সারকথা ‘তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা, ও মন জাননা?’ এই গানের কথার মত মন জানুক আর না-ই জানুক আমাদের প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই বাস করে আরেক; অন্তর সত্ত্বা। এই সত্ত্বাই আমাদের ভিতরে বসে কলকাঠি নাড়ে। আমরা ক’জনইবা চিনি তারে? এজন্যই হয়তো কবি বলেছিলেন ‘আমার আপনার মাঝে আপন যেজন, খুঁজি তারে আপনাই’। অন্তরাত্মাকে খোঁজার বা বোঝার প্রয়াস সর্বকালীন। মপ্রেম-বিরহ, রাগ-অভিমান, অপূর্ণতা ও প্রার্থণায় বারবার নিজেকে খুঁজে পাওয়া-হারানোর এ হাহাকার সার্বজনীন। ব্যক্তিক মনস্তত্ত্বের টানাপোড়েনের সাথে জাতিসত্ত্বার ইতিহাসÑএকুশ, মুক্তিযুদ্ধ, ছিটমহল, রোহিঙ্গা কিংবা সমকালীন রাজনীতির স্পর্ষকাতর বিষয় উঠে এসেছে কবিতা-কথায়। অর্ন্তদৃষ্টির তীক্ষèতা, বহুমুখী বিচরণ ও সমাজ বিনির্মাণের তাড়ণা এ প্রজন্মের একজন কবিকে দাড় করিয়েছে ‘আপন আয়নায়’। ভূমিকা নাজমুল হুদার কোনো কবিতায় আমি আগে পড়ার সুযোগ পাইনি। ‘আপন আয়নায় গোপন মুখ’ একেবারে বই আকারে চূড়ান্ত করেই আমাকে তিনি দিয়েছেন। পড়ে আমার মনে হয়েছে তার কবিতা-চর্চা দীর্ঘদিনের এবং এর সঙ্গে যথেষ্ট ভালবাসা মিশে আছে। তিনি বেলাল চৌধুরী, মহাদেব সাহা, আবুল হাসানের কবিতা যে অভিনিবেশ সহযোগে পাঠ করেছেন, উদ্ধৃতিগুল্ইো তার প্রমাণ। তিনি মূলত লিরিক পছন্দ করেন, এ জায়গায় তার সাথে আমার মিল আছে। তবে তিনি ছন্দের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে নিজের মত করেই লিখেছেন কোনরকম দ্বিধা না করেই। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, আমাদের দুই কীর্তি একুশ ও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধ ুশেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশে শ্যামল নিসর্গ এবং এর মানুষ-সংগ্রামী, হতাশ, ক্ষুদ্ধু, কখনোবা বিদ্রোহী-যারা পরিবর্তন চায়, ভাল থাকতে চায়-এসব কথায় কবিতার বিষয়বস্ত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে তিনি আত্ববিশ্বাসী, দৃঢ় তার অবস্থান। এক্ষেত্রে ভিন্নমতের যে অবকাশ থাকতে পারে, তা তিনি মানেন না-তার চিন্তার সংহতি আমাকে প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট করেছে। শিথিল ছন্দের জন্য কখনো বা আন্তরিকতার জন্য মাঝে মাঝে সুর কেটেছে, লয় কখনো বেড়েছে কখনো কমেছে, এই যা। পা-লিপিটি পড়ে আমার মনে হয়েছে তার কবিতা লেখার প্রস্তুতি দীর্ঘদিনের। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত, অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ তিনি করেন-লেখেন সারাসরি কথা বলার ঢঙে। আমি অবশ্যই আশা করি তিনি ভবিষ্যতে আমাদের উত্তম কবিতা উপহার দেবেন। তাকে ‘আপন আয়নায় গোপন মুখ’ বইিটর জন্য অভিনন্দন জানাই। - আসাদ চৌধুরী
নাজমুল হুদার অনবদ্য গদ্যধারা ও কাব্যিক শব্দ প্রবাহ মন-মস্তিস্কে অনুরণন জাগায়। অনুপ্রেরণা জোগায়। যুক্তিবোধের জাগরণ ও আত্মিক উৎকর্ষ সাধনে সহায়ক তাঁর ক্যারিয়ার, মনস্তত্ব, বিজ্ঞান ও বিতর্ক বিষয়ক বইগুলো ইতোমধ্যে তুমুল পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। সম্প্রতি শুরু করেছেন নতুন ধারার নিউরো থ্রিলার। নাজমুল হুদার লেখালেখির শুরু বাল্যবেলায়। ছাত্রাবস্থায় অংশ নিয়েছেন জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে; যুক্ত ছিলেন বেতার অনুষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনে। দেশের শীর্ষ দৈনিক ও মাসিক সাময়িকীতে নিয়মিত লিখছেন। ফার্মেসিতে স্নাতক শেষে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে কর্মরত আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক সাহিত্যকর্মীদের সংগঠন ‘অধিকোষ’ এর সাধারণ সম্পাদক ও অনুপ্রেরণামূলক মাসিক পত্রিকা ‘স্বপ্নশীলন’ প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।