চেয়ারম্যানের খুব শখের মাছ। অনেক বড় বড় মাছ এই পুকুরটায়। বেশ পুরোনো মাছগুলো। কিছু কিছু মাছের বয়স প্রায় বারো-পনেরো বছর। গ্রামের সাধারণ লোকজনের এখানে প্রবেশ নিষেধ। তবে এই পুকুরের পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটা গোরস্তানের রাস্তা। তখন কেউ কেউ এসব মাছকে ভেসে থাকতে দেখে। এই মাছগুলোকে নাকি দেখার ভাগ্য সবার হয় না। কথিত আছে এগুলো গায়েবি মাছ। একেকটা প্রায় কুমিরের সমান লম্বা। অনেকে মনে করে এসব মাছ, মাছ না। মাছরূপী জ্বীন-ভূত!
কুদ্দুস তার বিশাল চেয়ারে দুই পা তুলে আয়েশ করে ডাবল জর্দা দেওয়া ডাবল পান চিবাচ্ছিলো। সাথে ছিলো পিতলের মধ্যে চমৎকার নক্সাকাটা জমিদারি হুক্কা। কথার এই পর্যায়ে কুদ্দুস চেয়ারম্যান হুক্কায় লম্বা টান দিয়ে সেই বিশাল চেয়ার থেকে তার এক পা নামিয়ে জলিলের মায়ের দিকে ঝুঁকে আসে। জলিলের মা মাটিতে বসা ছিলো, একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারলো না। কুদ্দুসের কড়া জর্দার গন্ধে তার খালি পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। ছেলে ফিরলে একসাথে দুপুরে খাবে। তাই সারাদিন না খাওয়া সে। অনেক কষ্টে তার গলার কাছে চলে আসা টক পানির বমিটাকে গিলে ফেললো।
: আপনার ইচ্ছা না হইলে খাটের নিচ থিকা বাইর হওয়ার দরকার নাই। আসলে আমারও কোন রকম ইচ্ছা নাই। আমি লোক খারাপ না। এইখানে আইজকাই পরতম আইছি। তাও নিজের ইচ্ছায় না। মতি নিয়া আইছে। আপনে বাইর হইয়া আসেন। আমি আপনেরে কিছুই করুম না।
এই প্রশ্ন শুনে কুদ্দুস হাসনার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। হায় রে মেয়ে মানুষ, বাড়িতে স্বামীর দুই দুইটা নাজায়েজ ছেলে সন্তান এসে উপস্থিত। আর সে আছে সেই সন্তানদের মাকে কুদ্দুস বিয়ে করে ছিলো কি না? সেই প্রশ্ন নিয়ে। যে কি না এখন মৃত। অবৈধ সম্পর্ক, বাচ্চা পয়দা করলেও মহিলাদের কোন সমস্যা নাই। কিন্তু জামাই বিয়ে করলেই যত সমস্যা। স্বামীর জায়েজ ভাগ কোন নারীই সহ্য করতে পারে না। তবে কি নাজায়েজ সম্পর্ক সহজেই মেনে নেয়? কি জানি হবে হয়তো।
আফরােজা খানম তন্দ্রা। জন্ম টাংগাইল জেলার পােষনা গ্রামে। শৈশব, কৈশাের কেটেছে টাংগাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায়। তিন ভাইবােনের মধ্যে সবার ছােট এবং একমাত্র মেয়ে। এসএসসি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং এইচএসসি কুমুদিনী সরকারি মহিলা কলেজ। অনার্স, মাস্টার্স ‘চাইল্ড ডেভলপমেন্ট এন্ড ফ্যামিলি রিলেশনশিপ’ বিভাগ, হােম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। মূলতঃ এই সাবজেক্টে পড়াশােনা করার দরুণ মানুষের মস্তিষ্কের চেতন, অচেতন এবং অবচেতন এই তিনটা ধাপ সম্পর্কে জানার ও শেখার সুযােগ। হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ফ্যামিলি কাউন্সিলিং-এর উপর কাজ করার সময় মানুষের অবচেতন মনের হাজারাে লুকায়িত বিষয়গুলাে সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। লেখাপড়া এবং কাজ, এই দু'য়ে মিলেই ‘অবচেতন' গল্পগুলাে সূত্রপাত। আরাে আগ্রহ রয়েছে রিডিং, ট্রাভেলিং, ফটোগ্রাফি এবং ভিন্নধর্মী রেসিপি শেয়ারিং-এ।। ২০১৯ এবং ২০২০ এ প্রকাশিত কয়েকটি গল্পসমগ্রে তার বেশ কয়েকটা ছােটগল্প প্রকাশিত এবং প্রশংসিত হয়েছে।