মিশ্র এক জগত। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব।’ তাইতো মনটা আপ্লুত হয়ে উঠে যখন মাওলানা ইরতাজউদ্দিন বলে উঠে ‘যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই।’(পৃষ্ঠাঃ ৩৮০)। পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণায় রিরি করে উঠে আমাদের শরীর যখন দেখি নামাজ না পড়ানোর অপরাধে মাওলানা সাহেবকে উলঙ্গ করে নীলগঞ্জ বাজারে চক্কর দেয়ানো হয়। তারপর তাকে সোহাগী নদীর পাড়ে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। তারপরের ঘটোনায় আমরা আশ্চর্যান্নিত হয়ে যাই। ‘নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। হটাত একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি। মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম? আগন্তুক বলল, আমি বেলুচি রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।’ এটাই তো যুদ্ধ। সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। শাহেদের গল্পটা কি ভিন্ন কিছু। নিজের স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে তাদের খুজে ফেরার কি নিদারুন কাহিনী। শাহেদ যেন যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের সকল বাবাদের প্রতিনিধি, সকল প্রেমময় স্বামীদের প্রতিনিধি।সে যুদ্ধ যায় নি কিন্তু এ মাথা, ও মাথা চষে ফেলেছে মেয়ে আর বউকে পাওয়ার জন্য। রাস্তায় রাস্তায় তল্লাশী, মিথ্যা কথা বলা, কোন এক পাকিস্তানীর দাক্ষিন্য, কোনটা বাদ যায় না। জিজ্ঞাসাবাদ চলে। কেউ হয়তো ছাড়া পাবে, কেউ পাবে না। একটা কথায় যেন পুরো সময়টা ধরে রাখা হয়েছে ‘অনিশ্চয়তা। The day and night of uncertainty. (পৃষ্ঠাঃ ৩৫৭)’ কিংবা কংকনের গল্প। কংকনের সাথে লেখকের পরিচয় আমেরিকায়। সেখান থেকেই হয়তোবা লেখক শাহেদকে চিত্রিত করেছে। কোন একসময় যুদ্ধের সেই ‘অনিশ্চয়তা’র মধ্যে কংকনকে খুজে পায় শাহেদ। তারপর থেকে কংকনকে নিয়ে তার উদবাস্তু শিবিরে যাওয়ার পথ মৌসুমী ভৌমিকের ‘যশোর রোডের’ কথা মনে করিয়ে দেয়। কংকন তাও তার বাবা-মাকে খুজে পেয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো এমন অনেক কংকনের জন্ম দিয়েছে যারা আর তাদের বাবা-মাকে খুজে পায়নি। শাহেদ তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী-সন্তানকে খুজে পেয়েছে কিন্তু এমন ভাগ্য কজনের হয়েছে এই বাংলাদেশের জন্ম হতে গিয়ে। তাইতো লেখকের সামনে ‘রোরুদ্যমান তরুনীর দিকে তাকিয়ে হটাত আমার মনে হলো, কংকন কাঁদছে না। কাঁদছে আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের জননী। (পৃষ্ঠাঃ ৩৬১)’। মরিয়মের ভাগ্য কিন্তু ওরকম হয়নি। বিয়ের পরপরই স্বামী নাইমুল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। বাংলার চিরন্তন বধুর মতই নিজের বিপদের কথা চিন্তা না করে স্বামীর ভালোর চিন্তা করেছে। স্বামীকে চিঠি লিখেছে, জানে সে চিঠি পৌছুবে না কিন্তু কি লিখেছে ‘তুমি ভালো থেকো। শরীরের যত্ন নিও। বেশি সাহস দেখানোর দরকার নেই। অন্যরা সাহস দেখাক, তোমাকে সাহস দেখাতে হবে না।.......... আচ্ছা শোন, রাতে ঘুমুতে যাবার আগে আয়াতুল কুরছি পড়ে তিনবার হাততালি দিয়ে ঘুমুতে যাবে। তালির শব্দ যতদুর যায় ততদুর পর্যন্ত কোনো বালামুসিবত আসতে পারে না। আমরা সবসময় তাই করি। (পৃষ্ঠাঃ ২২১)।’ আমরা হাউমাউ করে কেদে উঠি যখন মরিয়মের ক্ষেত্রে ‘বাস্তবের সমাপ্তি এরকম ছিল না। নাইমুল কথা রাখেনি। সে ফিরে আসতে পারেনি তার স্ত্রীর কাছে। বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথাও তার কবর হয়েছে। কেউ জানে না কোথায়। এ দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কবরের মধ্যে তারটাও আছে। তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানকে ধারন করেছে। জোসনার রাতে সে তার বীর সন্তানদের কবরের অপুর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে, আহারে! আহ
Was this review helpful to you?
or
স্যারের লেখা সবচাইতে বড় উপন্যাস এটা।মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আশ্রিত একটা উপন্যাস। উপন্যাসের শুরুটা বেশ নাটকীয়ভাবে না হলেও,বিভিন্ন অধ্যায়ে আপনি যে নাটকীয়তার সম্মুখীন হবেন তা শ্বাসরুদ্ধকর। মাঝে মাঝে পৌছে যাবেন সেসব স্থানে,যেখানে আমার দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা তাদের মা কে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন,দেশের জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন। এটা এমনই একটা উপন্যাস,যেটাকে নিয়ে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা লেখা যাবে। কিন্তু এতটা ক্ষমতাও আমার নেই।বেশী কথা বাড়াতেও চাই না।আপনাদের ঘুম চলে আসতে পারে! যেহেতু এটা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস,সেহেতু এখানে ইতিহাসের বিখ্যাত বেশ কয়েকটি চরিত্রের আগমন ঘটাই স্বাভাবিক। লেখক চরিত্রগুলোর বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন,তা এক কথায় অতুলনীয়।সেসব চরিত্র আপনার কাছে একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠবে।কিছু চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে বহুগুণে,আর কিছু চরিত্রের প্রতি ঘৃণায় আপনার চোখ ছোট হয়ে আসবে। হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের ঘটনাগুলো পড়ে হয়তোবা আপনার চোখে পানি চলে আসবে।কি নৃশংস সেই অত্যাচার!! ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে। একাত্তরে ঘটে যাওয়া অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েই অনেকের মনে বড় কিছু ভুল ধারণা আছে।বইটা পড়লে সেই ভুল ধারণা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আমি মনে করি। হুমায়ুন স্যার নিঃশন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। স্যারের লেখা নিয়ে নিন্দুকেরা অনেক ধরনের কথা বলে থাকে। তাদেরকে অনুরোধ করবো কষ্ট করে জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি পড়ে দেখার জন্য। তিনি যে কতটা প্রতিভাবান তা তার সমালোচকরাও জানে। আমার মনে হয় তিনি তার লেখক সত্তার যতটুকু গুন আছে, তার সবটুকু দিয়ে লিখেছেন "জোছনা ও জননীর গল্প" উপন্যাসটি। যথেষ্ট সময় নিয়ে এবং ধীরে ধীরে। তার গতানুগতিক উপন্যাসগুলোর চেয়ে জোছনা ও জননীর গল্প একেবারেই অন্যরকম।অদ্ভুত অসাধারণ সুন্দর একটা উপন্যাস।পড়তে পড়তে সম্মোহিত হয়ে যাবেন
Was this review helpful to you?
or
ek kothay oshadharon!
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্প শুধুই যে একটা উপন্যাস , তা নয় ।লেখক স্যার হুমায়ুন আহমেদ এর একটা কালজয়ী উপন্যাস বলা যেতে পারে ।তিনি মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবিক চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছেন তার এই উপন্যাসের।মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো কেমন ছিল তার একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায় উপন্যাসটি পড়ে। আর শেনের দিকটায় একজন পাঠক নিশ্চিতভাবেই চমকিত হবেন। তরুণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যাদের জানার আগ্রহ আছে তারা এই উপন্যাসটি পড়তে পারেন।এটি নিঃসন্দেহেই আপনার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জ্ঞানকে বাড়িয়ে দিবে।
Was this review helpful to you?
or
tanjila omi কর্তৃক লিখিত রিভিউটি উনার নিজের নয়। এটি আগেই প্রকাশিত হয়েছে অন্য জায়গায়। বেশিরভাগ বাক্য হুবহু তুলে দেয়া অন্য একটি লেখা থেকে। বইয়ের প্রকৃত আলোচকঃ শামিম রহমান প্রকাশকালঃ ১০ মে ২০০৯, ০৮:৩৫ লিংকঃ http://tinyurl.com/ky9hp4m ভূমিকাতেই হুমায়ূন আহমেদ পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন যে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ কোন ইতিহাসের বই না কিন্তু এটা এমন একটা উপন্যাস যে উপন্যাসের কাহিনীকে সাজানো হয়েছে দেশ মাতার ঋণ শোধ করার জন্য। একজন লেখক হিসেবে লেখাকে পন্য বানানোর জন্য নয়, একজন লেখক হিসেবে মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বইয়ের পসারের জন্য তিনি এ উপন্যাসটি লেখেন নি। তাই উপন্যাস হলেও হুমায়ূন চেষ্টা করেছে ইতিহাসের একেবারে কাছাকাছি থাকার। সে অর্থে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ আমার মতে উপন্যসে আদলে গড়া ইতিহাসের দলিল। যে সে ইতিহাসের নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিল। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এর শুরুটা ফাল্গুন মাসের শুরুতে, তার মানে ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে যখন নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর ছোটভাই শাহেদ, ভাইয়ের বউ আসমানী আর ভিয়ের মেয়ে রুনিকে দেখতে ঢাকা আসে। এই মাওলানা ইরতাজউদ্দিন, শাহেদ, আসমানী আর তাদের ঘিরে থাকা মানুষজনদের নিয়ে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। এত বড় একটা উপন্যাসের চরিত্র চিত্রন করা খুব কঠিন কাজ। যে বিষয়টি এই উপন্যাসে চরিত্র চিত্রনে আমার খুব ভালো লেগেছে তা হল প্রতিটি চরিত্রের পরিপুর্নতা। এত বড় উপন্যাস হিসেবে এর প্রধান প্রধান চরিত্রের নয়মাসকাল সময়ের উত্থান-পতন যেন ভূমিকায় লেখা হুমায়ূন আহমেদের সেই লেখাটাই মনে করিয়ে দেয়ঃ ‘সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। সপ্ন ও দুঃসপ্নের মিশ্র এক জগত। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব।’ তাইতো মনটা আপ্লুত হয়ে উঠে যখন মাওলানা ইরতাজউদ্দিন বলে উঠে ‘যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই।’(পৃষ্ঠাঃ ৩৮০)। পাকিসাত্নীদের প্রতি ঘৃণায় রিরি করে উঠে আমাদের শরীর যখন দেখি নামাজ না পড়ানোর অপারধে মাওলানা সাহেবকে উলঙ্গ করে নীলগঞ্জ বাজারে চক্কর দেয়ানো হয়। তারপর তাকে সোহাগী নদীর পাড়ে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। তারপরের ঘটোনায় আমরা আশ্চর্যান্নিত হয়ে যাই। ‘নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। হটাত একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি। মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম? আগন্তুক বলল, আমি বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।’ এটাই তো যুদ্ধ। সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল।
Was this review helpful to you?
or
ভালবাসা নাকি স্বার্থপর। ভালবাসা কেবল ই নাকি স্বার্থ রক্ষার এক অভিনয়। হতে পারে তা মানব এর প্রতি মানবের ভালবাসার রুপক। কিন্তু দেশ মাতৃকার জন্যে বাংলার দামাল ছেলেদের প্রাণ উৎসর্গ কে কি তা বলা যায়? ১ খণ্ড ক্ষুদ্র ভূখণ্ড এর জন্যে ৩০ লাখ শহীদ হওয়া আর ৩ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম বিসর্জন কোন স্বার্থে কাছে পরাজিত? বাংলার ছেলেরা তার দেশ জননীর ভালবাসায় যেভাবে স্বার্থ আর মোহ কে পরাজিত করেছে, জোছনা আজও তার গর্বিত এক সাক্ষী। '৭১ এ বীর বাঙ্গালির যুদ্ধের অব্যাক্ত কিছু ঘটনা আর হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর মোহমুগ্ধকর শব্দচয়নে তাই প্রমাণিত হয়েছে ভালবাসা স্বার্থপর নয় বরং সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে।'৭১ এর সেই দিনগুলোর চাক্ষুষ সাক্ষী হতে চাইলে আজি কিনুন 'জোছনা ও জননীর গল্প' বইটি। -এস.এম.তৌফিকুল হাসান তুহিন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ০১৫২০১০২২৫৩
Was this review helpful to you?
or
পড়ার সময় রীতিমত বুঁদ হয়ে ছিলাম। হুমায়ুন আহমেদের লেখার ধার আর সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধার। দুয়ে মিলে এক্কেবারে দোধারী তলোয়ার। কাটার সময় দুপাশেই কাটে, কাটতে কাটতে পড়া শেষে ছিন্নভিন্ন অবস্থা আমার। আশা করি যারে পড়েছেন তারাও ছিন্নভিন্ন হয়েছেন এবং যারা পড়বেন তারাও ছিন্নভিন্ন হবেন। আমি একইসাথে মুক্তিযুদ্ধ ভক্ত এবং হুমায়ুন ভক্ত। তাই আমি যদি বই নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাই তাহলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই বই বা তার গুণগত মান নিয়ে খুব বেশি না বলি। শুধু যেটুকু বললে মটেই বেশি বলা হয় না সেটুকুই বলি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া বই যে খুব কম পড়া হয়েছে তা না। কোন বই ৭১-এ দেশের রাজনীতির অবস্থা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে, কোনটাতে সামাজিক অবস্থা, কোনটাতে আবার মানবিক বিপর্যয়ের অবস্থা বেশি ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। এগুলোর কোনটাকে খারাপ বলতে চাই না। শুধু বলতে চাই, এই বইতে দেশের সার্বিক অবস্থা ফুটে উঠেছে। আরেকটা বড় ব্যাপার যেটা সেটা হল, অনেক উচ্চমার্গীয় বইতে ৭১'র বর্ননা এমন ভাবে করা হয় যে মনে হয় যেন বহুদূরের কাহিনি, নিজেকে বইয়ের কাহিনির সাথে রিলেট করতে কষ্ট হয়। কিন্তু জোছনা ও জননীর গল্প পড়ার আগে থেকেই আপনাকে রিলেট করে রেখেছে। আপনাকে আর আলাদা করে রিলেট করতে হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর পুরো মজাটা নিতে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কম-বেশি জানতেই হয়। কিন্তু এই বইয়ের জন্য সেটা দরকার নেই। আপনি শুধু পড়ে যান, কাজ এমনিতেই হয়ে যাবে। এটাই এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার বলে মনে হয়েছে আমার। আর হ্যা, এটাই সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস। তবে একটা ব্যাপার সম্ভবত মনে করিয়ে দেয়ার দরকার নেই যে ঐতিহাসিক হলেও এটা শুধুমাত্র ফিকশন, ইতিহাস নয়।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ এর এই বইটি আমার খুব ভাল লেগেছে।দেশের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের অনুভূতি খুব নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন তিনি।সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা।সবাইকে কত সহজে আপন করে নিতেন। বাংলার সব মানুষ ই ছিলেন উনার আত্মীয়। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন যে দিশেহারা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা খুব স্পষ্ট লিখেছেন তিনি। আমার মনে হচ্ছিল বই পড়তে পড়তে আমিও যুদ্ধ দেখছি।বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো কানে বাজে যেনো! 3 3 3
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইঃ জোছনা ও জননীর গল্প(হার্ডকভার) লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ বইয়ের ধরনঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস প্রচ্ছদঃ মাসুম রহমান পৃষ্ঠাঃ ৫২৮ মুদ্রিত মুল্যঃ ৭৫০৳৳ রেটিংঃ ৫/৫ #রিভিউঃ বাংলা কথাসাহিত্যের নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদের সল্পদৈর্ঘ্যের উপন্যাসগুলো যতটা না পড়েছি, ঠিক তার বিপরীতে বিশাল আকারের উপন্যাসগুলো একেবারেই পরা হয়নি। ভাবলাম এবার একটু চেষ্টা করেই দেখিনা পড়তে পারি কিনা। সেই চেষ্টাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে গিয়ে বেছে নিলাম “জোছনা ও জননীর গল্প” -কে। আমি তখনো বুঝতে পারিনি কি অবাক করার মতন বিষয় অপেক্ষা করছে আমার জন্যে! বাংলাদেশের পুরো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা কাহিনি যা বলা হোক না কেন তা পুরোটাই এক মলাটে তুলে এনে একটা উপন্যাস সৃষ্টি সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার বটে। বাংলাদেশের দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিসংগ্রামের সত্যিকারের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে লেখক কয়েকটি পরিবারকে উপজীব্য করে সাজিয়েছেন উপন্যাসের মূল কাহিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, একেকটি পরিবার মুক্তিযুদ্ধের একেকটি পরিবেশ-চিত্র প্রকাশ করে। উপন্যাসের শুরুতে ইরতাজ উদ্দিনের সাথে আমরা পরিচিত হই। যে কিনা একজন ধর্মভীরু খুব সাধারণ মুসলমান এবং মসজিদের জুম্মার নামাজের ইমাম। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় দোয়া করেন। সেই তিনিই পাকিস্তানি মিলিটারিদের অত্যাচার দেখে বলে ওঠেন –“যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই”। এরপরেই পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে সোহাগী নদীর পাড়ে গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। ইরতাজ উদ্দিন যেন সেইসময়কার সাধারন মানুষের প্রতিচ্ছবি। আসমানি আর রুনিকে নিয়ে শাহেদের ছোট্ট সাজানো সংসার। সে সংসার ভেঙ্গে পড়ে ২৫ মার্চের পর। শাহেদ হারিয়ে ফেলে স্ত্রী-কন্যাকে। পাগলের মত খুঁজতে থাকে তাদের। সেও নানাভাবে নির্যাতিত হয় পাকিস্তানী বাহিনী দ্বারা। শাহেদের পরিবার অসংখ্য বাবা-হারা, স্বামীহারা, স্ত্রী-হারা পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে। শাহেদ হয়তো তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই তা পায়নি। গৌরাঙ্গরা হল পুরান ঢাকার একটি হিন্দু বনেদি পরিবার। ২৫ মার্চ রাতে তার স্ত্রীকে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে যায়, কন্যাকে গুলি করে মারে। পরে সেই শোক সইতে না পেরে সে পাগল হয়ে যায়। এই পরিবারটি দ্বারা আমরা বুঝতে পারি হিন্দুদের প্রতি পাকিস্তানিদের মনোভাব। নাইমুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের ফার্স্টক্লাস পাওয়া ছাত্র। বড় ডিগ্রী নিতে সে বিদেশে যাবে। সামনে তার সোনালী ভবিষ্যৎ। তাছাড়া সদ্য বিয়েও হয়েছিল তার। সেসব উপেক্ষা করে দেশমাতাকে শত্রুমুক্ত করতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে। নাইমুলের মত লক্ষ-কোটি মুক্তকামী জনতা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পরেছিল। উপন্যাসের এই অংশে এসে আমি চোখের জল আর আটকাতে পারিনি। আরও রয়েছে শাহ কলিমের চরিত্রের মত মানুষ। যারা সেই সময়টায় নিজের স্বার্থে দেশকে পাকিস্তানী শত্রুদের কাছে বলি দিতে পিছপা হয়নি। এরকম হাজার হাজার শাহ কলিমের মত মানুষও ছড়িয়ে ছিল সারা বাংলায়। এছাড়া অনেক “ঐতিহাসিক চরিত্র ও সময়” প্রয়োজনে এসেছে এই উপন্যাসে যেমনঃ ৭ই মার্চের ভাষন, ২৫ শে মার্চের কালোরাত্রী, স্বাধীনতাযুদ্ধ, অস্থায়ী সরকার গঠন, মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন, ইয়াহিয়া, জুলফিকার আলী ভুট্টো, নিক্সন, ইন্দ্রিরা গান্ধী। পুরো বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে কিছুইতো বাদ পড়েনি। এমনকি লেখকের পরিবারের তখনকার অবস্থাও বর্ণনা করেছেন সুনিপুনভাবে। পুরো মুক্তিযুদ্ধ যেন আবার জীবন্ত হয়ে ওঠলো হুমায়ুন আহমেদের জোছনা ও জননীর গল্পে। লেখক বইয়ের ভূমিকাতেই বলে দিয়েছেন যে উপন্যাসে বর্ণিত প্রায় সব ঘটনাই সত্যি। কিছু অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে ধার নেয়া। যেটার রেফারেন্স বইয়ের শেষে হুমায়ূন আহমেদ দিয়ে দিয়েছেন। যারা বইটি পড়েছেন তাদের অনেকের কাছেই অনেক ঘটনা কাল্পনিক বলে মনে হয়েছে। তাদের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একটা কথাই বলেছেন ‘সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। সপ্ন ও দুঃসপ্নের মিশ্র এক জগত। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব।’ সুতারাং যারা এখনো বইটি পড়েননি আমার বিশেষ অনুরোধ তারা যেন খুব দ্রুত পড়ে ফেলেন। কারন, ইতিহাসের কাছাকাছি যাবার একটা সুযোগ হয়তো তারা পেতে পারেন। লিঙ্কঃ https://www.rokomari.com/book/968/জোছনা-ও-জননীর-গল্প
Was this review helpful to you?
or
জোছনা ও জননীর গল্পঃ ভয়ঙ্কর সুন্দর সুররিয়েলিষ্টিক সময়ের গল্প। একজন মানুষের তার দেশের প্রতি, দেশ মাতৃকার প্রতি তার জন্মের ঋণ শোধ করার সাথে একজন লেখকের শোধ করার পার্থক্য কি খুব বেশি? সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে যে গুরুগম্ভীর শব্দটা আমরা হরহামেশাই শুনি সেই দায়বদ্ধতাটা লেখক হিসেবে কিভাবে পুরন করবেন একজন লেখক? মানুষের যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। হুমায়ূন আহমেদের কাছে একজন লেখক হিসেবে সে ঋণ শোধ করা যায় লেখার মাধ্যমে। আর দেশ দেশ মাতৃকার প্রতি একজন লেখক হুমায়ুন আহমেদের যে ঋণ তা শোধ করার মাধ্যম হসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’কে। ভূমিকাতেই হুমায়ূন আহমেদ পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন যে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ কোন ইতিহাসের বই না কিন্তু এটা এমন একটা উপন্যাস যে উপন্যাসের কাহিনীকে সাজানো হয়েছে দেশ মাতার ঋণ শোধ করার জন্য। একজন লেখক হিসেবে লেখাকে পন্য বানানোর জন্য নয়, একজন লেখক হিসেবে মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বইয়ের পসারের জন্য তিনি এ উপন্যাসটি লেখেন নি। তাই উপন্যাস হলেও হুমায়ূন চেষ্টা করেছে ইতিহাসের একেবারে কাছাকাছি থাকার। সে অর্থে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ আমার মতে উপন্যসে আদলে গড়া ইতিহাসের দলিল। যে সে ইতিহাসের নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিল। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এর শুরুটা ফাল্গুন মাসের শুরুতে, তার মানে ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে যখন নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর ছোটভাই শাহেদ, ভাইয়ের বউ আসমানী আর ভিয়ের মেয়ে রুনিকে দেখতে ঢাকা আসে। এই মাওলানা ইরতাজউদ্দিন, শাহেদ, আসমানী আর তাদের ঘিরে থাকা মানুষজনদের নিয়ে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। এত বড় একটা উপন্যাসের চরিত্র চিত্রন করা খুব কঠিন কাজ। যে বিষয়টি এই উপন্যাসে চরিত্র চিত্রনে আমার খুব ভালো লেগেছে তা হল প্রতিটি চরিত্রের পরিপুর্নতা। এত বড় উপন্যাস হিসেবে এর প্রধান প্রধান চরিত্রের নয়মাসকাল সময়ের উত্থান-পতন যেন ভূমিকায় লেখা হুমায়ূন আহমেদের সেই লেখাটাই মনে করিয়ে দেয়ঃ ‘সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। সপ্ন ও দুঃসপ্নের মিশ্র এক জগত। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব।’ তাইতো মনটা আপ্লুত হয়ে উঠে যখন মাওলানা ইরতাজউদ্দিন বলে উঠে ‘যা বলতেছি চিন্তাভাবনা করে বলতেছি। এখন থেকে আমি জুম্মার নামাজ পড়ব না। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। নবী-এ-করিম যতদিন মক্কায় ছিলেন জুম্মার নামাজ পড়েন নাই।’(পৃষ্ঠাঃ ৩৮০)। পাকিসাত্নীদের প্রতি ঘৃণায় রিরি করে উঠে আমাদের শরীর যখন দেখি নামাজ না পড়ানোর অপারধে মাওলানা সাহেবকে উলঙ্গ করে নীলগঞ্জ বাজারে চক্কর দেয়ানো হয়। তারপর তাকে সোহাগী নদীর পাড়ে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। তারপরের ঘটোনায় আমরা আশ্চর্যান্নিত হয়ে যাই। ‘নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাষ্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পরা একজন মহিলা প্রবল বর্ষনের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। হটাত একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি। মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম? আগন্তুক বলল, আমি বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।’ এটাই তো যুদ্ধ। সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। শাহেদের গল্পটা কি ভিন্ন কিছু। নিজের স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে তাদের খুজে ফেরার কি নিদারুন কাহিনী। শাহেদ যেন যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের সকল বাবাদের প্রতিনিধি, সকল প্রেমময় স্বামীদের প্রতিনিধি। যে যুদ্ধা যায় নি কিন্রু এ মাথা, ও মাথা চষে ফেলেছে মেয়ে আর বউকে পাওয়ার জন্য। রাস্তায় রাস্তায় তল্লাশী, মিথ্যা কথা বলা, কোন এক পাকিস্তানীর দাক্ষিন্য, কোনটা বাদ যায় না। জিজ্ঞাসাবাদ চলে। কেউ হয়তো ছাড়া পাবে, কেউ পাবে না। একটা কথায় যেন পুরো সময়টা ধরে রাখা হয়েছে ‘অনিশ্চয়তা। The day and night of uncertainty. (পৃষ্ঠাঃ ৩৫৭)’ কিংবা কংকনের গল্প। কংকনের সাথে লেখকের পরিচয় আমেরিকায়। সেখান থেকেই হয়তোবা লেখক শাহেদকে চিত্রিত করেছে। কোন একসময় যুদ্ধের সেই ‘অনিশ্চয়তা’র মধ্যে কংকনকে খুজে পায় শাহেদ। তারপর থেকে কংকনকে নিয়ে তার উদবাস্তু শিবিরে যাওয়ার পথ মৌসুমী ভৌমিকের ‘যশোর রোডের’ কথা মনে করিয়ে দেয়। কংকন তাও তার বাবা-মাকে খুজে পেয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো এমন অনেক কংকনের জন্ম দিয়েছে যারা আর তাদের বাবা-মাকে খুজে পায়নি। শাহেদ তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী-সন্তানকে খুজে পেয়েছে কিন্তু এমন ভাগ্য কজনের হয়েছে এই বাংলাদেশের জন্ম হতে গিয়ে। তাইতো লেখকের সামনে ‘রোরুদ্যমান তরুনীর দিকে তাকিয়ে হটাত আমার মনে হলো, কংকন কাঁদছে না। কাঁদছে আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের জননী। (পৃষ্ঠাঃ ৩৬১)’। মরিয়মের ভাগ্য কিন্তু ওরকম হয়নি। বিয়ের পরপরই স্বামী নাইমুল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। বাংলার চিরন্তন বধুর মতই নিজের বিপদের কথা চিন্তা না করে স্বামীর ভালোর চিন্তা করেছে। স্বামীকে চিঠি লিখেছে, জানে সে চিঠি পৌছুবে না কিন্তু কি লিখেছে ‘তুমি ভালো থেকো। শরীরের যত্ন নিও। বেশি সাহস দেখানোর দরকার নেই। অন্যরা সাহস দেখাক, তোমাকে সাহস দেখাতে হবে না।.......... আচ্ছা শোন, রাতে ঘুমুতে যাবার আগে আয়াতুল কুড়শি পড়ে তিনবার হাততালি দিয়ে ঘুমুতে যাবে। তালির শব্দ যতদুর যায় ততদুর পর্যন্ত কোনো বালামুসিবত আসতে পারে না। আমরা সবসময় তাই করি। (পৃষ্ঠাঃ ২২১)।’ আমরা হাউমাউ করে কেদে উঠি যখন মরিয়মের ক্ষেত্রে ‘বাস্তবের সমাপ্তি এরকম ছিল না। নাইমুল কথা রাখেনি। সে ফিরে আসতে পারেনি তার স্ত্রীর কাছে। বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথাও তার কবর হয়েছে। কেউ জানে না কোথায়। এ দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কবরের মধ্যে তারটাও আছে। তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানকে ধারন করেছে। জোসনার রাতে সে তার বীর সন্তানদের কবরের অপুর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে, আহারে! আহারে! (পৃষ্ঠাঃ ৫০৫)’ একটা দুটো বা তিনটি চরিত্র দিয়ে কিভাবে একটা দেশের প্রসব যন্ত্রনার গল্প বলা যায় আমি জানি না। তারপরেও এতা এমন একটা উপন্যাস যার কথা বলতে সাধ হয়। পাঁচশতের বেশি পৃষ্ঠার এ উপন্যাস যেন মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসের এক খন্ডিত রুপ, যার মাধ্যমে লেখক সে সময়কে তুলে ধরতে চেয়েছেন। মাওলানা ইরতাজউদ্দিনকে দিয়ে তার সাথের মানুষজনকে, শাহেদকে দিয়ে সে সময়ের কোন স্বামীকে, গোরাঙ্গকে দিয়ে হিন্দুদের অবস্থাকে, নাইমুলকে দিয়ে এদেশের মুক্তিকামী যুবকদের, শাহ কলিমের মাধ্যমে সুবিধাভোগী, সার্থান্নেসী মানুশকে চিত্রিত করেছেন লেখক সুনিপুনভাবে। কত ঐতিহাসিক চরিত্র যেন সময়ের প্রয়োজনে এসেছে এই উপন্যাসে। কত ঐতিহাসিক সময় এসেছে এখানে। ৭ই মার্চের ভাষন, ২৫ শে মার্চের কালোরাত্রী, তারপর যুদ্ধ, অস্থায়ী সরকার গঠন, মাওলানা ভাষানী, তাজউদ্দিন, ইয়াহিয়া, জুলফিকার আলী ভুট্টো, নিক্সন, ইন্দ্রিরা গান্ধী; কে নেই এ উপন্যাসে! সবাই আছে। সবাইকেই যে থাকতে হবে। এটা যে উপন্যাস না, এটা যে একজন লেখকের দেশের প্রতি ঋণ শোধের চেষ্টা। এটা যেন পুরো বাংলাদেশের সে সময়কার গল্প। ঢাকার গল্প, নীলগঞ্জের মাধ্যমে গ্রামের গল্প, বরিশাল বা পিরোজপুরের মাধ্যমে নদীমাতৃক বাংলাদেশের গল্প, শরনার্থী শিবিরের গল্প, ভারতের কলকাতার গল্প, অস্থায়ী সরকারের গল্প। এটা যেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সাহসী যোদ্ধার গল্প, সুজোগসন্ধানী সুবিধাবাদীদের গল্প, কাপুরুষতার গল্প, বাবার গল্প, ভাইয়ের গল্প, বন্ধুর গল্প, শত্রুর গল্প, মায়ের গল্প, মেয়ের গল্প, বীরঙ্গনাদের গল্প, শহীদদের গল্প, গাজীদের গল্প; কারা নেই এখানে? উপন্যাসে বর্ণিত প্রায় সব ঘটনাই সত্যি। কিছু হুমায়ূন আহমেদের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা যেটা আমরা উপন্যাসের মাঝে প্রায়ই দেখতে পাই। ইতিহাসের যে সময়টার তিনি বর্ণনা করেছেন সে সময় বা তার কাছাকাছি সময়ের তার ব্যাক্তিগত জীবনের ঘটনা প্রবাহ তিনি তখন তুলে ধরেছেন। কিছু অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে ধার নেয়া। যেটার নির্গঘন্ট বইয়ের শেষে হুমায়ূন আহমেদ দিয়ে দিয়েছেন। তিনি উপন্যাস প্রকাশের আগেই পান্ডুলিপিটা অনেককে পড়িয়েছেন। এই প্রজন্মের পাঠক, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের অনেকের কাছেই অনেক ঘটনা কাল্পনিক বলে মনে হয়েছে। তাদের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একটা কথাই বলেছেন ‘সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। সপ্ন ও দুঃসপ্নের মিশ্র এক জগত। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব।’ হুমায়ূন আহমেদ সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর সুররিয়েলিষ্টিক সময় পার করে এসে তার খানিকটা ধরতে চেয়েছিলেন এ প্রজন্মের জন্য যাতে তার মানবজীবন ধন্য হয়। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ পড়ে মনে হয় তার অনেকটাই তিনি ধরতে পেরেছেন।
Was this review helpful to you?
or
One of the best novel i have ever read.
Was this review helpful to you?
or
'জোছনা ও জননীর গল্প' বইটা না পড়লে অনেকেই আন্দাজ করতে পরবে না হুমায়ুন আহমেদ কত বড় একজন লেখক! আমার কাছে মনে হয়েছে গল্পটা সুষমভাবে চারদিকে ছড়ানো-ছিটানো। এতোবড় গল্প হওয়া সত্ত্বেও এতটুকু বিরক্তি অনুভূত হয়নি। আমি আসলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখা পড়তে আগ্রহী নই; কেন? তাও জানিনা। কিন্তু এ গল্পের প্রতিটা চরিত্র আমার মনে দাগ কেটেছে। মনে হয়েছে- আমার আশেপাশে এমন ঘটনা হচ্ছে এবং আমি সচক্ষে তা পরখ করছি। আমার অনেক ভালো লেগেছে। গভীর শ্রদ্ধা প্রিয় 'হুমায়ূন আহমেদ❤'।
Was this review helpful to you?
or
প্রত্যেকটা জাতিরই এক বা একাধিক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থাকে, তেমনি বাঙালি জাতির এক অসামান্য গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ । তাই বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ মুক্তিযুদ্ধকে জানা, বোঝা, এক কারন কি ছিল, এর ফলাফল কি...ইত্যাদি...ইত্যাদি । আর এর জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বই বেশি বেশি পড়া । আমার মতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অর্থাৎ এর কারণ, সুচনা, পরিণতি, পাক বাহিনির নিষ্ঠুরতা সব জানতে হলে "জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প" -- বইটি পড়া একান্ত প্রয়োজন। নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সারাজীবনের বেশকটা দিন ব্যয় করেছেন এই বইয়ের পেছনে। তিল তিল করে দীর্ঘ সময় নিয়ে রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য এক উপন্যাস । লেখক এই বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর নিজ পরিবারের দুরাবস্থা ও তুলে ধরেন । লেখক তুলে ধরেন তাঁর সাহসী ও দেশপ্রেমিক পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদের কথা । ফয়জুর রহমান আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য থানার অস্ত্রভাণ্ডার থেকে অস্ত্র বের করে দিয়েছিলেন । পরবর্তীতে রাজাকারেরা উনাকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে । লেখক তাঁর বাবার লাশ পর্যন্ত খুঁজে পাননি । বাস্তবিকপক্ষে "জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প" বইটি পড়লে চোখে অবশ্যই পানি আসবে । লেখক এই বইতে শুধুমাত্র যে নিজের কথা বলেছেন তা নয়। বইটি মূলত সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে । এর মাঝে আছে বঙ্গবন্ধুর অবদান, মেজর জিয়ার অবস্থান, বেগম জিয়ার পাক বাহিনীর হেফাজতে থাকা, কাদের সিদ্দিকির অপারেশন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশন, পাক বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের নৃশংসভাবে মৃত্যু হওয়া, পাক বাহিনী কর্তৃক অসংখ্য নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন, ক্যাম্পে আটকে রেখে দিনের দিনের পর দিন শারিরিক নির্যাতন কোনো কিছুই বাদ পরেনি এই বইয়ে । এই বইটি মূলত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ঐতিহাসিক উপন্যাস । তাছাড়াও এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল ও । আজ খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখা যায় বর্তমান প্রজন্মএর মানুষ বহু ত্যাগ আর রক্তপাতের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর বর্বরতা, রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতা , অত্যাচার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা । তাদের প্রতি আমার আহ্বান , তোমরা অন্তত "জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প" বইটা একবার পড়ে দেখো। আর, এই বইয়ের লেখক বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার তুঙ্গস্পর্শী ও মেধাবী কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি তাঁর এই মহান কর্মের জন্য । পাশাপাশি রকমারি.কম কে ধন্যবাদ জানাই এই বইটি ঘরে বসে সহজে কেনার সুযোগ দানের জন্য ।
Was this review helpful to you?
or
জীবিত কিংবা লেখা থামিয়ে দেননি এমন কোন লেখকের বই আলোচনা করতে গেলে, বইটির পাশে লেখক স্বয়ং দাঁড়িয়ে থাকেন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যতটা না বইটার আলোচনা হয় তার চেয়ে লেখক নিয়েই আলোচনা বেশী হয়। ‘ গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ তাঁর স্বভাবমতন এ উপন্যাসেও কুহকি বাস্তবতায় পাঠককে মোহিত করে রেখেছেন; ইলিয়াস তাঁর রাগী দৃষ্টিতে নিম্নবিত্তের শোষিত-পীড়িত জীবনের আখ্যান তুলে ধরেছেন; শীর্ষেন্দুর এ উপন্যাসটিতেও উঠে এসেছে লেখকের আধ্যাত্মিকতার বোধ’ – এ ধরণের মন্তব্য, বই আলোচনায়, আমাদের দৃষ্টি বইটি থেকে সরিয়ে দিয়ে লেখকের বৈশিষ্ট্যের দিকেই নিয়ে যায়, ফলত আলোচ্য বইটি অনেকটা গুরুত্ব হারায়। এমন নয়, গ্রন্থালোচনায় লেখকের বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা অপরাধ; যেকোন বইয়ের স্বার্থকতা নিরুপনে সে গ্রন্থে লেখকের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য কতটুকু তা অবশ্যই একটা জরুরী মানদন্ড। একজন নবীন লেখকের উপন্যাসটি যদি ‘ পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের সমমানের হয় তবে তিনি আমাদের প্রশংসা পাবেন কিন্তু তাঁর উপন্যাসটির বৈশিষ্ট্য যদি বিভূতিভূষণের তবে সেটা আর আলোচনারই যোগ্য থাকে না। প্রশ্ন হচ্ছে লেখকের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কি সবসময়ই জরুরী? আমি বলবো, না। একজন তরুণ লেখকের লেখায় তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বা ট্রেডমার্ক লক্ষ্য করা গেলে সমালোচকের দায় থাকে পাঠকের সামনে সেটি তুলে ধরা, কিন্তু যে লেখকের সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলো ইতোমধ্যে তার পূর্বের গ্রন্থসমূহে উঠে এসেছে, তাঁর নতুন বইয়ে লেখক যদি সেসব দিক থেকে সরে এসে অন্য কোন ধরণে মুখ না ফেরান সে লেখকের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা বাহুল্য মাত্র। হুমায়ূন আহমেদ একজন অতিপ্রজ এবং অতি-পঠিত লেখক। তাঁর এই অতিপ্রজতা ও তাঁর বইয়ের অতি-পঠন হুমায়ূন আহমেদের যেকোন বই আলোচনায় প্রভাব ফেলে এসেছে। সমালোচকেরা সবসময়ই ব্যস্ত থেকেছেন এই বইয়েও আমাদের পরিচিত লেখকের কোন কোন দিক উঠে এসেছে। ফলে তাঁর অসংখ্য বই-ই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এর রিভিউ পড়ে আমরা আগ্রহ হারাই, ভাবি নতুন কিছু আর নেই এতে, সমালোচক তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললেনই ‘সবই পরিচিত হুমায়ূন আহমেদীয়’ লেখা। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর প্রত্যাশা মতই হুট করে তাঁর স্তাবকের সংখ্যা বেড়ে গেলো প্রচুর। কোন আলোচনা ছাড়াই একদল (যাদের অনেককেই কখনো হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে মুখ খুলতে দেখিনি) হুমায়ূন আহমেদ-কে বানিয়ে দিচ্ছেন বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক, একদল বানাচ্ছেন পৃথিবীর! আন্দালিব রাশদি এক লেখায় পুশকিনের উদ্ধৃতি দিয়ে এদের সম্বন্ধে বললেন, ‘they can only love the dead’। যাই হোক, এত স্তাবকতাতেও ক্ষতি হচ্ছে ঐ হুমায়ূন আহমেদের বইয়েরই। ভাবলাম, হুমায়ূন আহমেদ নেই, তিনি আরও ভালো কোন লেখা আমাদের দিবেন সে প্রত্যাশাও আর করতে পারবো না তাঁর কোন লেখা পড়ার সময়; তাঁকে বুঝতে হলে পুরোনো বইগুলোর কাছেই যেতে হবে। আরও একবার পড়ে ফেললাম তাই ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। এ উপন্যাসের কাহিনি সংক্ষেপে বলা কঠিন; অসংখ্য চরিত্রের, অসংখ্য ঘটনা এসে মিলেছে এতে। তবু মোটামুটি সংক্ষেপে বলে নেই একবার। দিনক্ষণ উল্লেখ না থাকলেও বোঝা যায় কাহিনি শুরু হয়েছে একাত্তরের মার্চ মাসের শুরুর দিকে। নীলগঞ্জ হাই স্কুলের এসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার ইরতাজউদ্দিনের, ঢাকায় তার ভাই শাহেদের বাসায় আসার বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসের শুরু। শাহেদ ঢাকায় চাকরি করে, তার স্ত্রী আসমানী, মেয়ে রুনি, বন্ধু নইমুল আর গৌরাঙ্গ। যুদ্ধ শুরুর আগে ঢাকা শহরের থমথমে পরিবেশে তাদের দৈনন্দিন জীবন চলতে থাকে। উপন্যাসের মুক্তিযুদ্ধের কথা আসবার আগেই আমরা আরও পরিচয় পেয়ে যাই পুলিশ অফিসার মোবারক সাহেব ও তার পরিবারের, কবি কলিমউল্লাহর। বইয়ের একশত সাঁইত্রিশ পৃষ্ঠায় পঁচিশে মার্চের কালরাত্তিরের বর্ণনার মাধ্যমে আমরা প্রবেশ করি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে। পঁচিশে মার্চ রাতের বর্ণনাতেই আমরা দেখি রাজনীতি বিচ্ছিন্ন সাধারণ মানুষগুলোর জীবনে কীভাবে রাজনীতির আঁচ নেমে এসেছিল। শাহেদ হারিয়ে ফেলে তার স্ত্রী আসমানী ও মেয়ে রুনিকে; মিলিটারিরা হত্যা করে গৌরাঙ্গের মেয়ে রুনুকে, ধরে নিয়ে যায় তার স্ত্রী নীলিমাকেও; খুন হয়ে যান মোবারক হোসেন। ছাব্বিশে মার্চ সকাল থেকে চরিত্রগুলোর জীবন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত থাকে না, হিংস্র রাজনীতির কালো থাবার নিচে ঢাকা পড়ে। ঐ ভয়াল এক রাত্রির উম্মত্ততায় বিপর্যস্ত মানুষগুলোর নিজেকে ফিরে পাওয়ারই গল্প বাকী উপন্যাসজুড়ে। শাহেদ নয় মাস ধরে খুঁজতে থাকে তার হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী-মেয়েকে; ঘটনাচক্রে ইরতাজউদ্দিন হন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, আবার তিনি জালেমের শাসনে জুমার নামাজ পড়াতে অস্বীকার করে শহীদ হন; কলিমউল্লাহ গোলাম কলন্দর নাম নিয়ে হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কবি, মোবারক সাহেবের মেঝ মেয়েকে বিয়ে করে সে; গৌরাঙ্গ উম্মাদ হয়ে পড়ে; যাকে আমরা সাতই মার্চের ভাষনের দিনও দেশ সম্বন্ধে নির্বিকার দেখেছিলাম, সেই নইমুল যুদ্ধে চলে যায়। রচিত হতে থাকে ব্যক্তিক ও রাজনৈতিক জীবনের একীভুত এক গাঁথা, মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের সংগ্রাম। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ঘটনা এ উপন্যাসে এসেছে, এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিংবদন্তীর কথা। সেই সাথে এইসব ঘটনা, ঐতিহাসিক চরিত্র কীভাবে প্রভাবিত করেছে, উদ্বেলিত করেছে, উজ্জীবিত করেছে সাধারণ মানুষকে, বদলে দিয়েছে এই ভূখন্ডের সাতকোটি মানুষের জীবন তাও এসেছে গভীরভাবেই। উপন্যাসটি তাই ইতিহাসের চাপে ঢাকা পড়ে নি বরং হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক এক ঘটনায় বদলে যাওয়া মানুষের আখ্যান। মনুষ্য-সৃষ্ট এক তান্ডবে কতগুলো কাছকাছি থাকা মানুষের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আর অচেনা-অজানা কিছু মানুষের কাছে চলে আসার গল্পই ‘জোছনা ও জননী’। এত সব ঘটনা, চরিত্র আর ইতিহাস নিয়ে লেখা নিয়ে লেখা হলেও ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এর গল্প বলায় এক আশ্চর্য এক ধারাবাহিকতা আছে- যদিও খুব ব্যতিক্রমি ভঙ্গিতে। চারশ তিরানব্বই পৃষ্ঠার বিশালাকায় এই বইটিতে গল্প বলার ধারাবাহিকতায় কোথাও এতটুকু ছেদ পড়েনি। প্রায় জয়েসীয় গল্প বলার ঘরাণায় ঔপন্যাসিক গল্পে নিয়ে এসেছেন- স্মৃতি-কথন, চিঠি, স্বপ্নদৃশ্য, ভাষণ/বক্তৃতা, খবরের কাগজের কাটিং, মুক্তিযুদ্ধের দলিল। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন গফুর আর মজনুর কাহিনি, যেটা নিজেই হতে পারতো চমৎকার এক ছোট গল্প। করেছেন এমন আরো অনেক নিরীক্ষা, এর সবগুলোই সফল হয়েছে বলা যাবে না। ঔপন্যাসিক একজন বল-জাগলারের মতন তাঁর হাতের সমস্ত বল হাওয়ায় ছুঁড়ে মেরেছেন, যার সব কয়টি হয়তো হাতে এসে পৌঁছেনি। মনে রাখতে হবে, খেয়ালী শিল্পী কখনই পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন হন না; গল্পের শক্ত গাঁথুনি দেখতে কেই বা কাফকা পড়তে যায়? ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ নামের যে সাহসী উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন- সেটিকে আরও নিঁখুত গাঁথুনি দিতে গেলে হয়তো এর অনেকটা প্রাণ-ই হারিয়ে যেত। কোন গ্রন্থই অবশ্য-পাঠ্য নয়। ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ না পড়েও কাটানো যায় চমৎকার ঝামেলাহীন এক জীবন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, এমনকী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে আগ্রহীরাও না পড়লেও চলবে। এ নিয়ে কম বই তো আর নেই! তবে একজন খেয়ালী শিল্পীর দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে, অনুভব করতে চাইলে পাঠক হয়তো এই উপন্যাসটির কাছে বারবার ফিরে আসবেন। আর হ্যাঁ, উপন্যাসের নতুন ফর্মের জন্য দিবা-রাত্রি জেগে কা্টানো তরুণ লেখকেরা, এটি আপনাদের জন্য একটি অবশ্য-পাঠ্য বই!
Was this review helpful to you?
or
সেরা বই, আমি বলবো অন্তত। মানুষের অনুভূতি নিয়ে খুব ভালো খেলতে পারেন হুমায়ুন আহমেদ। একটি চরিত্রকে তিলে তিলে গড়ে তুলে পাঠকের অবচেতন মনে তার প্রতি যেমন একটা মায়া তৈরি করে ফেলেন, ঠিক তেমনি চরিত্রটিকে হঠাৎ করেই একটা খারাপ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়ে পাঠককে এক ধরণের (কী যে আনন্দ পান, আল্লাহ-ই জানেন!! ) তবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যতগুলো কাজ তিনি করেছেন, এমনকি মানবজীবনের বাস্তবতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে যতভাবে তিনি পরীক্ষা নীরিক্ষা করেছেন, তার সবগুলিকে ছাড়িয়ে গেছে এই বইটি। অনেকগুলো দিক থেকে কাহিনী এগোয় এখানে। পরে সবগুলোর পরিণতি আসে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট থেকে। লেখকের নিজের জীবনের ঘটনাকে তিনি যেমন বাবার প্রেক্ষাপট থেকে এনেছেন , তেমনি অনেক বিখ্যাত লোকদের মুক্তিযুদ্ধকালীন আত্মত্যাগের কথাও এসেছে। আমার ভালোলাগার কারণ, বইটি আমাকে কাঁদিয়েছে। বিশেষ করে এর ভেতরে যেখানে বীরাঙ্গনাদের বর্ণনার দুটি সুদীর্ঘ পৃষ্ঠা রয়েছে। অনেক কথা বলেও এর আবেগকে বোঝাতে পারবো না, আমি শুধু হুমায়ুন আহমেদের কল্পনা করা শেষ দৃশ্যটা ভাবতে পারি- "নাইমুল কথা রাখেনি। সে ফিরে আসতে পারেনি তার স্ত্রীর কাছে। বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথাও তার কবর হয়েছে। কেউ জানে না কোথায়। এই দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কবরের মাঝে তারটাও আছে। তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানকে ধারণ করেছে। জোছনার রাতে সে তার বির সন্তান্দের কবরে অপূর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে আহারে আহারে।" ভাবতে ভাবতে আমিও যেন চন্দ্রগ্রস্থ হয়ে পড়ি... শহীদ হয়ে তারা হয়ে যোদ্ধাদের দিকে তাকিয়ে থাকি... অনিমিখ, অপলক নয়নে...
Was this review helpful to you?
or
আমি আসলে "জোছনা ও জননীর গল্প" কে শুধু একটি উপন্যাস বলতে রাজী নই , বইটি উপন্যাসের চাইতে বেশী কিছু । লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার জাদুকরী লেখনী শক্তি দিয়ে ১৯৭১ সালকে নিয়ে এসেছেন আমাদের চোখের সামনে । শুধু কল্পনা প্রসূত নয় , বাস্তব অনেক চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন । বইয়ের শেষে রয়েছে বইটি লিখতে ব্যবহিত সাহায্যকারী বইগুলোর একটি তালিকা । তালিকাটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন , কতটা শ্রম এই বইয়ের জন্য দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ । গল্পের পরিধি অনেক বিস্তৃত , প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার উপন্যাস । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত বৃহৎ উপন্যাস আর আছে কি না আমার জানা নেই । এই উপন্যাসে আপনি অনেক পরিচিত মুখের দেখা পাবেন যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন , কালপ্রিট গুলার কুকর্ম এর বর্ণনা ও পাবেন । মোহমুগ্ধ হয়ে আপনি পড়তে থাকবেন স্বাধীনতার বিজয়গাঁথা , সেই সময়কার মানুষের জীবন সংগ্রাম , ক্ষোভ , হতাশা , আনন্দ , বিজয় । লেখক চরিত্র হিসেবে নিজেকে এবং তার পরিবার কেও বেছে নিয়েছিলেন এই উপন্যাসে । উপন্যাসের শুরু মার্চ মাসে গ্রামের মসজিদের একজন ইমাম মাওলানা ইরতাজউদ্দিন তার ছোট ভাইয়ের বাসায় এসেছেন ঢাকায় । তারপর আস্তে আস্তে আগাতে থাকবে উপন্যাস , আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে চরিত্র গুলোর সাথে । এরপর ২৫ মার্চের কালো রাত দিয়ে , উপন্যাসের মূল অংশ শুরু হবে । ঐ রাতে পাকিস্তানী জানোয়ারদের কুকীর্তি তুলে ধরেছেন তিনি । এরপরেরদিন লাশ সংগ্রহে নিয়োজিত কয়েকজন ডোম এবং সুইপারের সাক্ষাৎকার ও সংযোজিত রয়েছে বইটিতে । বইয়ের সবজায়গাতেই লেখক তথ্যসুত্র ব্যবহার করেছেন ফুটনোটে , এটি বইটির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য । বইয়ে এরপর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা । ঐ সময়কালীন মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ । প্রিয়জন হারিয়ে খুজে বেড়ানো , দেশান্তরিত হওয়া , দেশপ্রেম এই গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বইটিতে । বইটিতে চরিত্র হিসেবে এসেছেন আমাদের অনেক প্রিয় মুখ মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ । এছাড়াও নিন্দিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য ও আছে । রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাঁথা , আছে রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী । একটার পর একটা দৃশ্যপট তৈরি হতে থাকবে আপনার চোখের সামনে । বই শেষ হয় , যখন বাংলাদেশ স্বাধীন । কিন্তু স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি , অনেক প্রানের বিনিময়ে । ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের অনুভূতি গুলো তখন কেমন ছিল , লেখক তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন । এক কথায় অসাধারণ একটি বই "জোছনা ও জননীর গল্প"।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের উপর যত উপ্ন্যাস লেখা হয়েছে তার মধ্যে আমার প্রিয় সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদ এর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এটী কোন ইতিহাসের বই না কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ এটা এমন একটা উপন্যাস রচনা করেছেন যা ইতিহাসের আদলে গড়া উপন্যাস। যে উপন্যাস এর কাহিনী শুরু হয়েছে যুদ্ধ দিয়ে নয়। অন্যান্য উপন্যাসের শুরুর মতই।‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এর শুরুটা। নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর ছোটভাই শাহেদ, ভাইয়ের বউ আসমানী আর ভিয়ের মেয়ে রুনিকে দেখতে ঢাকা আসে। ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে।এই মাওলানা ইরতাজউদ্দিন, শাহেদ, আসমানী আর তাদের ঘিরে থাকা মানুষজনদের নিয়ে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। শাহেদ ঢাকায় চাকরি করে, তার স্ত্রী আসমানী, মেয়ে রুনি, বন্ধু নইমুল আর গৌরাঙ্গ।উপন্যাসের মুক্তিযুদ্ধের কথা আসবার আগেই আমরা আরও পরিচয় পেয়ে যাই পুলিশ অফিসার মোবারক সাহেব ও তার পরিবারের, কবি কলিমউল্লাহর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর চালানো পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার মর্মস্পর্শী বর্ণনা যা তিনি এমন ভাবে তিনি প্রকাশ করেছেন যে চোখের পানি চলে আসে নিজের অজান্তেই। উপন্যাসে বারবার উঠে এসেছে বীভৎস সেই ভয়াবহতাগুলোই। “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র” থেকে বেশ ক’জন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনার মাধ্যমে যুদ্ধের নয় মাসের ভয়াবহতাটা তুলে ধরেছেন নিপুণভাবেসবজায়গাতেই লেখক তথ্যসুত্র ব্যবহার করেছেন ফুটনোটে , এটি বইটির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। বইয়ে এরপর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা।উপন্যাসে উঠে এসেছে কালজয়ী কিছু ব্যক্তিত্বের কথাও। মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ।অনেক ত্যাগ এর মাধ্যমে আমরা স্বাধীন । ইরতাজউদ্দিন জুমার নামাজ পড়াতে অস্বীকার করে শহীদ হন; ফিরে আসতে পারেনি নাইমুল তার স্ত্রীর কাছে।গৌরাঙ্গ উম্মাদ হয়ে পড়ে।।দেশান্তরিত হয়েছে কেউ।কেউ হারিয়েছে প্রিয়জন কে।আজ আমরা স্বাধীন। কিন্তু স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি , অনেক প্রানের বিনিময়ে । ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের অনুভূতি গুলো তখন কেমন ছিল , লেখক তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন । এক কথায় অসাধারণ একটি বই "জোছনা ও জননীর গল্প"।